জোবায়ের মিলন

  ২২ মার্চ, ২০১৯

সুফিজমে আবিষ্ট কবির নতুন কবিতা

বইমেলা শুরু হওয়ার দু-এক মাস আগেই খোঁজ পেয়েছিলাম কবি ‘রাসেল রায়হান’ সুফি কবিতা লিখছেন এবং মেলায় তা বই আকারে প্রকাশ করবেন। হঠাৎ দুটি কবিতা দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকীতে পড়ার সুযোগ পেলাম। আগ্রহ বাড়ল। আমাদের কবিতায় সুফিজম কম দেখা যায় বিধায় এনিয়ে যেমন আলোচনা হয় না; তেমনি এনিয়ে লেখালেখিও চোখে পড়ে কম। মেলার শুরুতে বইটি আলোতে এলেও বারবার কপি শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে ও গিয়েও না পাওয়ার কারণে বইটি হাতে আসতে সময় লাগল। শেষে হাতে পেয়ে কবির বয়ানে ভূমিকাটি পড়েই দাঁড়িয়ে গেলাম।

আগের শোনা কথার সঙ্গে আংশিক মিল পেলাম ভূমিকাতেই। ‘ইহুদির গজল’ সুফিজমে আবিষ্ট হয়ে রচিত বা রচনার চেষ্টা। ভোরে হাত-মুখ ধুয়ে নাশতার পর বইটি নিয়ে বসলাম, একটানে শেষ করব বলে। ধীরে পড়ি বলে ৪ ঘণ্টায় ৯টি দীর্ঘ কবিতা পড়া শেষ করলাম। বুঝলাম না কিছুই। এত ডাক-নাম শুনলাম আর কী পড়লাম! এমন তো হতে পারে না! আবার শুরু থেকে পড়া শুরু করলাম। এবার শব্দ, বাক্যগুলো কিছুটা ঘোমটা খুলতে শুরু করল। কিছু জায়গার ভাব বুঝতে ইনবক্সে কথা বললাম কবির সঙ্গে। আমার অজ্ঞতায় জটখাওয়া মাথাটা খুলল। আবার শুরু করলাম পড়তে। বিকেল হয়ে রাত। সবাই ঘুমোচ্ছিল। আমি টেবিলে, ইহুদির গজলে, আমি যেন কোথায় প্রবেশ করছি; আমি যেন এক মিনার চূড়ায় উঠে যাচ্ছি

ধীরে ধীরে!

পড়া শেষ হলো। পরের দুই দিন ভাবনা থেকে সরল না ‘ইহুদির গজল’। কেন সরল না? প্রথমত. এমনভাবে, ভঙ্গিতে, ধরনে, কবিতার রচনায় কবিতা পড়িনি অনেক দিন। দ্বিতীয়ত. প্রবাদের মতো সাজিয়ে পয়ারে পয়ারে উদ্বৃত হয়েছে চিন্তিত মতবাদ। তৃতীয়ত. মনে হয়েছে প্রতিটি পয়ার একটি দর্শন। উক্তিগুলো বোধের ভেতর থেকে উঠে আসা আমারই ভাবনা যেন, যেন এই উক্তিগুলো আমার ভেতরেই ঘুরছিল কিন্তু বলতে পারিনি, দেখতে পারিনি। বইতে থাকা ৯টি কবিতা কবি সহজেই টানা গদ্যে রচনা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেনটি সম্পূর্ণ ইচ্ছা করেই, সচেতনভাবে। প্রতিটি চরণকে তিনি ভেঙে ফেলেছেন অর্থগত দিকে লক্ষ করে। তিনি চেয়েছেন, একটি চরণে যতটি পর্ব আছে, প্রতিটি পর্ব যেন ধীরে পাঠ করতে হয়; আর পাঠের ধীরতার মধ্য দিয়ে যেন পর্বার্থটি ছবির মতো ভাসে, পাঠক যেন তা দেখতে পান। আমিও পাঠ করতে গিয়ে অত্যন্ত ধীরগতিতে পাঠ না করা পর্যন্ত ডুব দিতে পারছিলাম না কবির চেষ্টার ভেতর। তিনবার পড়ার পর চতুর্থবারে এসে খুঁজে পেলাম কবিকে, তার চেষ্টাকে। কবি ‘ইহুদির গজল’-এ সুফিবাদকে আপন আদরে ধরতে চেয়েছেন যতেœর সঙ্গে। ভূমিকায় যেমন তিনি সহজ স্বীকারোক্তি দিয়েছেন পাঠেও তেমন সত্যতা পাওয়া যায়। পুরোপুরি সুফিজমকে তিনি হাতের মুঠোর পুরতে পারেননি বটে, তবে তার আশপাশ দিয়ে ঘুরেছেন দর্শনে ডুব দিয়ে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close