লতিফ আদনান
ঈর্ষণীয় ছোট কাগজ
রাজধানী কেন্দ্রীক প্রকাশনার বাইরে কিছু প্রকাশনা থাকে, যা ঈর্ষায় প্রলুব্ধ। এমন একটি ছোটকাগজের নাম ‘অপরাজিত’। সম্পাদক নাহিদ হাসান রবিনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল এই অপরাজিত। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সংখ্যাটির ১৭তম সংখ্যা প্রকাশ পেয়েছে। সংখ্যাটির নান্দনিকতা বোদ্ধা মহলে নজর কাড়ার মতো। গদ্য, কবিতা ও গল্প দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের সংখ্যাটি। অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটেছে নবীন ও প্রবীণের।
গদ্য অংশে লিখেছেন- মাহমুদ কামাল, মোহাম্মদ আবদুল মাননান, শিবলী মোকতাদির, অলাত এহ্সান, আনোয়ার কামাল ও পীযূষ কুমার ভট্টাচার্য্য। মাহমুদ কামালের তথ্যবহুল প্রবন্ধটি প্রকৃত সাহিত্যমোদিদের তৃষ্ণা মেটাবে বলে আমার বিশ্বাস। এখানে পরিবারকেন্দ্রীক সাহিত্যচর্চার প্রবণতা সুস্পষ্টভাবে আলোচিত হয়েছে। শিবলী মোকতাদিরের গদ্য তো কবিতার মতো সুখপাঠ্য কাব্যিকতায় ভরা। বিদেশি সাহিত্যের ভা-ার যারা সমৃদ্ধ করেছেন, তাদের একজন চিনুয়া আচেব। তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে দীর্ঘ উপস্থাপন করেছেন অলাত এহ্সান। তার লেখাটি পত্রিকাটিকে সমৃদ্ধ করেছে।
কবিতা অংশে লিখেছেন- রোকেয়া ইসলাম, ইসমত শিল্পী, ইসলাম রফিক, মৃণাল কান্তি ঢালী, মামুন রশীদ, এস এম মামুন জাহান পল্লব, অহনা নাসরিন, সাদমান জিসান, মনিরা ইয়াছমিন ও হোসনেয়ারা নাসরিন দোলন। রোকেয়া ইসলামের কবিতায় প্রেম ও প্রকৃতি অপূর্বভাবে ধরা পড়েছে। ‘শিশিরের কাছে চাইলাম উষ্ণতা/একরাশ হিমেল পরশ দিলো দুহাত ভরে।’ একরাশ হতাশা ফুটে উঠেছে এস এম মামুন জাহান পল্লবের কবিতায়। ‘এই শহরে বুঝি কেউ থাকে না/চারিদিকে সুনসান নীরবতা মৃত্যুপুরীর নিস্তব্ধতা কেন।’ অন্য কবিতাগুলিও সমৃদ্ধ কবিতা বলেই মনে হয়েছে।
গল্প অংশে লিখেছেন- মনি হায়দার, সমীর আহমেদ, লতিফ জোয়ার্দার, নূর কামরুন নাহার, মোখলেছ মুকুল, মিজানুর রহমান বেলাল, লতিফ আদনান, প্রত্যয় হামিদ ও নাহিদ হাসান রবিন। তাদের লেখায় সমকালীন প্রেক্ষাপট চিত্রিত হয়েছে সুনিপুণভাবে। সমাজ বাস্তবতার একটি চিত্র চমৎকারভাবে উঠে এসেছে মনি হায়দারের গল্পে। নাহিদ হাসান রবিনের গল্পে উঠে এসেছে শৈশব ও কৈশোরের স্বপ্ন বাস্তবতা, প্রেম ও প্রকৃতি। তার গল্পে সম্পর্কের ঘনিষ্টতায় আঁধার জমাট বাঁধতে পারে নাই। অন্য গল্পগুলোও পাঠক হৃদয়ে নাড়া দেওয়ার মতো।
নান্দনিক প্রচ্ছদ করেছেন সম্পাদক নিজেই। শিল্পের ছোঁয়ালাগা সংখ্যাটি হাতে নিয়েই মন ভরে যায়। ১১২ পৃষ্ঠার এই সংখ্যাটির দাম রাখা হয়েছে ১০০ টাকা।
"