হাসান সাইদুল

  ২৫ আগস্ট, ২০১৭

শরণার্থী থেকে নায়করাজ

বিবিসি বাংলার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘এই শহরে আমি রিফিউজি হয়ে এসেছিলাম। স্ট্রাগল করেছি। না খেয়ে থেকেছি।’

‘আমি চলচ্চিত্রে এলাম ১৯৬৪ সালে। তখন নিজের সঙ্গে নিজেই যুদ্ধ করছি। এরপর ১৯৬৬ সালে নায়ক হলাম। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ হয়নি। অনেক পরিশ্রম করেছি। আমার মনে আছে, আমি সকাল ৯টার সময় এফডিসিতে আসতাম, পরদিন ভোর ৫টার সময় শুটিং শেষ করে বাড়ি যেতাম। আবার ৯টার মধ্যে এফডিসিতে চলে আসতাম। আর খাওয়া-ঘুম সব কিছু এফডিসিতেই। সে সময় ফার্মগেটে একটি মিষ্টির দোকান ছিল। সেখানে থেকে ডালপুরি আর আলু দিয়ে তৈরি সবজি খেয়ে সবাই শুটিংয়ে যেতাম।’

নায়করাজ তার সাক্ষাৎকারে আরো বলেন, ‘এখন কী দেখছি? ভাঙা-জ্বালানো-পোড়ানো আর গন্ধ বেরোচ্ছে এমন একটা ফিল্ম ইন্ড্রাস্টি। আমার খুব দুঃখ লাগে। কষ্ট হয়।’

একজন শরণার্থীর কথাই বলছি

যে মানুষটি একাধারে একজন অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্রে ভূমিকা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বিশাল ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি কিশোর বয়সে কলকাতার মঞ্চনাটকে জড়িয় পড়েন। এরপর ১৯৬৪ সালে দাঙ্গার উত্তাল সময়ে নতুন জীবন গড়তে সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থায় পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসেন। কঠোর পরিশ্রম আর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গে সংগ্রাম করে চলচ্চিত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন, অর্জন করেন ‘নায়করাজ’ উপাধি। টেলিভিশনে ঘরোয়া নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে এ দেশে তার অভিনয় জীবন শুরু। তারপর আবদুল জব্বার খানের সহযোগিতায় তিনি একবাল ফিল্মে কাজ করার সুযোগ পান। কাজ শুরু করেন ‘উজালা’ ছবিতে পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী হিসেবে।

তিনি ছিলেন ফুটবলপ্রেমী

রাজ্জাক তখন কলকাতায়। সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। পড়াশোনা করতেন খানপুর হাইস্কুলে। স্কুলে ফুটবলের নেশা পেয়ে বসেছিল তাকে। পড়ার বাইরে তাকে মাঠেই পাওয়া যেত বেশির ভাগ সময়। ওই সময় স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নাটকে আধিপত্য ছিল মেয়েদের। মেয়েরাই অভিনয় করত। শিক্ষক রথীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী নতুন সিদ্ধান্ত নিলেন। ঠিক করলেন, ছেলেদের দিয়ে নাটক করাবেন। এর জন্য তিনি বেছে নিলেন নারী চরিত্রবর্জিত নাটক ‘বিদ্রোহী’। চিন্তা ছিল নায়ক হবেন কে? রাজ্জাক তখন বুঁদ হয়ে আছেন ফুটবল মাঠে। শিক্ষকের নির্দেশ, ‘ওকে ধরে নিয়ে আয়!’ এরপর নামিয়ে দেওয়া হলো নাটকে।

পেছনে আর তাকাতে হয়নি

সালাউদ্দিন প্রডাকশন্সের ‘তেরো নাম্বার ফেকু ওস্তাকার লেন’ চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক। পরবর্তীতে কার বউ, ডাক বাবু, আখেরি স্টেশনসহ আরো বেশ কয়েকটি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। পরে ‘বেহুলা’ ছবিতে সুচন্দার বিপরীতে নায়ক হিসেবে হাজির হন এবং সবার মন জয় করেন। ‘কি যে করি’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি আজীবন সম্মাননা অর্জন করেছেন। তিনি চারবার জাতীয় সম্মাননা লাভ করেন। চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি হয়েছেন, এটা যে কারো কাছেই গল্প বলে মনে হতে পারে। রাজ্জাকের জন্ম কলকাতার সিনেমাপাড়া টালিগঞ্জে। অর্থাৎ জন্মের পর থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে সখ্য। মঞ্চের সঙ্গে জড়িত থাকলেও স্বপ্ন ছিল সিনেমাকে ঘিরে। টালিগঞ্জের সিনেমাশিল্পে তখন ছবি বিশ্বাস, উত্তম কুমার, সৌমিত্র, বিশ্বজিতদের যুগ। হালকা-পাতলা সাধারণ রাজুর অভিনয়ে সুযোগ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। এর মধ্যে শুরু হলো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এক সময় কলকাতায় থাকাটাই মুশকিল হয়ে পড়ে। তখন এক সুহৃদ রাজ্জাককে পরামর্শ দিলেন ঢাকায় চলে আসতে। বললেন, ঢাকার চলচ্চিত্র নতুন করে যাত্রা শুরু করেছে। সেখানে গেলে হয়তো কিছু একটা হবে। ‘উজালা’ ছবির মধ্য দিয়ে শুরু হলো রাজ্জাকের ঢাকার চলচ্চিত্র জীবন। সহকারী হিসেবে কয়েকটি ছবিতে কাজ করার পর হঠাৎ এক দিন তিনি নায়ক হওয়ার সুযোগ পান। লোক কাহিনি নিয়ে ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন জহির রায়হান। তিনি রাজ্জাককে বললেন, আপনিই আমার ছবির নায়ক। ওই সময় রাজ্জাকের চেহারার মধ্যে কলকাতার বিশ্বজিতের ছায়া খুঁজে পাওয়া যেত। জহির রায়হানের সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় অসাধারণ লক্ষ্মীন্দর হয়ে দর্শকেদের সামনে উপস্থিত হলেন রাজ্জাক। তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন সুচন্দা। বেহুলা ছবিটি ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায়। এই ছবির মধ্যে দিয়েই চলচ্চিত্রে পূর্ণাঙ্গ নায়ক হিসেবে রাজ্জাকের সূচনা। ধীরে ধীরে তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অপরিহার্য হয়ে ওঠেন।

প্রতিযোগিতায় নায়করাজ

এ দেশের সিনেমা হলগুলোতে তখন পাক-ভারতীয় ছবির দাপট। লাহোরের মোহাম্মদ আলী, জেবা, সুধীর, শামীম আরা, ওয়াহিদ মুরাদ। কলকাতার ছবি বিশ্বাস, উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন, বিশ্বজিৎ, সৌমিত্র। মুম্বাইয়ের রাজ কাপুর, নার্গিস, দিলীপ কুমার এদের ছবির সঙ্গে পালা দিয়ে চলতে শুরু করল ঢাকার নির্মাতাদের নির্মিত ছবি। রহমান, শবনম, খলিল, ফতেহ লোহানী, খান আতা, সুমিতা দেবী, আনোয়ার হোসেন, সুচন্দা তাদের সঙ্গে এবার যোগ হলো আরেকটি নাম তিনি হলেন রাজ্জাক। স্বাধীনতার আগে এখানে নির্মিত অধিকাংশ ছবির নায়ক ছিলেন রাজ্জাক। দুই ভাই, আবির্ভাব, এতটুকু আশা, নীল আকাশের নীচে, যে আগুনে পুড়ি, দর্পচূর্ণ, যোগ বিয়োগ, ছদ্মবেশী, জীবন থেকে নেয়া, মধু মিলন ইত্যাদি ছবির সাফল্যে রাজ্জাক হয়ে ওঠেন চলচ্চিত্রের অপরিহার্য নায়ক। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর ভারতীয় ছবি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পাকিস্তানি ছবির প্রদর্শন যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন বাংলাদেশ চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নেওয়ার কঠিন দায়িত্ব পালন করেন রাজ্জাক। সড়ক দুর্ঘটনায় রহমান পা হারালে চলচ্চিত্রে রোমান্টিক নায়কের শূন্যতা দেখা দেয়। তখন রাজ্জাক একাই তা সামাল দেন। খুব দক্ষতা এবং নৈপুণ্যতার সঙ্গে রাজ্জাক একের পর এক ছবিতে অভিনয় করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি রাজ্জাক অভিনিত ‘মানুষের মন’। ছবিটি ব্যবসাসফল হওয়ার কারণে নতুনভাবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জেগে ওঠে। ছবিটি পরিচালনা করেন মোস্তফা মাহমুদ। এই ছবির মধ্য দিয়ে শুরু হলো চলচ্চিত্রে নায়ক রাজ্জাকের নতুন যুগ। তার পর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রথম ছবি চাষী নজরুল ইসলামের ‘ওরা ১১ জন’, এসএম শফির ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’, বাবুল চৌধুরীর ‘প্রতিশোধ’ এবং কাজী জহিরের ‘অবুঝ মন’ ছবিতে অভিনয় করে রাজ্জাক হয়ে যান বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের আইকন।

অ্যাকশনের সূচনা

১৯৭৩ সালে জহিরুল হকের ‘রংবাজ’ ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করে রাজ্জাক বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নতুন ধারা প্রবর্তন করেন। তিনি সূচনা করেন চলচ্চিত্রের আধুনিক অ্যাকশন যুগেরও। রংবাজ দিয়েই রাজ্জাক তার অভিনয় জীবনে বৈচিত্র্য নিয়ে আসেন। রাজ্জাক বলেন, রংবাজ ছবির সাফল্যের পর আমার মনে হলো, দর্শকদের একঘেয়েমি থেকে মুক্ত রাখতে হলে সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে হবে। প্রয়োজনে দর্শকদের জন্য নিজের অর্থে ছবি নির্মাণ করতে হবে। রাজ্জাক আরো জানান, প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার আগে আমি আরো কিছু বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছি। যেমন; বেঈমান, অনির্বাণ, স্লোগান, ঝড়ের পাখি, আলোর মিছিল, এখানে আকাশ নীল, অতিথি, অবাক পৃথিবী, উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশের ছবিতে চুম্বন

বাংলাদেশের ছবিতে চুম্বন দৃশ্যের সূচনা হয় রাজ্জাক-ববিতার ‘অনন্ত প্রেম’ ছবির মাধ্যমে। ‘অনন্ত প্রেম’ মুক্তি পায় ১৯৭৭ সালের মার্চ মাসে। সময়ের তুলনায় ছবিটি ছিল দারুণ সাহসী। ছবির শেষ দৃশ্যে নায়ক-নায়িকার গভীর চুম্বনের দৃশ্য ছিল, যা সেই সময়ে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিল। যদিও তা ছবি থেকে ফেলে দেওয়া হয়। দৃশ্যটি রেখে দেওয়া হলে, সেটিই হতো বাংলা সিনেমার প্রথম চুম্বন দৃশ্য। চিত্রালীর দাবি অনুযায়ী, এর আগে বাংলা সিনেমায় চুমুর দৃশ্য এলেও, সেগুলো ছিল মূলত চুম্বনের ইঙ্গিতবাহী, সরাসরি চুম্বন নয়। আবার বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালের সিনেমা ‘কাঁচের স্বর্গ’তেও পরিচালক ই আর খান একটি চুমুর দৃশ্য রেখেছিলেন, যা পরে বাদ দেওয়া হয়। “১৯৭৩ সালে পরিচালক ই আর খান ‘কাঁচের স্বর্গ’ ছবিতে লোকান্তরিত শিল্পী রাজু আহমেদ এবং শিউলি আহমেদের একটি চুম্বন দৃশ্য চিত্রায়িত করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দৃশ্যটি ছবিতে থাকেনি। তবে ‘চুমু-চুমু ভাব’ সম্বলিত কিছু ছবি অবশ্য ঢাকায় মুক্তি পেয়েছে।”

পুরস্কার ও সম্মাননা

সেরা অভিনয়ের জন্য এ কিংবদন্তি নায়ক বেশ কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৭৬, ১৯৭৮, ১৯৮২, ১৯৮৪, ১৯৮৮ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার। এ ছাড়া তাকে ২০১৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। পাশাপাশি সেরা অভিনয়ের জন্য নায়করাজকে ২০০৩ ইন্দো-বাংলা কলা মিউজিক পুরস্কার, খান আতাউর রহমান আজীবন সম্মাননা, ২০০৯ বাচসাস আজীবন সম্মাননা (চলচ্চিত্র), ২০১২ ইফাদ ফিল্ম ক্লাব আজীবন সম্মাননা, একই বছর ব্যাবিসাস আজীবন সম্মাননা ও ২০১৪ মেরিল প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। এ ছাড়া নায়ক রাজের আরেকটি সেরাপ্রাপ্তি ছিল ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হওয়া।

অভিনেতা হিসেবে নিজেকে অন্য সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজ্জাককে তেমন কোনো কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়নি। রাজ্জাক বরাবরই মানুষকে যথাযোগ্য সম্মান আর ভালোবাসা দিয়েছেন। প্রযোজক-পরিচালকদের সম্মানে পার্টির আয়োজন করেছেন বছরের পর বছর। রাজ্জাকের স্ত্রী লক্ষ্মী রাত জেগে স্বামীর বন্ধুদের পছন্দমতো রান্নাবান্না করে খাইয়েছেন। নির্মাতারাই তাকে নিয়েছেন বাদী থেকে বেগম, সমাধি, কি যে করি, সেতু, আগুন-এর মতো জনপ্রিয় ছবির সেরা চরিত্রে।

১৯৭৮ সালে রাজ্জাক যখন খুবই জনপ্রিয় এক অভিনেতা। তখনও তিনি আজিজুর রহমানের অশিক্ষিত ছবিতে গ্রামের পাহারাদার চরিত্রে অভিনয় করেছেন, লুঙ্গি আর শার্ট পরে। ছবিটির শেষ দিকে মাস্টার সুমনের মৃত্যুর পর পুলিশের খাতায় রাজ্জাকের স্বাক্ষর করার দৃশ্য আজও মনে পরলে চোখে পানি চলে আসে। এর দুই বছর পর একই পরিচালকের ছুটির ঘণ্টা ছবিতে স্কুলের দফতরির চরিত্রে রাজ্জাকের অসাধারণ অভিনয় এত সহজে কি মন থেকে মুছে ফেলা সম্ভব? তিনি খুব কৌশলী অভিনেতা এবং নির্মাতা ছিলেন। কখন কাকে দিয়ে কোন চরিত্রে অভিনয় করাতে হবে বা কাকে দিয়ে কোন কাজ করাতে হবে, তা তিনি বুঝতেন। ফলে চলচ্চিত্রের খারাপ সময়েও ‘বাবা কেন চাকর’ ছবির মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রের চেহারা পালটিয়ে দেন। ছবিটি দ্বিতীয়বার কলকাতায়

নির্মাণ করেও সাফল্য অর্জন করেন। রাজ্জাক বলতেন, ‘আমার কোনো অপ্রাপ্তি নেই। সব কিছুই আল্লাহ

আমাকে দিয়েছেন।’

রাজ্জাক থেকে যে মানুষটি যাদের অবদানে নায়করাজ রাজ্জাকে পরিণত হয়েছেন, তাদের সম্পর্কে রাজ্জাক নিজেই বলেন, আমার আজকের এই অবস্থানের পিছনে যাদের অবদান রয়েছে তাদের মধ্য আছেন আবদুল জব্বার খান, জহির রায়হান, আজহারুল আনোয়ার, নজরুল ইসলাম, আবদুল লতিফ বাচ্চু, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুভাষ দত্ত, আজিজুর রহমান, আমজাদ হোসেন, চাষী নজরুল ইসলাম এবং বন্ধু মজিবুর রহমান চৌধুরী মজনু।

রাজ্জাক বাংলা উর্দু মিলিয়ে এই পর্যন্ত প্রায় ৫০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি শুধু নায়ক হিসেবে নয়। এক জন পরিচালক হিসেবেও সফল। চলচ্চিত্রের বাইরে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করেছেন। তার প্রযোজনা সংস্থার নাম রাজলক্ষ্মী প্রডাকশন। রাজ্জাক বাবা আকবর হোসেন ও মা মিরারুন্নেসার কনিষ্ঠ সন্তান। রাজ্জাকের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি টালিগঞ্জের নাগতলাপাড়ার ৮ নম্বর বাড়িতে। তখন কে জানত, জাপানি বোমারু বিমানের বোমা আক্রমণের আশঙ্কার মুখে জন্ম নেওয়া ছেলেটি হবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে প্রবাদপ্রতিম পুরুষ? এটা হয়তো রাজ্জাক নিজেও জানতেন না। আর জানলে হয়তো প্রথম জীবনে ফুটবল খেলাকে আপন করে না নিয়ে চলচ্চিত্রকে আপন করে নিতেন। যদিও খেলার মাঠই তাকে অভিনয় করার পথ দেখিয়েছে। তিনি ছিলেন দক্ষিণ টালিগঞ্জ ফুটবল দলের এক নম্বর গোলকিপার। ভাড়ায় টালিগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় খেলতে যেতেন। এন্ট্রান্স (বর্তমান এসএসসি) পরীক্ষায় আগে তিনি একবার যাদবপুর দলের সঙ্গে খেলার সময় প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকারের আঘাতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তারপর চার-পাঁচ ঘণ্টা পর তার জ্ঞান ফেরে। এরপর তিনি অনেকটা রাগ করে ফুটবল ছেড়ে দেন।

নায়করাজ রাজ্জাকের মৃত্যুতে সোহেল রানা বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির যে অবস্থা, এখান থেকে উত্তরণের জন্য মুষ্টিমেয় যে কয়েকজন চেষ্টা করছিলেন, তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তার মতো শিল্পী আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এর আগে কখনো আসেনি এবং তার অভাব দ্রুত পূরণ হবে বলেও আমার মনে হয় না। আমাদের সবাইকে একদিন চলে যেতে হবেÑএটি সত্য। কিন্তু এ রকম হঠাৎ করে আমি হতবিহ্বল হয়ে গেছি। আমরা তিন-চারটি ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছি। তিনি আমার চেয়ে কিছু সিনিয়র ছিলেন। তার ধ্যান-জ্ঞান ছিল চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্র নিয়েই তিনি বাঁচতেন। শিল্পী হিসেবে তিনি যেমন অসাধারণ, মানুষ হিসেবেও তেমনি বড় মাপের ছিলেন। নায়িকা ববিতা বলেন, কী বলব তার সম্পর্কে? রাজ্জাক ভাই আর আমি চলচ্চিত্রে এসেছিলাম জহির রায়হানের হাত ধরে। রাজ্জাক ভাই ছিলেন দেশীয় চলচ্চিত্রের ইনস্টিটিউট। রাজ্জাক ভাইয়ের পরিচালনা ও নিজের প্রযোজনার অধিকাংশ ছবির নায়িকা ছিলাম আমি। তিনি আমাকে এতটাই পছন্দ করতেন। রাজ্জাক ভাই আমার জীবনে গাইড ছিলেন। কিছুদিন আগে আমি তাকে ফোন করেছিলাম। ভাবিকে নিয়ে আমার বাসায় আসার জন্য দাওয়াত দিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন থাইল্যান্ড থেকে ফিরে আমার বাসায় আসবেন। আমি তাকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবো বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আজ সব শেষ হয়ে গেল।

গত সোমবার সন্ধ্যায় ৬টা ১২ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বুধবার সকাল ১০টায় বনানী গোরস্তানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। সেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist