রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
শিক্ষার্থীরাই খেয়ানৌকার মাঝি
রাঙ্গাবালীতে সেতুহীন জনদুর্ভোগ
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টা। রসুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শিফটের পাঠ শেষে বাড়ি ফেরার পথে শিক্ষার্থীরা। কিছুক্ষণ হেঁটে খেয়াঘাটে অবস্থান নিলো। রশিতে বাঁধা খেয়ার নৌকাটি খালের ওপারে। এপারে থাকা কয়েক শিক্ষার্থী হাঁটুপানিতে নেমে রশি টেনে খেয়াটি এপারে নিয়ে এলো। এরপর এক এক করে উঠে পড়লো অর্ধেকের বেশি। নৌকায় জায়গা সংকুলান না হওয়ায় দাঁড়িয়ে রইলো বাকিরা। খেয়ায় থাকা এক শিক্ষার্থী রশি টেনে ওপারে ছুটলো। পরে পর্যায়ক্রমে বাকি সব শিক্ষার্থী খেয়া নৌকা পার হয়ে ওপারে পৌঁছে। এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় দুইশ’ ছাত্রছাত্রী প্রতিদিন নৌকার ওপর নির্ভর করে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হয়।
ওই ইউনিয়নের রসুলবাড়িয়া ও মাদারবুনিয়া এলাকার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে মাদারবুনিয়া নামের একটি খাল। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় দু’পাড়ের মানুষই নৌকায় পারাপার হয়। তবে নৌকা চালানোর জন্য নির্ধারিত মাঝি নেই। দু’পাড়ে নৌকার সঙ্গে বাঁধা রশি টেনে আসা-যাওয়া করে স্কুলশিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। এ সময় রশি টানতে গিয়ে পানিতেও পড়ে যায় অনেক শিক্ষার্থী। প্রায়ই ঘটছে এ ধরনের দুর্ঘটনা।
জানা গেছে, দুই এলাকায় প্রায় দুই-তিন হাজার মানুষের বসবাস। তাদের মধ্যে স্কুলপড়–য়া শিক্ষার্থী রয়েছে ২০০। এলাকাবাসীর উদ্যোগে মাদারবুনিয়া খালে পারাপারের জন্য নৌকা দেওয়া হয়। ওই নৌকায় প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে ওইসব শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। মাদারবুনিয়া গ্রামের হোসেন খাঁর ছেলে রসুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মিতু আক্তার বলে, ‘স্কুলের সব ছাত্রছাত্রীকে বাধ্য হয়ে নৌকা চালাতে হয়। প্রায়ই এই নৌকা তলাইয়া যায়। কিছুদিন আগে নৌকা ডুইব্বা আমি পানিতে পইড়া গ্যাছিলাম। লোকজন আইয়া আমারে বাঁচাইছে।’
মিতুর ছোট ভাই ওই বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র জিসান বলে, ‘ডিঙি (নৌকা) চালাইয়া স্কুলে আই-যাই। রশি টাইন্না ডিঙি চালাই। একছের ডড় (ভয়) করে।’ ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু জাফর বলেন, ‘ওইসব এলাকা দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০০ ছাত্রছাত্রী নৌকায় স্কুলে আস-যাওয়া করে। মাঝি না থাকায় ওদেরই নৌকা চালাতে হয়। প্রায়ই শুনি, কেউ না কেউ পানিতে পড়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ওই খালে একটি সেতু নির্মাণ করা জরুরি।’
রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান মামুন বলেন, রসুলবাড়িয়া ও মাদারবুনিয়ার মাঝখানের খালে একটি ব্রিজ (সেতু) নির্মাণের দীর্ঘদিনের দাবি এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের। এ বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) তপন কুমার ঘোষ বলেন, আমরা ওখানে ব্রিজ করার জন্য খুব দ্রুত প্রস্তাবনা পাঠাব।
"