দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর

  ২১ জানুয়ারি, ২০২০

মেহেরপুরে ভৈরব নদের মাটি যাচ্ছে ভাটায়

মেহেরপুর ভৈরব নদ পাড়ের মাটি পাল্লা দিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করছেন প্রভাবশালীরা। প্রশাসনি পর্যায় থেকে অভিযান পরিচালনা করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় মাটি বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা। এতে ব্যাহত হচ্ছে নদপাড়ের আবাদি জমিগুলোতে চাষাবাদ। এ নিয়ে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও প্রভাবশালীদের কারণে কথা বলতে পারছেন না। জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা মাটি ও বালু মহাল রক্ষা আইন লঙ্ঘণ করে নদপাড়ের মাটি কাটা হচ্ছে।

সরেজমিনে গতকাল সোমবার মেহেরপুরের মুজিবনগর অংশে বেশ কয়েকটি স্থানে দেখা যায়, নদপাড়ের সমতল আবাদি জমির উপর থেকেও মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। এসব মাটি ট্রাক্টরের ট্রলি ভরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটাগুলোতে। বিভিন্ন ইটভাটার চাহিদা পুরণ ও বাড়ি নির্মাণের জন্য এসব মাটি বিক্রি করছেন মাটি কাটা ব্যবসার সাথে জড়িতরা।

২০১১ সালের ১৭ মার্চ মুজিবনগর দিবসের অনুষ্ঠানে ভৈরব নদ খননের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই অনুযায়ী নদের মেহেরপুরের অংশে ২৯ কিলোমিটার খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে এ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৭০ কোটি ৬৫ লাখ ৫১ হাজার ২১৬ টাকা। নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লি. খননের কাজ সম্পন্ন করে। ২০১৫ সালের ২৩ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার রসিকপুর থেকে শুরু হয়ে ২০১৭ সালের জুনে গাংনী উপজেলার কুতুবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত খনন শেষ হয়।

নদীর দুইপাড় ৬২ থেকে ৭০ মিটার চওড়া, গভীরতা ৪ মিটার ও ৫০ মিটার তলদেশের হিসাবে খনন করা হয়েছে নদটি। নদ খননের পর ফিরে পায় পানি প্রবাহ। কিন্তু আইনের প্রয়োগ না থাকা এবং প্রভাবশালীদের মাটি কাটা ছাড়াও নদে পাট পচানোর কারলে ফের নদটি নাব্য হারাচ্ছে।

মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর গ্রামের পাশে ভৈরব নদের কাটাইখালে দেখা যায়, অবৈধভাবে মাটি কেটে একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের এসআরবি ইটভাটায় আনা হচ্ছে। প্রত্যেক দিন ২০ থেকে ৩০ ট্রলি মাটি কাটা হচ্ছে।

নদপাড়ের মহাজনপুর গ্রামের তিনফসলী জমির মালিক ইমরুল হোসেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিনিধিনের সংবাদকে তিনি বলেন, ‘আমার পাশের জমির মাটি কেটে নীচু করা হচ্ছে। ফলে নিশ্চিত আগামী বর্ষা মৌসুমে আমার জমিতে ভাঙ্গন ধরবে। আশেপাশের ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। কিন্তু প্রভাবশালীরা মাটি কাটার সাথে জড়িত তাই প্রতিবাদ করতে পারছি না।’ কাটাইখালের অনতি দুরে দেখা মেলে ভৈরবনদপাড়ের মাটি কাটা হচ্ছে। মাটি কাটার দৃশ্য ধারণ করতে গেলে শ্রমিকরা দৃশ্য ধারণ করতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

এসআরবি ইটভাটা মালিক আব্দুল রাজ্জাকের ছেলে রাজু মিয়া বলেন, আমরা কারো জমি বা নদের পাড় থেকে মাটি কাটছি না। মাটি ব্যবসায়ী বাবুপুর গ্রামের লাল্টু মিয়া আমাদের ইটভাটায় মাটি বিক্রি করে। সে কোন জায়গা থেকে মাটি নিয়ে আসছে সেটা তার বিষয়।

মাটি কেটে বিক্রি করা লাল্টু মিয়ার মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে মাটি কাটা শ্রমিকরা জানায় তারা লাল্টুর শ্রমিক। তার নির্দেশেই মাটি কাটা হচ্ছে।

এ বিষয়ে মুজিবনগর ইউএনও উসমান গনির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, মাটি কাটার অভিযোগ পেয়ে রোববার পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এ সময় মাটি কাটার সাথে জড়িতরা পালিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close