পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি

  ২২ নভেম্বর, ২০১৯

বরগুনার পাথরঘাটা

শুঁটকিপল্লীতে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান

বরগুনার উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটার বিভিন্ন চরে প্রতি বছরের মতো শুরু হয়েছে শুটকি তৈরির কাজ। চলতে মৌসুমে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার শ্রমিকরা। শুঁটকি তৈরি ঘিরে উপকূলীয় এলাকার প্রায় দশ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়।

বরগুনার লালদিয়া, আশারচর, সোনাকাটা, জয়ালভাঙ্গা চরের, শুঁটকি পল্লীতে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ৬ মাস ধরে চলে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ। শুঁটকি কেন্দ্র করে উপকূলীয় হাজার হাজার জেলে ও মৎস্যজীবীদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে এসব চরগুলো।

সরেজমিনে দেখা যায়, গভীর সমুদ্র থেকে জেলেরা মাছ নিয়ে দেশের বৃহত্তম মৎস অবতরন কেন্দ্র পাথরঘাটা (বিএফডিসি) ঘাটে ভিড়ছেন। ব্যবসায়ীরা সেই মাছ কিনে পল্লীতে নিয়ে যাচ্ছেন। এরপর ধুয়ে-মুছে কাটা-বাছার পর শুঁটকির জন্য বাঁশের তৈরি মাচায় রোদে শুকাচ্ছেন। কেউবা বাছাই করছেন, আবার কেউ শুকানো মাছ বস্তায় ভরতে ব্যস্ত।

এদিকে প্রচলিত পদ্ধতিতে মাছ শুকানো নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও সারা দেশের পাথরঘাটার শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এখানে উৎপাদিত শুঁটকি দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি হচ্ছে। এ সময় প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছের শুঁটকি দেখা যায়। আহরিত মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লইট্যা, ছুরি, ফাইস্যা, রইস্যা, পোয়া, কোরাল, মাইট্যা, রূপচাঁদা, ইলিশ, লাক্ষা, চিংড়ি, রাঙ্গাচকি, হাঙ্গর, রিটা, ফুটকা, কাঁকড়া, লবষ্টার, সামুদ্রিক শসা, হাঙ্গরের বাচ্চা ও বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি ছুরি শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা, রূপচান্দা ৮০০ থেকে ১ হাজার, মাইট্যা ৫০০ থেকে এক হাজার, লইট্যা ৪০০ থেকে ৮০০, কোরাল ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০, পোপা ৪০০ থেকে ৮০০, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং অন্যান্য ছোট মাছ ২০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও এখানকার শুঁটকি পল্লীর মাছের গুড়া সারাদেশে পোল্ট্রি ফার্ম ও ফিস ফিডের জন্য সরবরাহ হয়ে থাকে।

শুঁটকি উৎপাদন শিল্পের সংকট প্রসঙ্গে কথা হয় একাধিক ব্যবসায়ির সঙ্গে। তারা জানান, এ শিল্পের মাধ্যমে অনেকের কর্মস্থান হলেও রয়েছে নানা সমস্যা। খোলা মাঠে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ধূলা-বালিতে শুঁটকি উৎপাদন করা। শুঁটকি সংরক্ষণে মাছের সাথে বিভিন্ন ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ মিশ্রন। এমনকি বিষ মিশ্রিত করে শুঁটকি সংরক্ষণ করা। খাবার অনুপোযোগি পঁচা মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকিতে রুপান্তিত করা। পুরো এলাকা জুরে মশা মাছির উৎপাতও বৃদ্ধি।

শুঁটকি উৎপাদনকারীদের সমস্যা সম্পর্কে এর সঙ্গে জরিত একাধিক ব্যবসায়ি জানান, পুজির অভাব সব চেয়ে বড় সংকট। এছাড়া দাদনদারের শোষণ, সরকারি সুযোগ সুবিধার অভাব, মাছের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া। বর্ষার কয়েকমাস ছাড়া বছরের বাকি সময়ে এখানে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি শুঁটকি তৈরি হয় এখন শীতে। তবে শুঁটকি মহালে কাজ করে জীবিকা পরিচালনা করেন এখানকার শ্রমিকরা। তাদরে শ্রম ও বেতন নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ।

শুঁটকি ব্যবসায়িরা জানান, কিটনাশক ঔষধ ব্যবহার বন্ধ, স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি তৈরি, বর্ষা মৌসুমে শুঁটকি তৈরির প্রযুক্তি সরবরাহ এবং এখাতে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা গেলে শুঁটকি রফতানিতে অনায়াসে শতকোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।

সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব আর বাজারজাতকরণে বহুমূখী সমস্যার কথা জানালেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই শিল্পে আরও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি এ শিল্পে জীবিকা নির্বাহ হতে পারে বহু মানুষের।

পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন এস এম আজহারুল ইসলাম। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি জানান, সম্ভাবনাময় এ শুঁটকি শিল্পকে সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনতে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া নিরাপদ ও মানসম্পন্ন শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণে আমাদের নজরদারি রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close