জুয়েল রানা লিটন, নোয়াখালী

  ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

নোয়াখালীর সুধারাম মডেল থানা

থানা প্রাঙ্গণেই নষ্ট হচ্ছে জব্দ মোটরসাইকেল

নোয়াখালীর সুধারাম থানায় জব্দ বা আটক মোটরসাইকেল খোলা আকাশের নিচে থেকে নষ্ট হতে চলছে। থানার ভেতরের ক্যাম্পাসে যেন মোটরসাইকেলের ভাগাড় পরিণত হয়েছে। সরেজমিনে এই দৃশ্য দেখা গেছে।

অন্যান্য যানবাহন থাকলেও ধরণ তালিকায় আটক ও জব্দের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেলের সংখ্যা। বিভিন্ন সময়ে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে প্রায় মোটরসাইকেলই এখন চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়ছে। আদালতের নির্দেশ না পাওয়ায় একদিকে যেমন স্তুপকৃত শতাধিক মোটরসাইকেল নিলামে বিক্রি করা যাচ্ছে না, অন্যদিকে সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আইনগত প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সুধারাম থানায় এসব মোটরসাইকেল পুলিশ হেফাজতে পড়ে থাকছে। ফলে অযতেœ নষ্ট হতে হতে একসময় ব্যবহার উপযোগিতা হারায়। বৈধ কাগজপত্র না থাকায়, মাদক বহনের কারণে কিংবা দুর্ঘটনার দায়ে আটক বা জব্দ মোটরসাইকেলের বিবর্ণ চেহারা বলে দেয় এসব যান্ত্রিকবাহন দীর্ঘ সময় ধরে থানা ক্যাম্পাসে পড়ে রয়েছে। রয়েছে চোরাই মোটরসাইকেলও। কিছুদিন আগে সুধারামের ভাটিরটেক এলাকা থেকে এক সাঙ্গে ৭টি চোরাই মোটর সাইকেল আটক করলেও এ পর্যন্ত কোন চোরকেই আটক করতে পারেনি সুধারাম থানার পুলিশ।

থানা সূত্রে জানা যায়, জব্দ করা এসব মোটরসাইকেল আলামত হিসেবে থানায় সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। ফলে এসব জব্দ আলামত নিয়ে পুলিশও বেকায়দায় রয়েছে। মামলা বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় বছরের পর বছর থানা ক্যাম্পাসে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে ব্যবহার উপযোগী অবস্থায় আনা এসব মোটরসাইকেল। থানায় প্রাইভেটকার, পিক্যাপভ্যান, মাইক্রোবাসও রয়েছে। তবে এসব যানবাহনের সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়।

এ থানায় ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন সময়ে জব্দ করা মোটরসাইকেল থানা ক্যাম্পাসের বেশির ভাগ জায়গা দখল করে রেখেছে। জব্দ করা এসব মোটর সাইকেল রাখার বাড়তি চাপ থানার পরিবেশও বিনষ্ট করছে। থানার ভেতরের জায়গাও সঙ্কুচিত হচ্ছে। আটক বা জব্দ করা এসব মোটরসাইকেল রাখার কোন ছাউনি না থাকায় খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দীর্ঘদিন পড়ে থেকে মরিচা ধরে জরাজীর্ণ, বিবর্ণ হয়ে গেছে। কোন কোনটি পরিণত হয়েছে ভাঙ্গারিতে।

নোয়াখালীর একজন সরকারী আইনজীবি অ্যাডভোকেট কাজী এ.বি.এম শাহজাহান শাহীন থানায় পড়ে থাকা মোটরসাইকেল বিষয়ে বলেছেন, বিভিন্ন সময়ে পুলিশের অভিযানে বা বিভিন্ন ঘটনায় আটককৃত মোটরসাইকেল মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এসব মোটরসাইকেল থানায় অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, থানায় বর্তমানে শতাধিক মোটরসাইকেল পড়ে রয়েছে। যে ঘটনায় বা যে কোন কারণেই মোটরসাইকেলগুলো আটক করা হোক না কেন, এসব মোটরসাইকেল তো দেশের টাকায় কেনা হয়েছে। কিন্তু ব্যবহার উপযোগী থাকা অবস্থায় মালিকবিহীন এসব মোটরসাইকেল আদালতের অনুমতি নিয়ে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি প্রয়োজন। সেই পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় দেশের কোটি কোটি টাকা বছরের পর বছর রোদ বৃষ্টিতে ধ্বংস হচ্ছে। তাই আটকের পর মালিক দাবিদার না পাওয়া গেলে যতো দ্রুত নিলামের মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে সরকারের রাজস্ব বেশি পাওয়া যাবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, মামলা নিস্পত্তি না হওয়ায় বৈধ মালিককে তার মোটরসাইকেল দেওয়া যাচ্ছে না। আবার মালিকবিহীনগুলোও নিলামের মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা করা যায় না। তবে বর্তমানে জব্দ করা যে পরিমান মোটরসাইকেল রয়েছে এগুলো নিলামের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে আদালতের অনুমতি পাওয়া যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close