নইন আবু নাঈম, শরণখোলা (বাগেরহাট)
শরণখোলায় খাল দখল করে বসতবাড়ি ও মাছের ঘের
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি খাল দখল করে বসতবাড়ি নির্মাণসহ মাছ চাষ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার রতিয়া রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রভাবশালী সরোয়ার তালুকদার, বিধান বৈরাগী, অরুণ বৈরাগী, আনোয়ার হাওলাদার, নাছির হাওলাদার, মোস্তফা হাওলাদার ও আবদুর রহমান হাওলাদারসহ ১০-১৫ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি এ দখল কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবন সংলগ্ন ৩৫/১ পোল্ডারের অভ্যন্তরে থাকা ২নং রাজাপুর মৌজার শত শত কৃষকের কয়েক হাজার একর জমির ফসল রক্ষার্থে স্বাধীনতার পূর্বে তৎকালীন সরকার উপজেলার রতিয়া রাজাপুর এলাকায় ওই খালটি খনন করে। খালটি খননের ফলে তৎকালীন সময় রাজাপুর মৌজায় বসবাসরত একাধিক কৃষকের প্রায় ১৫ একর সম্পত্তি ক্ষতির মুখে পড়ে। তবে ফসল রক্ষার্থে খালটি ওই এলাকার কৃষকদের ব্যাপক উপকারে আসতে শুরু করে। পরবর্তীতে পলি জমাট হয়ে পানি প্রবাহের গতি কমে আসে।
স্থানীয়রা আরো জানান, পানি প্রবাহ কম থাকার সুযোগে খালটির দক্ষিণ পার্শ্বের প্রবেশ মুখে স্থানীয় বাসিন্দা প্রভাবশালী সরোয়ার তালুকদারসহ তার কয়েক জন নিকট আত্মীয় তা দখলে নিয়ে বসতবাড়িসহ বিল্ডিং নির্মাণ করেন। পরে খালটি দখলমুক্তসহ পুনরায় খননের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে একটি দরপত্র বিজ্ঞপ্তি আহ্বান করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। একই অর্থবছরে ওই খাল খননের দায়িত্ব পান সিলেটের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, যা পরবর্তীতে সাব-কন্টাক্টের মাধ্যমে উপজেলার দুই ঠিকাদার আজাদ হোসেন সেপাই ও বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান (আসাদ) খালটির একাংশের নামমাত্র খনন করে। পুরো কাজ না করেই তৎকালীন প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে সরকারি বরাদ্দকৃত কয়েক লাখ টাকা উত্তোলন করে নেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা কামাল হোসেন তালুকদার বলেন, সরকার চাষিদের কথা চিন্তা করে জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্দেশে লাখ টাকা ব্যয়ে দুই বছর পূর্বে খালটি খনন করলেও তা স্থানীয় চাষিদের কোনো উপকারে আসছে না। খালের মূল অংশ ইতোমধ্যে দখল করে বসতি স্থাপন করায় প্রকল্পটি জনগণের কোন উপকারে আসেনি। ইতোমধ্যে খালটির প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা দখল হয়ে গেছে। খালের বিভিন্ন স্থানে ২০-২৫টি বাঁধ দিয়ে অনেকে মাছ চাষ শুরু করেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে একসময় বসতবাড়ি নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই অচিরেই তিনি সরকারি খাল দখলমুক্ত করে ওই অঞ্চলের কৃষকদের সুবিধার্থে উন্মুক্ত করার জোর দাবি জানান প্রসাশনের কাছে।
রতিয়া রাজাপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক বলেন, প্রভাবশালীদের ভয়ে তারা কোনো কথা বলতে পারছেন না। ধীরে ধীরে খালটি দখল করে ফেলায় প্রতিবছর চাষবাদ নিয়ে তাদের চরম দুর্র্ভোগে পড়তে হচ্ছে। স্বাভাবিক জোয়ার ভাটা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বর্ষা মৌসুমজুড়ে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় ওই অঞ্চলে, যার ফলে ফসলহানির আশঙ্কায় ভুগছেন তারা।
তবে দখলকারীদের পক্ষে আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, খালটির দক্ষিণ দিকের মূল অংশ ভরাট করে বাড়িঘর তৈরি করায় পানি নিষ্কাশন সঠিকভাবে হচ্ছে না। তাই আমার জমির সামনের অংশে বাঁধ দিয়ে কিছু দেশি মাছের চাষ করেছি। সবাই যদি সরে দাঁড়ায় তাহলে তিনিও যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ কেটে ফেলবেন। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মইনুল হোসেন (টিপু) জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে খোঁজখবর নিয়ে কৃষকদের চাষাবাদে প্রতিবন্ধকতাকারী প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিংকন বিশ্বাস জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন, তবে খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন।
"