তানজিম ইসলাম আহাদ, দোহার (ঢাকা)

  ০৮ জুলাই, ২০১৮

বর্ষার আগেই পদ্মায় ভাঙন

দোহার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নারিশা ইউনিয়ন

* প্রতি বছর গচ্চা যাচ্ছে কোটি টাকা * ভাঙন প্রতিরোধে কাজে আসছে না অস্থায়ী বাঁধ

নদী ভাঙন রোধ দেখিয়ে প্রতি বছর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় পদ্মা বেষ্টিত ঢাকার দোহার উপজেলায়। কিন্তু ভাঙনের মুখে শুষ্ক মৌসুমেও গচ্চা যায় কোটি টাকা। অন্যদিকে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় দোহারে ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে হাজারো ঘর-বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। দোহারের মানচিত্র থেকে একেবারে হারিয়ে যাচ্ছে নারিশা ইউনিয়নটি। এ দিকে ভাঙন ঠেকানোর কাজ দেখিয়ে সম্প্রতি শুরু হয়েছে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কিন্তু কিছু দিন না যেতেই বস্তা ফেটে বালু নদীতে ভেসে যায়। ফলে তা কোনো কাজেই আসেনি বরং নদীতেই ভেসে গেছে প্রকল্পের টাকা এমন অভিযোগ এলাকাবাসীসহ জনপ্রতিনিধিদের। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে নদী ভাঙন ঠেকাতে সাময়িক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আর স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগে। পাউবো সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক মাস আগে পদ্মার ভাঙন থেকে দোহার উপজেলায় নারিশাবাসী গ্রামের ঘর-বাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ, কবরস্থান, রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো রক্ষার জন্য প্রায় ৫০ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়। তাতে খরচ হয় এক কোটি ৯৮ লাখ টাকা। তবে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নদী ভাঙন প্রতিরোধে ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নারিশা পশ্চিমচর এলাকায় অস্থায়ী ভিত্তিতে কিছু কাজ হলেও গত ২০ জুন তারিখে অস্থায়ী কাজের বিভিন্ন স্থানে হঠাৎ পদ্মার গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। দ্রুত নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় জনমনে নতুন করে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানান, পদ্মা ভাঙনে নারিশা ইউনিয়নবাসী হুমকির মুখে। বর্ষার আগেই আকস্মিকভাবে নদী ভাঙনে নারিশা পশ্চিম চর, মেঘুলা, নারিশা খালপাড় এলাকার হাজার হাজার ঘর-বাড়ি, নারিশা ইউনিয়ন পরিষদ, মেঘুলা বাজার, মাদ্রাসা ও মসজিদ, নারিশা উচ্চবিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, মালিকান্দা মেঘুলা স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ সরকারি, বেসরকারি স্থাপনা বিলীন হয়ে যাবে। পদ্মা নদী ভাঙন কবলিত নারিশা পশ্চিমচর এলাকায় গেলে তারা জানান, এ বছর বর্ষা শুরু হওয়ার আগ থেকেই তীব্র আকারে ভাঙন শুরু হয়েছে। নারিশায় এখন প্রতি মুহূর্তে পদ্মার ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে শত শত পরিবার। এভাবে ভাঙতে থাকলে ইউনিয়নের অবশিষ্ট গ্রাম পদ্মার করাল গ্রাসে বিলীন হবে। তারা আরো জানান, গত কয়েক বছর ধরে পদ্মা ভাঙনের শিকার হলেও নারিশা এলাকা রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে স্থায়ী কোনো প্রকল্প এখন পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি। অথচ নারিশাবাসী প্রতিনিয়ত তাদের ভিটে-মাটি রক্ষার দাবি জানিয়ে আসছে, স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে ভাঙন থেকে দোহারের নারিশা পশ্চিমচরবাসীকে দ্রুত রক্ষা করার জন্য। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারে একনেক-এর বৈঠকে নয়াবাড়ি, নারিশা এলাকার ভাঙন রক্ষায় ১১৭ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের কাজ এখনো শেষ হয় নি। কিন্তু বাঁধ নির্মাণ কাজ রাজনৈতিক বিবেচনায় হলে পুরো অর্থ জলে যাবে। নারিশার জনগণের দাবি, এভাবে অর্থ ব্যয় না করে দোহারের বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামের রক্ষায় সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তত্ত্বাবধানে কাজ বাস্তবান করলে যথাযথ ভাবে সম্পন্ন হবে। নারিশা ইউনিয়নের মেঘুলা গ্রামের সমির দাস অভিযোগ করে বলেন, বাঁধ দিয়ে শুধু টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। এগুলো কোনো কাজে আসছে না। মেঘুলা বাজার ওষুধ ব্যবসায়ী ডা. খালেক একই সুরে অভিযোগ করে বলেন, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা না হলে সরকারের টাকা এভাবে লুটপাট হবেই। নদীর ভাঙনের কবল থেকে এই বাঁধ কোনো কাজে আসেনি বলে অভিযোগ করেন নারিশা ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন দরানী। তিনি জানান, যেনতেন কাজ করে নদী ভাঙন থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করা যাবে না। ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সামসুল আলম বাদল দুঃখ করে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘ভোট এলেই অনেক নেতা প্রতিশ্রুতি দেন। ভোট চলে গেলে পরে তা মনে রাখে না কেউ।’ ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে নারিশা ইউনিয়নসহ দোহারের যেসব স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে সেই সব স্থানে দ্রুত স্থায়ী বাঁধ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৗশলী মো. মঈনুদ্দিন বলেন, ভাঙন ঠেকাতে জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িকভাবে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist