পাঠান সোহাগ

  ২৭ মে, ২০১৭

ফুলে ফুলে ঢাকা

নগরীতে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য

গ্রীষ্মকাল শুধু যে রসালো ফলের সম্ভারই নিয়ে আসে, তাই নয় নানা বর্ণের ফুলের শোভায় ভরে দেয় প্রকৃতি। ইট-পাথরে ঘেরা রাজধানীতেও তার প্রমাণ মিলেছে। গ্রীষ্মের ফুলের সৌন্দর্যের কাছে যেন হার মেনে গেছে রাজধানীর সুরম্য অট্টালিকা আর চাকচিক্যময় স্থাপনাগুলো। একটু খেয়াল করলেই যে কারো চোখে পড়বে নগরের বুকে প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য। ফুলে ফুলে রঙিন এখন রাজধানী ঢাকা। গাছে গাছে লাল, কমলা, হলুদ, বেগুনি রঙের বাহার। কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, অশোক, সোনালু, কদম, জারুলসহ হরেক রকমের ফুল শোভা ছড়াচ্ছে সবখানে। সবুজ পাতা ছাপিয়ে উঠেছে ফুলের বাহার। ফাঁকে ফাঁকে নীল আকাশে আর সাদা মেঘ যেন আলাদা আবেশ তৈরি করছে। গ্রীষ্মের খরতাপে এই ফুলেল সৌন্দর্য যেন মননের প্রশান্তি।

ঋতুচক্রের আবর্তনে কৃষ্ণচূড়া তার মোহনীয় সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়েছে প্রকৃতিতে। বিভিন্ন সড়কে রাস্তার দুই পাশে হরেক রকমের ফুল। বিশাল সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে একটু ওপরে তাকালেই দেখা যায় নানা রঙের মেলা। গাছে গাছে ফুটেছে বর্ণিল ফুল। থোকায় থোকায় ফুল। মাঝে মাঝে ফুলের আড়ালে কচি সবুজ পাতা উঁকি দিচ্ছে। দোল খাচ্ছে বাতাসে। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। গ্রীষ্মকাল শুধু ফলের মাসই নয়, ফুলেরও সমাহার নিয়ে আসে। গ্রীষ্মের দাবদাহে একটু সৌন্দর্যের বুলিয়ে দেয় যেন।

জাতীয় সংসদ ভবনের পেছনে ক্রিসেন্ট লেকের সামনে রক্তবর্ণ কৃষ্ণচূড়ার সঙ্গে লেগে আছে কমলা রঙের কৃষ্ণচূড়া। পার্কে বা লেকের পাড়ে বসে বসেই কৃষ্ণচূড়ার নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা যায়। এখানে এলে ফুরফুরে বাতাসে চমৎকার একটি সময় কাটে আগত দর্শনার্থীদের। ঢাকা শহরের সবচেয়ে বেশি কৃষ্ণচূড়ার দেখা পাওয়া যায় এখানেই।

এ ছাড়া কৃষ্ণচূড়া ফুলের দেখা মিলবে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে শেরে বাংলা এভিনিউতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানেও ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালু ও জারুল। কলা ভবনে, অপরাজেয় বাংলার আশপাশে ও মল চত্বরে এলে দেখা মিলবে এসব ফুলের। সোনালু ফুলের সৌন্দর্যটা বেশি দেখা যায় কার্জন হলে গেলে। যেন হলুদের ধারা বইছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পাশে আইন অনুষদের সামনেও সোনালুর দেখা মিলবে। ফুলার রোডের শুরুতে স্বাধীনতার সংগ্রাম ভাস্কর্যের পাশে রয়েছে কৃষ্ণচূড়া ফুলের অপূর্ব এক শোভা। দুপুরে কড়া রোদে দেখা যাবে এর অপার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া ও সোনালুর পাশাপাশি জারুল ফুলটিও ঢাকা শহরের অনেক এলাকাতেই দেখা যায়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর ছাড়াও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনেক গাছেই ফুটেছে এ ফুলটি।

ধানমন্ডি লেকের কথা একটু আলাদা। চারপাশে কৃষ্ণচূড়াসহ নানা ধরনের ফুল। বসার জায়গাটাও যেমন ভালো, তেমনি আড্ডা দেওয়ার জন্যও উত্তম। পাখির ডানায়, হাওয়ায়-হাওয়ায় উড়ছে প্রকৃতির লাবণ্য। গাছে গাছে ফুলের রূপ দৃষ্টি কাড়ছে ফুলপ্রেমী মানুষের। হাতিরঝিল চক্রাকার রাস্তার চারপাশেও ফুলে ফুলে একাকার। এখানে দর্শনার্থীর আগমন চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়াও রমনা পার্ক, ঢাকা সেনানিবাস, বনানী, সুপ্রিম কোর্ট প্রঙ্গণে দেখা মিলবে এমন সব ফুলের।

বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা ফুলপ্রেমী মানুষ, তাদের কাছে কৃষ্ণচূড়া একটি জনপ্রিয় ফুল। নানা বৈশিষ্ট্যে দৃষ্টিনন্দন এ ফুলের কদর রয়েছে সব মহলেই। কবি, সাহিত্যিক পথচারী থেকে শুরু করে সব শ্রেণি পেশার ফুলপ্রেমীদের আনন্দ ও মন কেড়েছে গ্রীষ্মের রাজা কৃষ্ণচূড়া। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে দেখা গেছে, কদমও বেশ সুবাস ছড়াচ্ছে। বেশ কিছু মহল্লায়ও ফুলটি বর্ষা আসার আগেই ফুটতে শুরু করেছে। এই ইট-পাথরের নগরে গ্রীষ্মের মাঝামাঝিতে ফোটা কদম ফুল সবার মনকেই নাড়া দেয়।

গ্রীষ্মের শুরু থেকেই কৃষ্ণচূড়া ফুলটি প্রকৃতির শোভা বাড়াতে থাকে। নানা জাতের পাখির আনাগোনা থাকে গাছটিকে ঘিরে। বিশেষ করে দোয়েল, টুনটুনি, চড়–ই, বুলবুল পাখির সরব উপস্থিতি থাকে সারা বেলা।

কথা হয় ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমী আবু ইসাহাকের সঙ্গে। তিনি জানান, রঙে, রূপে, উজ্জ্বলতা ও কমনীয়তায় কোনো কিছুই যেন কৃষ্ণচূড়ার সমকক্ষ নয়। সবারই তীব্র আকর্ষণ এই কৃষ্ণচূড়ার প্রতি। এ বৃক্ষটির রূপ-লাবণ্য-কমনীয়তা আর সৌন্দর্যে ছোট-বড়, বৃদ্ধ-বণিতা সবার কাছেই পরিচিত।

কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিখ রেজিয়া। এটি ফাবাসিয়ি পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ যার গুলমোহর নামেও পরিচিতি রয়েছে। বসন্তের শেষ দিকে সাধারণত কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে পড়তে শুরু করে। ধীরে ধীরে পত্রহীন বাকানো ডালগুলোতে দেখা যায় কলির আভাস। অন্যান্য ফুল গাছে যখন নতুন পাতা আসে কিন্তু ফুল আসে না, ঠিক তখনই কৃষ্ণচূড়ার সব পাতা ঝরে গিয়ে ফুলের কলি দেখা দেয়। আর গ্রীষ্মের শুরুতেই দেখা যায় লালের আভাস। তারপর লালে লালে উজ্জ্বল হয়ে প্রকৃতিতে যেন আগুন লাগিয়ে দেয় কৃষ্ণচূড়া।

গ্রীষ্মের রৌদ্দুর উত্তাপ গায়ে মেখে রক্তিম টুকটুকে লাল, হলুদ, গোলাপি, সাদা, বেগুনি হরেক রঙের ফুলের সংমিশ্রণে নতুন রূপে প্রকৃতি হয়েছে একাকার। এসব ফুলের সৌরভে মাতোয়ারা রাজধানী। গ্রীষ্মের খরতাপে পোড়া ঢাকা শহরের প্রকৃতিকে একটু ভিন্ন রূপই দিয়েছে গ্রীষ্মের ফুলগুলো। প্রকৃতির এই অসামান্য দান গরমে অতিষ্ঠ নগরবাসীদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়ে যাচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist