আবদুল আলীম, নারায়ণগঞ্জ

  ০৩ জুলাই, ২০২০

না.গঞ্জ কারাগারে ধারণক্ষমতা ৩০০, বন্দি ১৪০০

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ৩০০ বন্দি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন কারাগারে রয়েছে ১৪০০। করোনাকালে ধারণক্ষমতার প্রায় পাঁচ গুণ বন্দি নিয়ে ঝুঁকিতে পরিচালিত হয়ে আসছে কারাগারটি। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জ কারাগারের কারারক্ষীসহ প্রায় ৩৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সুখবর হলো এরমধ্যে ৩৪ জন সুস্থ হয়েছেন এবং দুজন চিকিৎসাধীন। বন্দিদের মধ্যে এখনো কারো করোনা শনাক্ত হয়নি। কারাগারে স্বাস্থ্যবিধি যতটুক সম্ভব পালন করছে কর্তৃপক্ষ।

নারায়ণগঞ্জ কারাগার ১৯৮৮ সালে ১২ একর জমিতে নির্মাণ করা হয়। প্রথমে এই কারাগারটি ছিল ২০০ বন্দি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন। পরে আরো ১০০ বন্দির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়।

কারাগার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে ২১ জানুয়ারি নবনির্মিত নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার। বর্তমানে কারাগারে রয়েছে ডিভিশন ওয়ার্ড, কিশোর ওয়ার্ড, বড় চৌকা, শাপলা ওয়ার্ড, পদ্মা ওয়ার্ড, বেলী ওয়ার্ড, কারা ক্যান্টিন, কারা হাসপাতাল, শিমুল ভবন, রজনী ভবন, খাদ্য গুদাম, সেল, মহিলা ওয়ার্ড, কারা লাইব্রেরি।

কারাগারটিতে বর্তমানে জেল সুপার একজন, সহকারী সার্জন একজন, জেলার একজন, ডিপ্লোমা নার্স একজন, ডেপুটি জেলার একজনসহ ১১৩ জন কারা কর্মকর্তা কর্মচারী কর্মরত আছেন।

এদিকে কারাবন্দিদের মধ্যে জন ২০ জঙ্গি, ৮ জন ফাঁসির আসামি, টপটেরর একজন এবং ভিআইপি মর্যাদায় আছেন দুদকের সাবেক একজন পরিচালক। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের সংক্রামণ ঝুঁকি এড়াতে বিভিন্ন মামলার সাজাপ্রাপ্ত ২০৫ জন বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ ছোটখাটো অপরাধ ও অধিক বয়স্ক যারা রয়েছেন মূলত তাদের নিয়েই ২০৫ জনের এ তালিকা করা হয়েছে। ২০৫ জন কয়েদির মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অর্থাৎ যারা ২০ বছর সাজাভোগ করেছেন এমন সংখ্যা পাঁচজন। এছাড়া ৬ মাস পর্যন্ত সাজাপ্রাপ্ত ৭২ জন, ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত সাজাপ্রাপ্ত ২৫ এবং লঘু অপরাধে অর্থাৎ বিচারাধীন রয়েছে এমন আসামির সংখ্যা ১০৩ জন। এরই মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত প্রায় শতাধিক আসামির মুক্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।

এ বিষয়ে জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ জানান, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই নারায়ণগঞ্জ জেলা কারা কর্তৃপক্ষ বন্দিদের সুরক্ষায় একনিষ্ঠভাবে কাজ করে চলেছেন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের কারারক্ষীসহ প্রায় ৩৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে প্রায় ৩৪ জন সুস্থ হয়েছেন এখনো দুজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। খুশির বিষয় হলো কারাবন্দিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কারো করোনা শনাক্ত হয়নি। আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি তাদের যথাযথ সুরক্ষায় রাখার।

তিনি আরো জানান, ‘আমাদের জায়গার তুলনায় বন্দির সংখ্যা বেশি। এ কারণে করোনাভাইরাস ঝুঁকি মোকাবিলায় অধিক সচেষ্ট থাকতে হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বন্দিদের নিজ নিজ ওয়ার্ডে অবস্থানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাদের বার বার হাত ধোঁয়া ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে বলা হয়েছে। কারারক্ষী বা বহিরাগত যারাই আসছে তাদের কারাগারের প্রবেশ পথে হাত ধোঁয়ার জন্য বলা হচ্ছে এবং শরীর ও জুতার তলানিতে জীবাণুনাশক স্প্রে করে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাস ঝুঁকি এড়াতে কারাবন্দিদের সঙ্গে তাদের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ অস্থায়ীভাবে বন্ধ রয়েছে এবং বন্দি ও তাদের স্বজনরা যাতে একে অপরের খবরা-খবর রাখতে পারে সেজন্য ১০টি টেলিফোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সুভাষ কুমার ঘোষ জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেশে শুরু হওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নারায়ণগঞ্জ জেলার কারাগারকে একটি তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়। আমরা ২০৫ জনের তালিকা জমা দিই। এর মধ্যে শতাধিক কারাবন্দি মুক্তি পেয়েছে। আরো কিছু বন্দি রয়েছে তাদের মুক্তি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তিনি জানান, ভবন নির্মাণ হলে বন্দিদের সুবিধা আরো বাড়বে। এরই মধ্যে নির্মাণের জন্য টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া সম্প্রসারণে এক একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াধীন এবং আরো দুই একর জমি অধিগ্রহণে প্রস্তাবনাধীন বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও কারা পরিদর্শক বোর্ডের সভাপতি জসিম উদ্দিন জানান, করোনার এ সময়ে অন্যান্য জেলাগুলোর তুলনায় আমরা ভালো আছি। তবুও এ সময় বন্দিদের জন্য বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ। জেলা কারাগারের জায়গা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close