ক্রীড়া ডেস্ক
‘অনেক কষ্ট করতে হয়েছে’
পোশাক বদলেছে, বদলেছে বলের রঙ। তার চেয়ে বেশি বদলে গেল যেন বাংলাদেশ দল। সাদা পোশাকে বিবর্ণ বাংলাদেশ দারুণ উজ্জ্বল রঙিন পোশাকের প্রথম ম্যাচেই। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলছেন, খুব কঠিন ছিল না দলকে উজ্জ্বীবিত করা। সতীর্থদের ¯্রফে বলেছেন নিজেদের উজার করে খেলতে।
গত রোববার প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪৮ রানে হারিয়ে বাংলাদেশ শুরু করেছে ওয়ানডে সিরিজ। দুই টেস্টে বাজেভাবে হারার পর যে জয় ড্রেসিং রুমে ফিরিয়ে এনেছে স্বস্তি। দুঃস্বপ্নের মতো কাটানো টেস্ট সিরিজের পর দল ডুবে ছিল হতাশায়। দেশে বিসিবি প্রধানের নানা বিতর্কিত মন্তব্যও দলে জন্ম দিয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া। সব মিলিয়ে মিইয়ে ছিল দল। জাগানোর কাজটি সহজ হওয়ার কথা নয়।
কিন্তু মাশরাফির চেয়ে এই কাজ আর ভালো পারেন কে! দলের বদলে যাওয়া শরীরী ভাষা নজর কেড়েছে ধারাভাষ্যকারদেরও। ম্যাচ শেষে ড্যানি মরিসন তাই জানতে চাইলেন দলকে উজ্জ্বীবিত করার রহস্য। তবে মাশরাফি এটিকে বিশেষ কিছু বলতে চাইলেন না, ‘বিশেষ কিছু বলিনি। ¯্রফে বলেছি, হৃদয় উজাড় করে খেলতে, দেশের জন্য খেলতে। যা হয়েছে, তা তো হয়েই গেছে (টেস্ট সিরিজে)। এটা নতুন সিরিজ। শুরুটা ভালো করতে পারলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আজ ঠিক সেটাই হয়েছে। আশা করি এই পারফরম্যান্স আমরা ধরে রাখতে পারব।’
২০০৭ বিশ্বকাপের সুপার এইটে এই মাঠেই বাংলাদেশ হারিয়েছিল সেই সময়ের র্যাঙ্কিং শীর্ষ দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। সেই জয়ের স্মৃতি মনে পড়ল মাশরাফির। প্রশংসা করলেন এই জয়ের নায়কদেরও। মাশরাফি বলেছেন, ‘২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় এখনো মনে আছে। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলছি। এখানকার উইকেট আমাদের ধরনের সঙ্গে বেশ মানিয়ে যায়। ব্যাটিং আজ (রোববার) শুরুতে চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু তামিম ও সাকিব দারুণ ব্যাট করেছে। সুরটা বেঁধে দিয়েছে। শেষে মুশির ছোট্ট ইনিংসটি ছিল অসাধারণ।’ মাশরাফি আরো বলেছেন, ‘আমরা জানতাম, শুরুতে ভালো বোলিং করলে এখানে ২৮০ রান তাড়া করা কঠিন। আমাদের চাওয়া ছিল গেইল ও লুইসকে দ্রুত ফেরানো। সেটি হয়েছে। এরপর আমরা চাপটা ধরে রেখেছি।’
অধিনায়কের নিজের বোলিংও ছিল দুর্দান্ত। স্ত্রীর অসুস্থতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাওয়ার আগে সেভাবে বোলিং অনুশীলনই করতে পারেননি। কিন্তু মাঠে তার বোলিংয়ে সেটির কোনো ছাপ ছিল না। লাইন-লেংথ ছিল দুর্দান্ত। কাটার ও গতি বৈচিত্র্যে ক্যারিবিয়ানদের ভুগিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট।
অনুশীলনের ঘাটতি ছিল বলেই হয়ত পরের স্পেলে বল করেছেন শর্ট রান আপে। ঘরোয়া ক্রিকেটে আগে শর্ট রান আপে অনেকবার বোলিং করলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে করেননি খুব একটা। এবার সেখানেও সফল। নিজের পারফরম্যান্সও স্বস্তি দিয়েছে অধিনায়ককে, ‘গত ২-৩ মাসে সেভাবে বোলিং করতে পারিনি। লম্বা রান আপে অনুশীলনও সেভাবে করতে পারিনি। এমন সময় আসতেই পারে। ম্যাচে কাজটা এমনিতেও সবসময় কঠিন। তবে আমি মাঠে উপভোগ করেছি।’
১৪৬ বলে সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের মন্থরতম। বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬০ বল খেলেও রান কেবল ১৩০, তার ৮০ রানের বেশি ইনিংসগুলোর মধ্যে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ধীরগতির ইনিংস। তামিম ছিলেন একটু বেশিই অচেনা। কেন এমন ব্যাটিং এই প্রশ্নে তামিমের উত্তর, ‘দলের জয়ে যেকোনো ইনিংসই স্পেশাল। বিশেষ করে আজকে যখন আমরা ব্যাটিংয়ে নামি, উইকেট খুব সহজ ছিল না। শক্ত অবস্থানে যেতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ২৫ ওভার পর্যন্ত উইকেট খুবই কঠিন ছিল। বল টার্ন করছিল, পেসারদের জন্যও সহায়তা ছিল। আমাদের পরিকল্পনা ছিল, স্কোর বোর্ডের দিকে না তাকিয়ে যত লম্বা খেলা যায়।’ তবে নিজে সেঞ্চুরি করলেও সতীর্থ সাকিব বঞ্চিত হওয়ায় খারাপ লাগছে দেশ সেরা ওপেনারের।
"