উপল বড়–য়া

  ১২ জুন, ২০১৮

জার্মানির শিরোপা ধরে রাখার মিশন

বিশ্বকাপ ফুটবলের সবচেয়ে সফল দলের একটি হচ্ছে জার্মানি। শিরোপা অর্জনের দিক থেকে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের পরে তাদের অবস্থান। চারবার বিশ্বকাপজয়ী দেশটি যৌথভাবে এক চেয়ারে আছে ইতালির সঙ্গে। কিন্তু শিরোপার কথা বাদ দিলে বিশ্বকাপের সবচেয়ে ধারাবাহিক দল তারা। গত ২০ আসরের মধ্যে জার্মানি ফাইনাল খেলেছে সর্বোচ্চ আটবার। অন্যদিকে সাতবার ফাইনাল খেলে শুধুমাত্র দুইবার শিরোপা জিততে পারেনি ব্রাজিল।

ফুটবল বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি জার্মানরাই বিশ্বকাপে জন্ম দিয়েছে সবচেয়ে বেশি যুগান্তকারী ঘটনা ও আলোচনার খোরাক। ল্যাটিন ফুটবল শক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো একমাত্র ইউরোপিয়ান হচ্ছে তারা। সেই দুঃসাধ্য কাজটি তারা করে দেখিয়েছে গত টুর্নামেন্টে। সেমিফাইনালে স্বাগতিক ব্রাজিলকে উড়িয়ে দিয়েছিল ৭-১ গোলে। এরপর ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথম ইউরোপিয়ান দেশ হিসেবে ল্যাটিনের মাটি থেকে শিরোপা ঘরে তুলেছিল অক্ষশক্তির দেশ জার্মানি।

একসময় নিয়ম ছিল সর্বশেষ আসর চ্যাম্পিয়নরা সরাসরি খেলবে পরবর্তী বিশ্বকাপে। কিন্তু ২০০২ থেকে ফিফা সেই নিয়মটি সংশোধন করে। এই কারণে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদেরও বিশ্বকাপের টিকিট পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হয় বাছাইপর্বে। রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করার জন্য ইউরোপের শক্তিশালী বাছাইপর্ব পার হতে হয়েছে জার্মানদেরও। বাছাইপর্বের ‘সি’ গ্রুপে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছিল উত্তর আয়ারল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, নরওয়ে, আজারবাইজান ও সান ম্যারিনোকে। দলগুলোর কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি জার্মানির বিপক্ষে।

জার্মানদের ছাড়া বিশ্বকাপ চিন্তা করা অকল্পনীয় ব্যাপার। এই নিয়ে ১৮তম বারের মতো বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করবে দেশটি। এই জায়গাতেও কেবল তাদের ওপরে আছে প্রতিটি বিশ্বকাপ আসরে অংশগ্রহণ করা ব্রাজিল। আর ভাগ বসিয়েছে ১৮টি বিশ্বকাপ খেলা ইতালির চেয়ারে।

ফিফার আমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও জার্মানরা ১৯৩০ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেনি। দেশটি তখন পশ্চিম ও পূর্ব জার্মানি নামে দুইভাগে বিভক্ত ছিল। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত দুই নামে টুর্নামেন্ট খেলেছে তারা। তবে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে ছিল পশ্চিম জার্মানিরা। ১৯৯০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত জার্মানদের যা অর্জন তার সব এসেছে পশ্চিম ভাগটির হাত ধরে।

১৯৮৯ সালে বার্লিন দেয়ালের পতন ঘটিয়ে এক হয় পশ্চিম ইউরোপের দেশটি। সামনে থেকে ছেঁটে ফেলে পূর্ব ও পশ্চিম নাম দুইটি। ১৯৩৪ বিশ্বকাপে এসেই তৃতীয় স্থান অধিকার করে তারা। বিশ্বকাপে নিজেদের অভিষেক ম্যাচে বেলজিয়ামকে ৫-২ ও সুইডেনকে ২-১ গোলে শেষ চারে উঠে যায় দলটি। কিন্তু চেকোস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে হেরে যাওয়ায় ফাইনালে উঠা হয়নি জার্মানদের।

পরের আসরে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি জার্মানরা। ঘরে ফিরে প্রথম রাউন্ড থেকে। ১৯৫০ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ফিফা কর্তৃক নিষিদ্ধ হয় ডায়েচল্যান্ডিয়রা। চার বছরের অপেক্ষাটা তারা সুদে আসলে তুলে নেয় ১৯৫৪ সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপে। হাঙ্গেরিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপার স্বাদ গ্রহণ করে জার্মানরা। এরপর সাফল্যের জন্য আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। আরো সাতবার ফাইনাল খেলে বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব ঘরে তুলেছে ১৯৭৪, ১৯৯০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপে। এর মধ্যে ১৯৮২, ১৯৮৬ ও ১৯৯০ সালে টানা তিনবারের ফাইনালিস্ট তারা।

বিশ্বকাপে জার্মানি কেবল সফল দল নয়, অনেক রেকর্ডেরও মালিক। চার শিরোপা ও চার রানার্সআপ হওয়া ছাড়াও রেকর্ড ১২ বার তৃতীয় হয়েছে দেশটি। তাছাড়া ২০০২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত একমাত্র দল হিসেবে টানা চারবার সেমিফাইনাল খেলেছে তারা। যা সর্বোচ্চ ১৩ বারও।

ব্যক্তিগত অর্জনের মধ্যে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড আছে জার্মান ফরওয়ার্ড মিরোস্লাভ ক্লোসার। ২০০২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত চার আসরে তিনি গোল করেছেন ১৬টি। গত আসরেই তিনি ভাঙেন ‘দ্য ফেনোমেনন’ খ্যাত ব্রাজিল কিংবদন্তি রোনাল্ডোর ১৫ গোলের রেকর্ড। গোলসংখ্যায় তৃতীয় স্থানে আছেন গার্ড মুলার। ১৯৭০ থেকে ১৯৭৪ বিশ্বকাপ পর্যন্ত তিনি করেছিলেন ১৪ গোল। তাছাড়া সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছেন জার্মান কিংবদন্তি লোথার ম্যাথিউজ। ১৯৮২-১৯৯৮ পর্যন্ত পাঁচ বিশ্বকাপে মোট ২৫ ম্যাচ খেলার অবিশ্বাস্য রেকর্ডটি এই মিডফিল্ডারের দখলে।

জার্মানরা কেবল বিশ্বকাপ নয়, ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপেরও শ্রেষ্ঠ। এই পর্যন্ত ইউরোপ সেরার শিরোপা তারা ঘরে তুলেছে তিনবার। আর গত বছর জিতেছে একমাত্র কনফেডারেশন কাপটি।

সদ্য প্রকাশিত ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ স্থানটা ধরে রেখেছে জার্মানি। আসন্ন বিশ্বকাপে দেশটি মাঠে নামবে স্বদেশি কোচ জোয়াকিম লোর অধীনে। এই নিয়ে জার্মানরা টানা তিনটি বিশ্বকাপ খেলবে তার অধীনে। লোর অধীনে ২২ বছরের শিরোপা খরা ঘুচিয়েছিল জার্মানরা। তবে বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতিটা ভালো হয়নি তার শিষ্যদের। গত চার প্রীতি ম্যাচের দুইটিতে হেরেছে দলটি। শেষ প্রস্তুতি ম্যাচেও তাদের জয় পেতে ঘাম ঝারাতে হয়েছে র‌্যাঙ্কিংয়ের ৬৭ নাম্বার দল সৌদি আরবের বিপক্ষে।

এবার তাই কপালে চিন্তার ভাঁজ নিয়ে রাশিয়া যেতে হচ্ছে লো’কে। কিন্তু বিশ্বকাপে তারা যে অন্য গ্রহের দল তা প্রমাণ দিতে ছাড়বে না নিশ্চয়। আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য তরুণ ও অভিজ্ঞদের নিয়ে দল সাজিয়েছেন লো। তার মধ্যে গত বিশ্বকাপ জেতার অভিজ্ঞতা আছে মেসুত ওজিল, টনি ক্রুস, থমাস মুলার, ম্যানুয়েল ন্যুয়ার, জেরোম বোয়েটাং, সামি খেদিরার।

জার্মানরা শিরোপা ধরে রাখার মিশনে নামবে মেক্সিকোর বিপক্ষে ১৭ জুন, লুঝনিকি স্টেডিয়ামে। ‘এফ’ গ্রুপে তাদের অন্য দুই প্রতিপক্ষ হচ্ছে সুইডেন ও দক্ষিণ কোরিয়া। দেখার বিষয়, ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের গ্রুপপর্ব থেকে বাদ পড়ার যে অপবাদটা আছে এত দিন ধরে, তা থেকে তারা বেরিয়ে পঞ্চম শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে পারেন কিনা।

তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া, ফিফাডটকম

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist