পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ১৭ মে, ২০২০

ফের দুর্ঘটনায় মৃত ২৪ পরিযায়ী শ্রমিক

ভারতে ফের ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। শনিবার ভোর ৩টা নাগাদ পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে একটি ট্রাক মুখোমুখি ধাক্কা মারে বিপরীত দিক থেকে আসা অন্য আরেকটি ট্রাকে। এরই মধ্যে মারা গেছেন ২৪ জন পরিযায়ী শ্রমিক এবং গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আরো বহু শ্রমিক। উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউ থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে ঘটে ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে জারি লকডাউনের কারণে ওই শ্রমিকরা নিজেদের বাড়ি থেকে বহু দূরে কাজে এসে আটকে পড়েছিলেন। অনেক দিনের চেষ্টার পর একটি ট্রাকে করে ফেরার বন্দোবস্ত করতে পেরেছিলেন তারা। কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হলো না ২৪ জন শ্রমিকের। দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে তাদের। উত্তরপ্রদেশের এই ঘটনাই প্রথম নয়, এর আগেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ঘরে ফিরতে গিয়ে বলি হতে হয়েছে বহু শ্রমিককে। শনিবার ভোররাতের এই ঘটনা সেই সংখ্যা বাড়াল মাত্র।

জানা গেছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের ওই দলটি রাজস্থান থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। তাদের মধ্যে ছিলেন বিহার, ঝাড়খ- এবং পশ্চিমবঙ্গেরও শ্রমিক, সকলেই ঘরে ফিরতে চেয়েছিলেন। বহুদিন ধরে ভিনরাজ্যে আটকে থেকে মরিয়া হয়েছিলেন তারা। তাই একরকম ঝুঁকি নিয়েই খাবারের প্যাকেট বহনকারী ওই ট্রাকে সওয়ার হয়েছিলেন তারা। উত্তরপ্রদেশের আওরাইয়া জেলায় ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর পেয়েই সেখানে ছুটে যান কানপুরের পুলিশ কমিশনার ও আইজি। দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করে একটি বিস্তারিত রিপোর্টও জমা দিতে বলেছে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কার্যালয়।

এদিকে লকডাউনের জেরে ভিনরাজ্যে আটকে পড়ে চরম দুর্দশার মধ্যে কাটাতে হচ্ছে বহু পরিযায়ীদের। কেউ কেউ তো আবার বাড়ি ফিরতে নিজেদের পায়ে ভরসা করেই পথে বেরিয়ে পড়েছেন। মাইলের পর মাইল হাঁটছেন, লক্ষ্য একটাই, যেকোনোভাবে ঘরে ফিরতে হবে। আর আশঙ্কা? না ফিরতে পারলে করোনায় ভুগে, না হলেও অনাহারে তো মরতে হবে। ঠিক তেমনই এক পরিবারের দেখা মিলেছে সেরিংয়ের রাস্তায়। একই পরিবারের ১৭ জন সড়ক পথেই পায়ে পায়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। সঙ্গের ছোট ছেলেটির ঘাড় ভেঙে গেছে, যন্ত্রণার কাতরাচ্ছে সে, তবুও হাঁটা থামায়নি ওই পরিবার। গুরুতর আহত শিশুটিকে বহনের জন্যে বাঁশ ও কাপড় দিয়ে হাতে তৈরি একটি স্ট্রেচার বানিয়েছেন তারা। পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যকে সেই স্ট্রেচারে শুইয়ে কাঁধে করেই পথ হেঁটেছেন তাঁরা।

পাঞ্জাবের লুধিয়ানা থেকে মধ্যপ্রদেশের সিঙ্গরৌলি পর্যন্ত যাওয়াই লক্ষ্য, আর এর জন্য পেরোতে হবে প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার পথ। যাত্রাপথে তাদের কাছে ছিল না কোনো পর্যাপ্ত খাবার, টাকা-পয়সা। এমনকী পায়ে নেই চটি-জুতাও, খালি পায়েই দীর্ঘপথ পেরিয়ে গিয়েছেন তারা। জানা গেছে, উত্তরপ্রদেশের কানপুরে যাওয়ার পরে নাকি শেষ পর্যন্ত সাহায্য পায় ওই পরিযায়ী পরিবার। তবে ততক্ষণে অসুস্থ ছেলেটিকে কাঁধে বয়ে তারা প্রায় ৮০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এসেছেন। সব জানার পরে কানপুরের পুলিশ তাদের জন্য একটি ট্রাকের ব্যবস্থা করে দেয় বলে জানা গেছে। ওই পরিবারেরই এক সদস্য জানিয়েছেন, লুধিয়ানা থেকে প্রায় ১৫ দিন টানা হেঁটেছেন তারা। সঙ্গের বাচ্চাটির ঘাড় ভেঙে যাওয়ায় কাঁধে তুলে নিয়েও পথ পেরিয়েছেন, থেমে যাননি তবুও। পেটে দানাপানি প্রায় কিছুই পড়েনি, হেঁটেই গেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশের সাহায্যে ওই ট্রাকের ব্যবস্থা হওয়ায় তারা আশা করছেন খুব তাড়াতাড়ি নিজেদের ঘরে ফিরতে পারবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close