আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৭ এপ্রিল, ২০২০

করোনাভাইরাস

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন হাসপাতালে

করোনাইভাইরাস পরীক্ষায় পজেটিভ আসার ১০ দিন পরও লক্ষণ অব্যাহত থাকায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত রোববার রাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও ব্রিটিশ সরকার প্রধান হিসেবে তিনি এখনো দায়িত্বে আছেন বলে নিশ্চিত করেছে ডাউনিং স্ট্রিট, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

গত মাসে পরীক্ষায় জনসনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। তারপর থেকে ডাউনিং স্ট্রিটের বাসভবনে আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। কিন্তু ১০ দিন পার হওয়ার পরও শরীরে জ্বর থাকায় পরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার বলে মনে করেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক। এরপর জনসনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যাকে ‘পূর্ব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ’ বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ সরকার। তাকে কোন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি।

তার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গতকাল রাতে পরীক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, জনসনের ডাউনিং স্ট্রিটের দফতর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে এমনটি বলা হয়েছে। পুরো রাত তিনি হাসপাতালে থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে এটি পূর্ব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ, কারণ পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ার ১০ দিন পরও প্রধানমন্ত্রী ভাইরাসটির লক্ষণ বহন করছেন, বলা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।

প্রধানমন্ত্রীকে জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি এবং তিনি সরকার প্রধানের দায়িত্বেই আছেন বলে জোরালোভাবে জানিয়েছে ডাউনিং স্ট্রিট। গতকাল সোমবার ব্রিটিশ সরকারের জরুরি কোভিড-১৯ বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাব সভাপতিত্ব করবেন বলে দেশটির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

করোনাভাইরাস মহামারির কঠিন সময়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ আত্ম-নিয়ন্ত্রণ এবং দৃঢ় সংকল্প নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার ডাক দেওয়ার মাত্র এক ঘণ্টা পর জনসনকে হাসপাতালে ভর্তি করার খবর আসে বলে জানায় রয়টার্স।

জনসনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা রানিকে জানানো হয়েছে বলে বাকিংহাম প্রাসাদ জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করেনি তারা। পরীক্ষায় তার দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে তা ২৭ মার্চ ঘোষণা করেছিলেন ৫৫ বছর বয়সি জনসন। তারপর থেকে ডাউনিং স্ট্রিটের একটি অ্যাপার্টমেন্টে আইসোলেশনে ছিলেন এবং গত শুক্রবারও শরীরে জ্বর থাকার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।

গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জনসন করোনাভাইরাস রোগীদের সঙ্গে হাত মেলানোর কথা জানিয়েছিলেন। যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে ছড়ানোর প্রথম পর্যায়ে ইউরোপের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের তুলনায় কম কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন জনসন। এর জন্য সমালোচিতও হয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু এই প্রাদুর্ভাবে যুক্তরাজ্যে আড়াই লাখের মতো মানুষ মারা যেতে পারে, গবেষকরা এমন অনুমান প্রকাশ করার পর তিনি অবস্থান বদলে ফেলেন। দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির কার্যক্রম বন্ধ করে দেন, জনগণকে বাড়িতে অবস্থান করার এবং বয়স্ক ও দুর্বলদের কয়েক সপ্তাহের জন্য নিজেদের পৃথক করে রাখার পরামর্শ দেন।

কিন্তু তারপরও ভাইরাসটি ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে ঢুকে পড়ে। গত মাসে জনসন ও তার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয় এবং তার প্রধান মেডিকেল পরামর্শক স্বেচ্ছা আইসোলেশনে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর জনসনের ৩২ বছর বয়সি গর্ভবর্তী বাগদত্তা ক্যারি সিমন্ডসের মধ্যেও করোনাভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে তিনি ভালো বোধ করছেন বলে গত শনিবার জানিয়েছেন সিমন্ডস। বিশ্বের বৃহৎ শক্তি বলে পরিচিত কোনো দেশের প্রথম নেতা জনসন যিনি বিশ্বজুড়ে মহামারি সৃষ্টি করা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

এক সংবাদ সম্মেলনে জনসনকে ‘শক্ত মানুষ’ বলে বর্ণনা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘সব আমেরিকানরা তার জন্য প্রার্থনা করছে’ বলে মন্তব্য করেছেন।

গতকাল সোমবার সকালে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ হাল নাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮ হাজার ৪৪০ জন, মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ৯৪৩ জন এবং সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা মাত্র ২২৯ জন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close