আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২১ জুন, ২০১৮

ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে মার্কিন ফার্স্ট লেডিদের ঐক্য

মেক্সিকোর অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিরুদ্ধে সম্মিলিত অবস্থান নিয়েছেন মার্কিন ফার্স্ট লেডিরা। মেক্সিকো সীমান্তে ট্রাম্প প্রশাসনের পরিচালিত কঠোর অভিযানে বিপুল পরিমাণ পূর্ণবয়স্ক নারী-পুরুষ আটক হওয়ায় ৬ সপ্তাহেই ১৯৯৫ জন শিশু তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান নির্বিশেষে ফার্স্ট লেডিদের মধ্যে পাঁচজন এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। এদের মধ্যে বর্তমান ফার্স্ট লেডি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পও রয়েছেন। এছাড়া সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের স্ত্রী লরা বুশ, ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামা, ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, শান্তিতে নোবেলজয়ী সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের স্ত্রী রোজালিন কার্টার ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে মার্কিন ফার্স্ট লেডিদের এমন ঐক্যের ঘটনা মার্কিন ইতিহাসে বিরল।

মার্কিন স্বরাষ্ট্র দফতর-হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, মেক্সিকোর অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের পরিচালিত কঠোর অভিযানে ১৯ এপ্রিল থেকে ৩১ মে সময়ের মধ্যে আটক হওয়া ১৯৪০ পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে থাকা ১৯৯৫ জন শিশু পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এদের মধ্যে কার বয়স কত মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা জানানো হয়নি। ওই শিশুরা হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া চলমান অবস্থায় সরকারের ডিটেনশন ফ্যাসালিটিজ ও ফস্টার কেয়ারে রাখা হয়েছে তাদের। এভাবে শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার নীতির বিরোধিতা করেছেন মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। মেলানিয়ার মুখপাত্র সিএনএন’কে জানান, পরিবারের কাছ থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্ন করার দৃশ্যকে মেলানিয়া ঘৃণার চোখে দেখেন। তিনি আশা করেন, কংগ্রেসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দুই পক্ষ শেষ পর্যন্ত অভিবাসন আইন সংস্কারের প্রশ্নে একমত হতে পারবে।

বিগত মার্কিন প্রশাসনগুলোর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যেসব লোক অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করত এবং অপরাধের কোনো রেকর্ড ছিল না তাদের আইনের আওতায় অপরাধী সাব্যস্ত না করে শুধুই অস্থায়ীভাবে আটক করা হতো কিংবা বিতাড়িত করার সুপারিশ করা হতো। মা ও শিশুরা সাধারণত একসঙ্গেই থাকত। তবে ট্রাম্প প্রশাসন সব ধরনের অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীর বিরুদ্ধে আইনগত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করার প্রথম ৬ সপ্তাহেই প্রায় ২ হাজার শিশু পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অতীতে এমন নজির দেখা যায়নি। মেলানিয়ার পক্ষে তার মুখপাত্র সিএনএনকে জানান, বর্তমান মার্কিন ফার্স্ট লেডি মনে করেন যাবতীয় আইন অনুসরণের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের শাসন পরিচালিত হওয়া উচিত হৃদয়গত বোধ দিয়ে।

মেলানিয়ার এই অবস্থানের সঙ্গে সহমত জানিয়েছেন আরেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের স্ত্রী ও সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ। ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করে তিনি এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘আমি সীমান্ত সংলগ্ন একটি রাজ্যে বসবাস করি। আমাদের আন্তর্জাতিক সীমান্তগুলোর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য নেওয়া উদ্যোগের প্রশংসা করি আমি। কিন্তু এ জিরো টলারেন্স নীতি নিষ্ঠুর। এটা অনৈতিক। এতে আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। তিনি আরো লিখেছেন, নৈতিকতার দিক দিয়ে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা দুর্ভিক্ষ কিংবা যুদ্ধে বিধ্বস্ত জায়গাগুলোতে মানবিক সহায়তা পাঠিয়ে মার্কিনিরা গৌরব অর্জন করেছে। আমরা এমন একটি গৌরবান্বিত জাতি যারা বিশ্বাস করে, গায়ের রং নয়, মানুষের আচরণ দিয়ে তাকে বিবেচনা করতে হবে। গ্রহণযোগ্যতার দিক দিয়ে আমরা গৌরব অর্জন করেছি।

আমরা যদি সত্যিকার অর্থেই সে দেশ হই তবে এসব বন্দি শিশুকে তাদের মা-বাবার সঙ্গে পুনঃএকত্রিত করানো এবং মা-বাবার থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্ন করার এ পদক্ষেপ বন্ধ করা আমাদের দায়িত্ব।

লরা বুশ টুইটারে নিজের লেখাটি শেয়ার করেন। মিশেল ওবামা সেই টুইটার পোস্টটি রি-টুইট করে লিখেছেন, ‘কখনো কখনো সত্য দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে অতিক্রম করে যায়। তার স্বামী বারাক ওবামা পোস্টটি রি-টুইট করেন। বিল ক্লিনটনের স্ত্রী, সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন একাধিক টুইটে ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করেন। একটি টুইটে তিনি লিখেছেন, অভিবাসীদের নিয়েই যে জাতি, সেই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় নীতি এখন শিশুদের অভিভাবকদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা। এটা অবশ্যই একটা ক্ষরণ। অপর এক টুইটে তিনি লেখেন, সব থেকে বিপন্নদের, বিশেষত শিশুদের ব্যাপারে আমরা কী পদক্ষেপ নিচ্ছি, সেটাই যুক্তরাষ্ট্রে এখন সব থেকে বেশি মনোযোগের দাবিদার। আমাদের চোখের সামনে যা ঘটছে তা দেখে আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না। আমাদের এর বিরুদ্ধে শক্তভাবে দাঁড়ানো দরকার। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের স্ত্রী ফার্স্ট লেডি রোজালিন কার্টার সোমবার এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের নীতিকে ?‘লজ্জাকর ও নিন্দাজনক’ আখ্যা দিয়েছেন।

মার্কিন বিশ্লেষক ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক পিটার স্লেভিন এনপিআর’কে বলেছেন, কোনো একটি ইস্যুতে মার্কিন ফার্স্ট লেডিদের অভিন্ন বিবৃতি তেমন একটা দেখা যায়নি কখনো। ই-মেইলে তিনি এনপিআরকে বলেন, অনন্য কায়দায় তারা সবাই মিলে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের একটি বড় ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist