আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইসরায়েলের আগ্রাসনে নিজেকে রক্ষার অধিকার আছে সিরিয়ার : ইরান
সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ইরান বলেছে, এ ধরনের আগ্রাসনে নিজেদের রক্ষার পূর্ণ অধিকার আছে দামেস্কর।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই তেহরান তার অন্যতম মিত্র সিরিয়ার পাশে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই দামেস্কের দক্ষিণে কিসবেহ এলাকায় ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় বলে দাবি করে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসএএনএ। সিরিয়ায় সাত বছরের গৃহযুদ্ধে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করছে ইরানের কুদস ফোর্স ও লেবাননভিত্তিক গেরিলা দল হিজবুল্লাহ।
টালমাটাল মধ্যপ্রাচ্যে আসাদ ও হিজবুল্লাহকে আগে থেকেই ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচনা করছে ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুদ্ধে এদের ধারাবাহিক বিজয় কপালে ভাঁজও বাড়িয়েছে ওয়াশিংটন তেল আবিবের।
নিজের সীমান্তের উত্তর দিকে লেবাননি-সিরিয়ান ফ্রন্ট তৈরি হওয়ার শঙ্কায় উদ্বিগ্ন ইসরায়েল সিরিয়ায় ইরান ও হিজবুল্লাহর অবস্থানগুলোতে বার বার বিমান হামলা চালাচ্ছে।
৯ এপ্রিল সিরিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটিতে এ ধরনের এক হামলায় ইরানের সামরিক বাহিনীর সাত সদস্য নিহত হন। ওই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান।
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের দখলে থাকা গোলান মালভূমিতে পাল্টা রকেট হামলা চালায় ইরান। এরপরই এর প্রতিক্রিয়ায় সিরিয়ায় সাত বছরের মধ্যে বড় ধরনের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেল আবিব।
ইরান ও ইসরায়েলের এ পাল্টাপাল্টিকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হতে পারে বলেও সতর্ক করছেন পর্যবেক্ষকরা। এর মধ্যেই শুক্রবার ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাশেমীর বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিরিয়ার পক্ষে নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে।
‘সিরিয়ায় (ইসরায়েলের) হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে ইরান। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা ইসরায়েলকে আগ্রাসন চালানোর ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। নিজেদের রক্ষা করার পূর্ণ অধিকার আছে সিরিয়ার’-বাহরাম কাশেমি এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে ইরানি টেলিভিশন।
ইসরায়েলি মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোনাথন কোনরিকাস জানান, বৃহস্পতিবার ইরানি বাহিনীর ছোড়া রকেটগুলোর মধ্যে ‘অল্প কয়েকটিকে’ ধ্বংস করেছে ইসরায়েল, বাকিগুলো আঘাত করলেও ইসরায়েলি অবস্থানের ‘সীমিত’ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
‘আমরাও পাল্টা হামলা চালিয়েছি, কিন্তু ওই বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানা নেই’-বলেছেন তিনি।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, বহু ইসরায়েলি রকেট রাডার স্টেশন, সিরিয়ার এয়ার ডিফেন্সের অবস্থানে এবং অস্ত্রগুদামে আঘাত হেনেছে। সীমান্তবর্তী এইতনিত্রার বাথ শহরেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। এরপর পরপর আরো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসএএনএ।
রাজধানী দামেস্ক, হমস ও সুইদায় ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি।
সামরিক এক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এসএএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এয়ার ডিফেন্স বহু ইসরায়েলি রকেট ধ্বংস করেছে, তবে কয়েকটি লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে, এতে একটি রাডার কেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে।’
আরেকটি রকেট একটি অস্ত্রগুদামে আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে তারা।
ট্রাম্পের ইরান চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসার দুই দিনের মাথায় সামরিক শক্তি বিবেচনায় মধ্যপ্রাচ্যে অত্যন্ত প্রভাবশালী এ দেশ দুটির মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ হলো।
ইসরায়েল ও ইরান আগে থেকেই একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কও নেই। শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরান ধারাবাহিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যে নিজের নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে তৎপরতা চালাচ্ছে বলে দশককাল ধরে অভিযোগ তেল আবিবের।
১৯৭৯ সালেইসলামি বিপ্লবের পর ইরান ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে।
"