অধ্যাপক ডা. এস এম এ এরফান
হঠাৎ পেটব্যথা
পেটে ব্যথা হয়নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। কিন্তু বলা চলে যার পেট আছে তার পেটব্যথা আছে। অজ¯্র কারণে পেট ব্যথা হয়। এর মধ্যে কিছু আছে খুব সাধারণ যেমনÑঅ্যাস্ট্রিক ডায়রিয়া, ডিসেন্ট্রি ইত্যাদি। আবার অনেকগুলো আছে মারাত্মক যেমনÑক্যানসারের ব্যথা, প্যানক্রিয়াটাইটিস ইত্যাদি। এর মাঝামাঝি আছে আরো অনেক রোগ। বস্তুতপক্ষে পেটের ভেতর আছে আমাদের অনেক অঙ্গ। যেমনÑলিভার, স্পিøন, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র, কিডনি, ব্লাডার, মহিলাদের জরায়ু, ওভারি ইত্যাদি। এর সবগুলোতে ব্যথা হতে পারে।
পেটের ব্যথার বিষয়ে বা অন্য ব্যথায় রোগীদের ভীতি থাকলেও ডাক্তাররা ব্যথাকে পজিটিভভাবে নেন। কারণ ব্যথা হচ্ছে রোগের সিগনাল বা ডেনজার সিগনাল। এই সিগনালে জানা যায়, রোগীর কোনো সমস্যা হয়েছে। ফলে মোটামুটি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা যায়। আর যদি ব্যথা না থাকত তাহলে তার সমস্যাটাও প্রাথমিক পর্যায়ে জানা যেত না। যেমনÑডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যথা হয় কম, ফলে যেকোনো রোগ অনেক বেশি জটিল অবস্থায় ধরা পড়ে। যাই হোক, আমরা সাধারণ কিছু পেটের ব্যথা নিয়ে আলোচনা করব, যা গুরুত্বপূর্ণ। সে ব্যথাগুলোর মধ্যে আছে গলব্লাডারের ব্যথা, লিভারের ব্যথা, এপেন্ডিকসের ব্যথা, অন্ত্রের ব্যথা, পাকস্থলীর ব্যথা, পায়ুপথের ব্যথা, প্র¯্রাবের থলি ও পথের ব্যথা এবং জরায়ু ও আশপাশের বিভিন্ন অঙ্গের ব্যথা।
পেটের ব্যথায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগী অথবা তার আত্মীয়স্বজনকে সবসময় খেয়াল রাখা প্রয়োজন। সে বিষয়গুলো হচ্ছেÑ
১. পেটে তীব্র ব্যথা হলে, সাধারণত এটি সার্জিক্যাল ব্যথা। চিকিৎসকরা একে একুট এবডোমেন বলেন। এ রকম ব্যথা হলে দ্রুত একজন সার্জনের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। এসব ক্ষেত্রে প্রায়ই অপারেশনের প্রয়োজন হয়। চিকিৎসা হতে দেরি হলে বড় রকমের জটিলতা তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ‘সময়ের একফোঁড় অসময়ের দশফোঁড়’-এর মতো অবস্থা হয়।
২. আরেক ধরনের পেটের ব্যথা হচ্ছে, ব্যথার সঙ্গে পেটে চাকা জাতীয় পদার্থ অনুভূত হতে পারে। মনে হবে পেটের কোথাও যেন চাকা বা শক্ত কোনো পদার্থ তৈরি হয়েছে। এসব চাকা স্থির থাকতে বা নড়াচড়া করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত একজন সার্জনের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। কারণ এটি কোনো টিউমারের জন্যও হতে পারে।
৩. এছাড়াও পেটে ব্যথার সঙ্গে মলে রক্ত, কালো মল, প্র¯্রাবে রক্ত ইত্যাদি ক্ষেত্রেও সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
৪. বয়স্কদের ক্ষেত্রে অর্থাৎ ৫০-ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নতুন কোনো পেটব্যথা শুরু হলে অবশ্যই তা গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।
পেটব্যথার সঙ্গে অন্য উপসর্গও দেখা দিতে পারে। যেমনÑবমি, ডায়রিয়া, পেট ফুলে যাওয়া, পায়খানা বন্ধ হয়ে যাওয়া, মলে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব উপসর্গ থাকলে সমস্যা জটিল বলে ধরে নিতে হবে।
একটা বিষয় আমাদের মনে রাখা জরুরি যে, পেটব্যথা কোনো রোগ নয়। রোগের উপসর্গ বা ‘সিগন্যাল’ মাত্র। এই ‘সিগন্যালের’ সূত্র ধরে রোগ নির্ণয় করে রোগের চিকিৎসা করা জরুরি। পেটব্যথা সেই অর্থে আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। সে যে অপরাধী অর্থাৎ রোগকে ‘ধরিয়ে’ দেয়। এই ‘ধরিয়ে দেওয়া’ যত তাড়াতাড়ি হয় ততই ভালো। তাই পেটে ব্যথা হলে বিলম্ব না করে এর কারণ উদ্ঘাটনের জন্য আমাদের ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’ অর্থাৎ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
লেখক :
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
সার্জারি বিভাগ
জাপান-বাংলাদেশ হাসপাতাল
"