অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী
স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়
ঘাতক রোগ হিসেবে স্ট্রোক সুবিদিত। আমাদের দেশে ঘাতক রোগ হিসেবে এর স্থান কত তা সঠিক জানা না গেলেও আমেরিকার মতো শিল্পোন্নত দেশে এ অবস্থান তৃতীয় স্থানে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আর বয়স্কদের মধ্যে গুরুতর দীর্ঘস্থায়ী পঙ্গু অবস্থা ঘটাতেও এর জুড়ি নেই।
কখন কেন ঘটে স্ট্রোক : মগজের কোনো অংশে রক্ত চলাচল রোধ হয়ে যাওয়া; হতে পারে তা ছোট কোনো রক্তনালি অবরুদ্ধ হওয়ার জন্য। নয়তো রক্তনালি দীর্ঘ হওয়ার জন্য। এমন ঘটতে পারে যেকোনো বয়সে, তবে অজ্ঞতার কারণেই আফ্রিকান, আমেরিকান ও দক্ষিণা লোকদের স্ট্রোক হয় বেশি। আশার বাণী দিলেন মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজিস্ট ও আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের আসন্ন সভাপতি র্যালক স্যাকো, বেশির ভাগ স্ট্রোকই প্রতিরোধযোগ্য। এজন্য আসামি করা হয়েছে একটি খাদ্যদ্রব্য লবণকে। আমেরিকান খাদ্যে লবণ বেশি হওয়ার জন্য স্ট্রোকে মৃত্যু বেশি হয়। লবণের সঙ্গে সম্পর্কিত উচ্চরক্তচাপ। আর উচ্চরক্তচাপ হলে স্ট্রোকের বড় ঝুঁকি তো বটেই। প্রক্রিয়াজাত খাবার ও রেস্তোরাঁর খাবার লবণে ভরপুর। এদেশেও এ ঘটনা চলছে। আমেরিকার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞরা তাই আমেরিকান এফডিএকে চাপ দিচ্ছেন, যাতে তারা খাদ্য প্রস্তুতকারীদের খাদ্যে কম লবণ যোগ করতে বাধ্য করেন। এফডিএ এতে কেমন সাড়া দেয় তা দেখার বিষয়, তবে এরই মধ্যে স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য জনগণের কাছে কিছু পরামর্শ রেখেছেন বিজ্ঞজনরা।
লবণ খাওয়া কমান
পাতে লবণ না খেয়ে এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার ফাস্টফুড, রেস্তোরাঁর খাবার খাওয়া কমালে হয়। লবণ কম খেতে খেতে জিব সয়ে যায়।
ধূমপান করে থাকলে ছেড়ে দিন
ধূমপায়ীরা বেশি আতঙ্কে থাকেন ফুসফুসের ক্যানসার নিয়ে, আবার ধূমপান করলে রক্তনালির ভীষণ ক্ষতি হয় আর স্ট্রোক হওয়ার পথ সুগম হয়। মদপান করে থাকলেও ছেড়ে দেওয়া উচিত।
হাঁটুন জোরে
স্ট্রোক নামক জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রবন্ধে দেখানো হয়েছে, যেসব মহিলা সপ্তাহে দুই ঘণ্টা বা এর বেশি হেঁটেছেন বা হেঁটেছেন তিন মাইল প্রতি ঘণ্টায়, এমন গতিতে এদের স্ট্রোক হওয়ার ঘটনা যারা হাঁটেননি বা ধীরে হেঁটেছেন তাদের তুলনায় তাৎপর্যপূর্ণভাবে কম। অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পুরুষ ব্যায়াম করেন তাদের মধ্যে স্ট্রোকের ঘটনা কম। বোস্টনের হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষক জেকব সেটলম্যার বলেন, স্ট্রোক প্রতিরোধে শরীরচর্চা হলো বড় উপাদান।
আছে কি এমন অসুখ যা বাড়ায় ঝুঁকি : থাকলে প্রতিরোধ পদক্ষেপ নিতে হবে। তালিকার মধ্যে রয়েছে- উচ্চরক্তচাপ, উঁচুমান কোলেস্টেরল, হৃদক্ষতিকর কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, রক্তনালির রোগ, স্থূলতা, হৃদস্পন্দন চ্যুতি, (এট্রিয়াল ফিব্রিলেশন)। আর ‘সিলপেপনিয়া’ স্ট্রোকের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক এ অবস্থার। তবে কেন যে কোনো কোনো লোকের স্ট্রোকের প্রবণতা বেশি, তা অজানা। কৃতকার্য মানুষ ও দক্ষিণাদেরও কেন বেশি হয়, তাও অস্পষ্ট। আলাকমার প্রফেসর জর্জ হাওয়ার্ড বলেন, থাকতে পারে অন্য কারণ। যেমন লোকসমাজের ভেতরে যা নিহিত। তাজা ফল, সবজি ও ভালো স্বাস্থ্য পরিচর্যার আওতায় না থাকায় হয়তো এমন ঘটছে। দারিদ্র্য, শ্রেণিবৈষম্য কি এর পেছনে এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে।
লেখক:
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
"