নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ আগস্ট, ২০২০

অনলাইন মিটিংয়ে শিঙাড়ার খরচ কেন : পরিকল্পনামন্ত্রী

অস্বাভাবিক খরচ মানতে পারছেন না মন্ত্রী-সচিবরা

সচিবদের ডেকে নিয়ে সভা করে সরকারি অর্থাৎ জনগণের অর্থ অপব্যয় নিয়ে সতর্ক করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে সুষ্ঠু ও গুণগতমানসম্পন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে সভা করেন তিনি। এরপর এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈঠকে আমি বলেছি, করোনায় বাড়িতে বসে জুম মিটিং করলে আপ্যায়ন ব্যয় কেন হবে। প্রকল্পের আওতায় আপ্যায়ন ব্যয় আছে, তার মানেই এই নয় যে, অযৌক্তিকভাবে ব্যয় করতে হবে। প্রকল্পের আওতায় অযৌক্তিক ব্যয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীও উদ্বিগ্ন। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অসন্তুষ্টির কথাও সচিবদের জানিয়েছেন সাবেক আমলা মান্নান।

তিনি জানান, অকারণে প্রকল্প ব্যয় যাতে না বাড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে কেনাকাটায় শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বলেছেন তিনি। এ দিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ ৩০ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে অস্বাভাবিক বা বাড়াবাড়ি খরচসহ বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে সবাই অস্বাভাবিক খরচ না করার বিষয়ে একমত হয়েছেন। এগুলো শোধরানোর জন্য এ বছর থেকেই সবাই একসঙ্গে কাজ করবেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এর বাস্তবায়ন দেখা যাবে।

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই স্বীকার করি, কয়েকটি ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি আছে। ভুল হোক বা হিউম্যান ইরর হোক। কিন্তু বার বার একই ভুল গ্রহণযোগ্য নয়। সবাই মিলে আমরা আলোচনা করেছি, কীভাবে এটাকে বন্ধ করা যায়। এ বিষয়ে আমরা সবাই একমত হয়েছি, আমরা যার যার অবস্থান থেকে এটা মোকাবিলা করব। আমরা এ বছর থেকে কাজ শুরু করলাম, নতুন প্রকল্পগুলোর জন্য আমরা অনেকটা সচেতন হব।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই একমত হয়েছি, করোনার জন্য নয়, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় যেকোনো পরিস্থিতিতে আমাদের পরিহার করতে হবে। এটা অপরিহার্য। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন সময় আমি শেয়ার করেছি। তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। তিনি আমাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি আমাদের কাছ থেকে শোনেন, তা নয়। তার (প্রধানমন্ত্রীর) নিজের নজরেও আসছে। বিশেষ প্রকল্পের রিভিশন নিয়ে তিনি প্রায়ই প্রশ্ন করেন, এত রিভিশন কেন করেন। প্রথমে বললেন দুই থেকে তিন বছরের প্রকল্প। তারপর এক বছরের মাথায় এসে বলেন, চার বছর লাগবে। আরেক বছর পর আবার এসে বললেন ব্যয় বাড়াতে হবে। এগুলো তিনি মনে করেন যে, শৃঙ্খলাবিরোধী। এটা আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকারের অর্থ নয়, জনগণের অর্থ। জনগণের অর্থ যদি অপচয় হয় বা খরচ বেশি করিÑ এটা গ্রহণযোগ্য নয়। করোনা হোক বা না হোক, কোনো সময়ই জনগণের অর্থ নিয়ে ‘নয়-ছয়’ হতে দেওয়া যাবে না, এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা সবাই স্বীকার করি, কয়েকটি ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি আছে। ভুল হোক বা হিউম্যান এরর হোক, হিউম্যান এরর হিসেবে নেব। কিন্তু রিপিটেড হিউম্যান এরর তো গ্রহণযোগ্য নয়। সবাই মিলে আলোচনা করেছি, কীভাবে এটাকে উতড়ে আসা যায়, এ বিষয়ে আমরা সবাই মিলে একমত হয়েছি, আমরা যার যার অবস্থান থেকে এটা মোকাবিলা করব। এ বছর থেকে কাজ শুরু করলাম, নতুন প্রকল্পগুলোর জন্য আমরা অনেকটা স্ট্রিনজেন হব। প্ল্যানিং কমিশনে আমরা মোস্ট স্ট্রিনজেন হব। যারা প্রকল্প তৈরি করবেন, তারা আগের তুলনায় অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করবেন। যাতে এ ধরনের কাজ আগামীতে যেন আর না হয়।

এম এ মান্নান বলেন, পরিকল্পনা কমিশন আরো সচেতন হবে। আর যারা প্রকল্প তৈরি করবেন, তারা আগের তুলনায় অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করবেন। যাতে করে এ ধরনের কাজ আগামীতে আর না হয়। বিষয়গুলো আজকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সচিবরা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকেন। তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তারা টাস্কফোর্স গঠন করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব কী কী শাস্তির বিধান আছে, সেটা উল্লেখ করেছেন। জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে তিনি আবার এটাকে রিফ্লেক্ট করেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের পরিকল্পনা কমিশনের যারা সব প্রকল্প যাচাই-বাছাই করেন, তাদের অবজারভেশনে তারা ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করেন। সেগুলো তারা পয়েন্ট আউট করেছেন। অন্য সচিব যারা ছিলেন, যারা প্রকল্প তৈরি করেন, বাস্তবায়ন করেন, তাদের শিক্ষণীয় ব্যাপারগুলো বললেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তারা যেহেতু সিনিয়র, তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে উল্লেখ করেছেন, কোথায় কীভাবে আরো ভালো করা যায়।

তিনি বলেন, একজন লোকের কাছে চারটা, পাঁচটা, ছয়টা প্রকল্প। ১০টা প্রকল্পও পাওয়া গেছে। এটা আমাদের সার্কুলারবিরোধী, বিধানবিরোধী। তারপরও করে যাচ্ছি এটা। সুনামগঞ্জের প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক ঢাকায়। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এটা আগেও আলোচনা করেছি। আবার আলোচনা করছি। বারবার করে এটাকে আমরা শোধরাবার চেষ্টা করছি, শোধরানো দরকার।

দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে এমএ মান্নান বলেন, উন্নয়ন কর্মকান্ডে জনগণ আমাদের ওপর নজর রাখছে। আমাদের কাজ দৃশ্যমান। আমরা অবকাঠামো তৈরি করছি। মানুষ অনেক সচেতন। আমাদের গতিবিধি, আচার-আচরণ দেখছে। জনগণের সম্পদ আমরা কীভাবে ব্যবহার করছি, তা তারা গভীর নজরে রেখেছে। তাই টাকার ব্যবহার, সময়োপযোগিতা ও পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close