গাজী শাহনেওয়াজ

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

আজ নৌকা না ধানের শীষ

* প্রথমবারের মতো ইভিএম * ৬৪ দশমিক ৭১ শতাংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ * আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই চ্যালেঞ্জ

ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ শনিবার। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। নিকট অতীতের মধ্যে সবচেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রাচারণা শেষে এবার জনরায়ের পালা। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রার্থীরা যথাক্রমে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন সামগ্রীও নিজ নিজ কেন্দ্র নিয়ে গেছেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা। এবারই প্রথম ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হচ্ছে। ভোটে উৎসবের পাশাপাশি শঙ্কা রয়েছে। আধুনিক যন্ত্রে ভোট হলেও এ নিয়ে সংশয় আছে বিএনপির। তবে ঢাকার এ দুই সিটি নির্বাচনের প্রচারে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া উল্লেখযোগ্য সংঘর্ষ হয়নি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা অনেকটা নির্বিঘেœই প্রচার চালিয়েছেন। পিছিয়ে ছিলেন না অন্য প্রার্থীরাও।

ভোটগ্রহণ ও ফল নিয়ে বিরাজ করছে আশা ও শঙ্কা। কয়েকজন প্রার্থী রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে পোলিং এজেন্ট ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা চেয়ে নির্বাচন কমিশনে দুটি পৃথক আবেদন করেছেন উত্তর সিটির বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ হয়। ওই সময়ে ঢাকা উত্তরে ৩৬টি ও দক্ষিণ সিটিতে ৫৭টি ওয়ার্ড ছিল। এবারের দুই সিটিতে ১৮টি করে ৩৬টি ওয়ার্ড সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এতে বেড়েছে ভোটার ও কেন্দ্র সংখ্যাও। এ নির্বাচনে দুই সিটিতে ২ হাজার ৪৬৮টি কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ ভোটার।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন ওয়ার্ডগুলোর অনেক জায়গায় যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো নয়। এছাড়া দুই সিটিতে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। শুধু তাই নয়, ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নের অনেক উত্তর মিলবে এ নির্বাচনে।

২২ ডিসেম্বর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ৩১ জানুয়ারি, মনোনয়নপত্র বাছাই ২ জানুয়ারি, প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল ৯ জানুয়ারি। ভোটগ্রহণের তারিখ ৩০ জানুয়ারি থাকলেও ওইদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজা থাকায় তা পরিবর্তন করে ১ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়। ১০ জানুয়ারি প্রচার শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার প্রচার শেষ হয়।

জানা গেছে, দুই সিটিতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে সব মিলিয়ে ৭৫০ প্রার্থী চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ঢাকা উত্তরে ছয়জন ও দক্ষিণ সিটিতে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাকি ৭৩৭ জন কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন।

মেয়র পদে মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।

এ সিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আরো রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাজি সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন। বাকি মেয়র প্রার্থীরা হলেন গণফ্রন্টের আবদুস সামাদ সুজন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ, ইসলামী আন্দোলনের মো. আবদুর রহমান ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) বাহারানে সুলতান বাহার।

অপরদিকে ঢাকা উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলামের সঙ্গে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বিএনপির তাবিথ আউয়াল। এছাড়াও এ সিটিতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেনÑ কমিউনিস্ট পার্টির ডা. আহাম্মদ সাজেদুল, এনপিপির মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) শাহীন খান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ।

প্রার্থী সংখ্যা : ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র পদে ছয়জন, ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডের বিপরীতে ২৫১ জন কাউন্সিলর ও ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৭৭ জন নারী কাউন্সিলর ভোটের মাঠে রয়েছেন।

অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ৪১৬ জন। এ সিটিতে সাতজন মেয়র পদে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এ সিটিতে ৭৫টি ওয়ার্ডে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৩২৭ জন ও সংরক্ষিত ২৫টি ওয়ার্ডে মাঠে রয়েছেন ৮২ জন।

প্রথমবার ইভিএম : প্রথমবার ইভিএমে ভোটগ্রহণ করতে যাচ্ছে ইসি। দুই সিটিতে ভোটগ্রহণের জন্য ২৮ হাজার ৮৬৮টি ইভিএম প্রস্তুত করা হয়েছে। ঢাকা উত্তরে ১৫ হাজার ৬৯২টি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৩ হাজার ১৭৬টি মেশিন ভোটে থাকবে।

আরও জানা গেছে, ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের কারিগরি সহায়তা দিতে সশস্ত্র বাহিনীর ৫ হাজার ১৫ সদস্য মোতায়েন থাকবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে দুজন করে সার্জেন্ট বা করপোরাল বা ল্যান্স-করপোরাল অথবা সৈনিক দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ৫২ জন জেসিও ও ২৭ জন অফিসারও মাঠে থাকবেন। এরই মধ্যে দুই সিটির জন্য ৫ হাজার ৫৩৮ জন সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য নিয়োগের আদেশ হয়েছে।

ভোটার সংখ্যা : দুই সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৮ লাখ ৪৩ হাজার ৮ ও নারী ভোটার ২৬ লাখ ২০ হাজার ৪৫৯ জন। সিটি করপোরেশন হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটিতে ভোটার রয়েছেন ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন; যার মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ ও নারী ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন।

অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভোটার সংখ্যা ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন; যার মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ ও নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ জন।

ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ : দুই সিটিতে ২ হাজার ৪৬৮টি ভোটকেন্দ্র ও ১৪ হাজার ৪৪৫টি ভোটকক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে ১ হাজার ৩১৮টি ভোটকেন্দ্র ও ৭ হাজার ৮৫৭টি ভোটকক্ষ এবং দক্ষিণ সিটিতে ১ হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্র ও ৬ হাজার ৫৮৮টি ভোটকক্ষ রয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটিতে একক হিসাবে এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি ১১টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন মিরপুর আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়। একই সিটির তেজগাঁওয়ের সিভিল এভিয়েশন স্কুল অ্যান্ড কলেজে রয়েছে ১০টি ভোটকেন্দ্র।

অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কদমতলীর একে হাইস্কুল কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৮টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে।

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা : ঢাকার দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা রয়েছেন ৪৫ হাজার ৮০৩ জন। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৬৮ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ১৪ হাজার ৪৩৪ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ২৮ হাজার ৮৬৮ জন পোলিং কর্মকর্তা রয়েছেন।

উত্তর সিটিতে ১ হাজার ৩১৮ প্রিসাইডিং ও ৭ হাজার ৮৫৭ সহকারী প্রিসাইডিং ও ১৫ হাজার ৬৯২ পোলিং কর্মকর্তা ভোটগ্রহণ করবেন। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১ হাজার ১৫০ প্রিসাইডিং, ৬ হাজার ৫৮৮ সহকারী প্রিসাইডিং ও ১৩ হাজার ১৭৬ পোলিং কর্মকর্তা ভোটগ্রহণ করবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close