মহসীন শেখ, কক্সবাজার

  ০৬ মার্চ, ২০১৮

অরক্ষিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প

প্রতিদিনই পালিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা

নির্যাতনের মুখে প্রাণভয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যত্রতত্র অবাধে বিচরণ করছে। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ১৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাময়িক আশ্রয় নিয়েছে তারা। উখিয়া বন রেঞ্জের প্রায় ৫ হাজার একর বনভূমি ধ্বংস করে ক্যাম্প তৈরি করে আশ্রয় নিয়েছে ওইসব রোহিঙ্গা। সরকারের পাসপোর্ট অধিদফতরের গণনা ও তথ্যানুযায়ী ১০ লাখ ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু নিবন্ধিত হয়েছে। রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে যাচ্ছে। ফলে জঙ্গি, ইয়াবা ব্যবসা, হত্যা, ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধ সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে তেমন কোনো কড়াকড়ি না থাকায় যেখানে সেখানে অবাধে চলাফেরা করছে রোহিঙ্গারা। বলতে গেলে অনেকটা অরক্ষিত। ক্যাম্প ঘিরে কোনো ধরনের সীমানা প্রাচীরে আবদ্ধ না থাকায় প্রতিদিনই যে যার মতো করে চলাফেরার সুযোগ পেয়ে ক্যাম্প থেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে কুতুপালং, মধুরছড়া, মাছকারিয়া, শিলেরছড়া, পাতাবাড়ী, লম্বাঘোনা, দরগাহবিল, হাঙ্গরঘোনা, আজুখাইয়া, তুলাতলী, ডেইলপাড়া, করইবনিয়াসহ কয়েকটি গ্রামের বিভিন্ন রাস্তা উপসড়ক দিয়ে রোহিঙ্গারা চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১ মার্চ থেকে রোহিঙ্গারা প্রতিদিন এসব গ্রামের বিভিন্ন রাস্তাঘাট দিয়ে সিএনজি-টমটম ভাড়া করে সোজা কক্সবাজার ও রামুতে ঢুকে পড়ছে। সেখান থেকে দূরপাল্লার যানবাহন করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে চলে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গত বৃহস্পতিবার নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে হঠাৎ অতিরিক্তি সেনা মোতায়েন, ভারী অস্ত্রশস্ত্র মজুত, ব্যাংকার নির্মাণসহ মাইকিং করে জিরো পয়েন্টে অবস্থানকারী সাড়ে ৬ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি-ধমকি দেয়। এরপর থেকে জিরো পয়েন্ট থাকা রোহিঙ্গারা সরাসরি কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে প্রতিদিন অন্যত্র চলে যাওয়া শুরু করেছে।

এছাড়াও উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা যেভাবে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। লাখ লাখ রোহিঙ্গারা উখিয়া-টেকনাফের মহাসড়কের পাশে আশ্রয় পাওয়ার সুযোগ পেয়ে অরক্ষিত ক্যাম্প থেকে সরাসরি বের হয়ে যাত্রীবাহী গাড়িতে করে চলে যাচ্ছে যেখানে সেখানে। বিশাল এ রোহিঙ্গা গোষ্ঠী মাসের পর মাস প্রধান সড়কে রাস্তার দুইপাশে বসবাস করার সুবাদে চেনা জানার পাশাপাশি সব কিছু নখদর্পণে।

অভিযোগ রয়েছে, গত ২৫ আগস্টের পর রোহিঙ্গারা বানের পানির মতো এসে উখিয়া এবং টেকনাফে আশ্রয় নেয়। রোহিঙ্গাদের খাবার সামগ্রী ও সাহায্য করতে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ছুটে আসে দেশের বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালী কর্তাব্যক্তিরা। তখন ত্রাণের ঢলে সয়লাব হয়ে পড়ে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের মাঝে ঢালাওভাবে ত্রাণ বিতরণের খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে মিয়ানমারে থাকা অবশিষ্ট রোহিঙ্গারাও দ্রুত চলে আসে। একশ্রেণির মৌলবাদী গোষ্ঠী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসে ত্রাণ বিতরণের নামে নগদ টাকা বিতরণ করা শুরু করলে সেখানে এক নৈরাজ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তখন স্থানীয় প্রশাসন রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খায়। অবশেষে প্রশাসন তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সরকারের নির্দেশে সেনাবাহিনীকে রোহিঙ্গাদের দেখাশোনার দায়িত্ব দেন। প্রায় ১ সপ্তাহের মধ্যে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন।

এ বিষয়ে উখিয়ার থাইংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা বর্তমানে সাময়িকভাবে ১৩টি ক্যাম্পে অবস্থান করলেও তাদের মাঝে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা নেই। তারা প্রতিদিন ক্যাম্প থেকে বের হয়ে বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, গত ৬ মাসে প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু ক্যাম্প থেকে পালিয়ে গেছে বলে শোনা গেছে। তবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির পর রোহিঙ্গারা সেই গণনার হিসাব অনুযায়ী ক্যাম্পে আছে কিনা তদন্ত করে দেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি। অন্যথায় এ রোহিঙ্গারা সারা দেশে অবস্থান নিয়ে যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা সৃষ্টি করতে পারে বলে দাবি তার।

এদিকে রোহিঙ্গাদের ঘিরে অনেকটা অরাজক অবস্থা থেকে উত্তরণে অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার দাবি উঠেছে। উখিয়া-টেকনাফ থেকে সরিয়ে নিয়ে নোয়াখালীর হাতিয়ার ঠেঙ্গারচরে স্থানান্তরিত করা দাবি তুলেছেন স্থানীয় উখিয়া-টেকনাফের মানুষ।

এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে উখিয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা দিন দিন বেপরোয়া উঠছে, তাদের অবস্থান পর্যটনসহ কক্সবাজার জেলায় হওয়ায় উখিয়া-টেকনাফের মহাসড়কের পাশে থাকায় তারা রাত-দিন বিভিন্ন যানবাহনে করে ক্যাম্প থেকে অন্যত্র পালিয়ে যাচ্ছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করা এখন প্রশাসনের কাছে কঠিন হয়ে পড়েছে। লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের উখিয়ায় অবস্থান দীর্ঘায়িত হলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তাই রোহিঙ্গাদের উখিয়া ও টেকনাফ থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা না হলে কক্সবাজারের মানুষ চরম হুমকিতে থাকবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist