প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৯ জানুয়ারি, ২০১৮

৫০ বছরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা

তেঁতুলিয়ায় ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস চারজনের মৃত্যু

আসি আসি বলেও আসছিল না শীত। গেল ডিসেম্বরে হালকা শীতের সঙ্গে কিছুটা গরমও ছিল। কিন্তু গতকাল সোমবার দেশের ইতিহাসে শীত পড়ার সব রেকর্ড ভেঙে গেল। বলা যায়, শীতে জবুথবু সারা দেশ। গতকাল ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। এদিন তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর নীলফামারীতে ছিল ২.৯ ডিগ্রি। এর আগে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। সেদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই এবার ‘মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে’ প্রবাদও বদলে হয়ে যেতে পারেÑ‘পৌষের শীতে বাঘ কাঁপে।’ কাঁপন ধরানো শীতের মাত্রা তুলনামূলক বেশি উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয়। এদিকে শৈত্যপ্রবাহে নওগাঁ ও পাবনায় চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের ৪৩টি কেন্দ্রের মধ্যে নীলফামারীর সৈয়দপুরে গতকাল দেশের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ছিল তাপমাত্রা ২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই জেলার ডিমলায় ছিল ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৩, দিনাজপুরে তাপমাত্রা ছিল ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে রাজধানীসহ দেশের মধ্যাঞ্চলেও মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় গতকাল সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫, টাঙ্গাইলে ৬, গোপালগঞ্জে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া ময়মনসিংহে ৬ দশমিক ৫, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড ও বরিশালে তাপমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, হিমালয়ের পাদদেশ থেকে নেমে আসা শীতল বাতাসের কারণে দেশজুড়ে বিশেষ করে সিরাজগঞ্জ থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত অঞ্চল জুড়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ চলছে। এছাড়া মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে দেশের মধ্যাঞ্চলে অর্থাৎ ঢাকা, টাঙ্গাইল ও সিলেট অঞ্চলে। আর মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে খুলনার দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে শুরু করে বরিশাল, পটুয়াখালী, সীতাকুন্ড ও রাঙামাটি এলাকায়।

শৈত্যপ্রবাহ আরো কয়েক দিন থাকবে মন্তব্য করে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দীন আহমেদ বলেন, এশিয়ায় সাইবেরিয়া উচ্চ চাপ বলয়ের কারণে ১০ জানুয়ারির পর সারা দেশে সামগ্রিকভাবে তাপমাত্রা বাড়তে পারে।

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি জানান, সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ঠান্ডায় কাঁপল দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার মানুষ। এটি ৫০ বছর পর দেশে সর্বনিম্ন তাপামাত্রার নতুন রেকর্ড।

গত রোববার সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে তাপমাত্রা। রাতে বইতে থাকে হিমেল হাওয়ার সঙ্গে হাড়কাঁপানো শীত। শীতের তীব্রতায় জনশূন্য হয়ে যায় হাটবাজার ও শহর। কেউ কেউ যেখানে সেখানে খড়কুটো, টায়ারে আগুন লাগিয়ে ঠান্ডা শরীর গরম করার চেষ্টা করেন। রাতে অসহনীয় হয়ে ওঠে ঠান্ডা। গত কয়েক দিনের দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত মৃদু শৈত্যপ্রবাহ মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের উচ্চ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, সোমবার সকালে তেঁতুলিয়া সর্বনিম্ন ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ১৯৬৮ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আমলে এই অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপামাত্রা ছিল ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৫০ বছরের ইতিহাসে সোমবারের তাপমাত্রা ছিল সর্বনিম্ন।

এদিকে শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য গত রোববার রাতে পঞ্চগড়ে এসেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় তিনি সদর উপজেলার বিলুপ্ত গারাতি ছিটমহলে শীতবস্ত্র বিতরণ করবেন। পরে বোদা পাইলট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে শীতবস্ত্র বিতরণ শেষে ঠাকুরগাঁও যাবেন।

নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। তাপমাত্রা কমে নেমে এসেছে ২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গত রোববার ছিল ৬ ডিগ্রি। ঘর থেকে বের হতে না পারায় খাদ্য সংকটে পড়েছেন নি¤œ আয়ের মানুষ। এদিকে শীত নিবারণ করতে না পারায় কষ্টের যেন শেষ নেই তিস্তাপারের মানুষদের।

নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ দিলিপ কুমার রায় জানান, পর্যাপ্ত বেড না থাকায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং নিরাপদে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

জলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম জানান, এখন পর্যন্ত ৪২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে জেলার ছয় উপজেলায়। আরো ২০ হাজার চাওয়া হয়েছে।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, গত কয়েক দিনের ঘন কুয়াশা আর অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহে শীত জেঁকে বসেছে। দুপুর গড়িয়ে গেলেও সূর্যের দেখা মেলেনি। রয়েছে শীতবস্ত্রের তীব্র সংকট।

গত দুই-তিন দিনে লালমনিরহাট জেলার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে।

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আহসান হাবিব বাবু জানান, গত কয়েক দিনের শৈত্যপ্রবাহে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলায় একশ জনের মতো নারী-পুরুষ ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

বগুড়া প্রতিনিধি : বগুড়ার শহরতলিতে কুয়াশার বৃষ্টি। দূরের যাত্রীদের পরনের পোশাক ভিজে যাচ্ছে কুয়াশায়। গ্রামীণ জনপদের খেটে খাওয়া মানুষ শহরমুখী হচ্ছে না শীতের কারণে। হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নি¤œ আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।

বগুড়া আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, সোমবার বগুড়ায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ছিল ১৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে রোববার ছিল ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুল কাদের সবাইকে শীতজনিত রোগ থেকে সাবধান থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, কয়েক দিন ধরেই পড়ছে ঘন কুয়াশা। শৈত্যপ্রবাহ আর হাড়কাঁপানো শীত জেঁকে বসেছে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত দুদিনে তিনজন মারা গেছেন। গত রোববার রানীনগরে আবদুল জলিল নামে এক বৃদ্ধ, মহাদেবপুরে নীলমণি মহন্ত এবং মান্দায় মেছের আলী নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, শীতজনিত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত তিন দিনে দুই শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

বদলগাছি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল উদ্দীন জানান, সোমবার তাপমাত্রা কমে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। গত রোববার তাপমাত্রা ছিল ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নওগাঁ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা একেএম মান্নান বলেন, এ পর্যন্ত জেলা ৫৩ হাজার ৮২৮টি শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরো ৫০ হাজার শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

পাবনা প্রতিনিধি জানান, সাঁথিয়ায় ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। ঠান্ডজনিত রোগে গত রোববার রাতে আবু বক্কার নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। সন্ধ্যার পর ঘন কুয়াশায় সড়কগুলোতে ধীরগতিতে চালাতে হচ্ছে যানবাহন।

বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি জানান, তীব্র শীতের কারণে মানুষ ধরে রাখতে পারছে না জীবনযাত্রার স্বাভাবিক গতি। পাড়া-মহল্লায় সন্ধ্যাতেই নেমে আসে নিস্তব্ধতা।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী জানান, শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি শীতজনিত রোগে ভুগছে। এ সময় তাদের অধিক যতেœ রাখতে হবে।

রংপুর প্রতিনিধি জানান, শৈত্যপ্রবাহ আর কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পুরো রংপুর অঞ্চল। গত ৭ দিন থেকে এই অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪ দশমিক ৯ থেকে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়ারের মধ্যে ওঠানামা করছে। নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এদিকে, পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র জুটছে না শীতার্তদের। গরম কাপড়ের জন্য চলছে ছোটাছুটি।

আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আলী জানান, বাতাসের আর্দ্রতা কাছাকাছি হওয়ায় বায়ুমন্ডল উত্তপ্ত হতে না পারায় সূর্যের দেখা মিলছে না; তাই ঝরছে শীত। এই অবস্থা আরো চার-পাঁচ দিন থাকতে পারে।

রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, শীতের কারণে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক আশরাফুল আলম জানান, গতকাল সোমবার তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি। গত রোববারও একই অবস্থা ছিল।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ জানান, ৫২ হাজার ৫০০ পিস কম্বল উপজেলা পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে।

পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালী হাসপাতালে অ্যাজমা, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। জেলা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক কাজী কেরামত হোসেন জানান, তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শৈত্যপ্রবাহ আরো ৪-৫ দিন থাকবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist