ড. মো. হুমায়ুন কবীর

  ৩০ এপ্রিল, ২০১৯

মুক্তমত

হাওরে বোরো সংগ্রহে কৃষকের শঙ্কা

বাংলাদেশের একটি বিশেষ ধরনের অঞ্চল হলো হাওর। আর হাওরের একমাত্র ফসল হলো বোরো ধান। সেই ফসলটি যখন সে এলাকার কৃষকরা সঠিকভাবে ঘরে তুলতে পারেন না। তখন তারা নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার ভয়ে হতাশ ও শঙ্কিত হয়ে পড়েন। কারণ আমরা জানি, হাওর এলাকা বছরে সাত-আট মাস সময়েই পানির নিচে তলিয়ে থাকে। আর চার-পাঁচ মাস সময় মাত্র পানি একটু কম থাকে। সেসময়েই বোরো আবাদ করা হয়ে থাকে। তা ছাড়া বোরো ধান আবাদের মাধ্যমে তার ফসল ঘরে তোলার সময়েই বিপত্তি দেখা দেয়। কারণ সেসব অঞ্চলের বোরো ধান কাটার সময়েই নিয়মিত কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দেয়। তার মধ্যে রয়েছে আগাম বন্যা, রোগ-পোকামাকড়ের আক্রমণ, শিলাবৃষ্টি, ঝড়-বাদল ইত্যাদি।

ইতোমধ্যে এ বছর (২০১৯) হাওরে বোরা ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধান কাটার এ মৌসুমেই কৃষকদের মধ্যে এক ধরনের অজানা শঙ্কা ও হতাশা বিরাজ করছে। এর প্রধান প্রধান কারণগুলো ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু মূল কারণ হলো নিরাপদে ধানগুলো ঘরে তোলা। তা ছাড়া ধানে চিটা হয়ে যাওয়া, মারাত্মক ব্লাস্টরোগ মহামারি আকারে দেখা দেওয়ায় ফলন অনেক কমে যাওয়া অন্যতম। এতে কৃষক ধান আবাদের জন্য মহাজন কিংবা মজুদদারের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে হিমশিম খাবেন। অন্যদিকে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় না ওঠার আশঙ্কা। এ ছাড়া প্রতি বছর ভরা বোরো মৌসুমে কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার আশঙ্কা তো রয়েছেই।

একসময় বোরো আবাদের পুরোটা ছিল দেশি জাতের ধান দিয়ে। কিন্তু দেখা গেছে, দেশি জাতের এসব ধানের ফলন কম হওয়ায় তার পরিবর্তে আবাদ শুরু হয় আধুনিক ব্রি ও হাইব্রিড জাতের ধান। তবে অন্যান্য উচ্চফলনশীল (উফশী) ধান আবাদের মধ্যে বেশির ভাগই ব্রিধান২৮ জাতের। আর ব্রিধান২৮ জাতের ধান একদিকে যেমন উফশী; অন্যদিকে সেটি হাওর এলাকার জন্য উপযোগী। কারণ এ জাতের ধানের জীবনকাল অন্যান্য উফশী ধানের জাত হতে কম। সেজন্য হাওরের বেশির ভাগ এলাকায় বোরো মৌসুমে ব্রিধান২৮ জাতের আবাদের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।

কিন্তু ব্রিধান২৮ জাতের ধান মাঠপর্যায়ে আবাদের জন্য অনুমোদন পেয়েছে প্রায় ৩০ বছর আগে। একটি ফসল মাঠে যত বেশি দিন আবাদ হয়ে থাকে; সেটিতে রোগ পোকামাকড়ের আক্রমণ তত বেশি হয়ে থাকে। সেভাবে ফলনও কমতে থাকে। এবারে হাওরেও তাই হয়েছে। একদিকে মাঠে খরা থাকার কারণে সঠিক সময়ে কৃষক সেচ দিতে পারেনি, অন্যদিকে ব্রিধান২৮ জাতের ধানের আবাদের কারণে মাঠে ধানে চিটা হয়েছে বেশি এবং মারাত্মক ব্লাস্টরোগের আক্রমণ বেড়েছে, যার ফলে ফলন অনেক কম হচ্ছে। এতে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কৃষক আশঙ্কা ও হতাশায় পড়ছেন।

এটির সঠিক সমাধানও রয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা বলতে এখন আর কিছু নেই। সেটি সম্ভব হয়েছে সঠিক কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। উফশী জাতের

স্বল্পমেয়াদি জাতের ধান, গম, আলু, ডাল, তেল, সবজি ইত্যাদি ফসলের

নতুন নতুন জাত আবিষ্কার করে তা সেসব এলাকায় আবাদের ব্যবস্থাপনা করেই তার সমাধান সম্ভব হয়েছে। হাওরও যেহেতু বাংলাদেশের কৃষিতে বিশেষত ধান

উৎপাদনে একটি বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে; সেজন্য সেখানকার কৃষি ব্যবস্থাপনা নিয়েও এখন কাজ শুরু হয়েছে। ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে হাওর গবেষণা ইনস্টিটিউট নামে একটি বিশেষায়িত গবেষণা ও সম্প্রসারণ প্রতিষ্ঠান আত্মপ্রকাশ করেছে গত বছর।

তা ছাড়া বংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) প্রতিনিয়ত সারা দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য সময় ও স্থান উপযোগী বিভিন্ন ধানের জাত আবিষ্কার করছে। কাজেই যেহেতু এখন হাওরের আবাদে অধিক উপযোগী ব্রিধান২৮ চাষাবাদে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। কাজেই কৃষিবিজ্ঞানীদের পরামর্শ হলো, এখন সর্বশেষ আবিষ্কৃত ব্রিধান৮১ ধান সেসব এলাকা আবাদ করা যেতে পারে। আর সেসব অঞ্চলের কৃষকের মোটিভেশনের জন্য তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি সম্প্রসারণ কর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে। তাতে মঙ্গার মতো হাওরের সমস্যাকে দূর করা সম্ভব হবে। কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেই দেশ আরো অগ্রসর হবে।

লেখক : ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close