আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯

ব্রেক্সিট : থেরেসার পরাজয়ে হতাশ ইইউ নেতারা

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি নাকচ হয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। ২৭ দেশের জোট থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তারা এখন জরুরি পরিকল্পনা নিয়েই অগ্রসর হবেন বলে জানিয়েছেন। ব্রেক্সিট বিষয়ে লন্ডনের হাতে সময় খুব কম বলেও সতর্ক করেছেন তারা। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদের পথরেখার যে পরিকল্পনা থেরেসা মে পার্লামেন্টে উপস্থাপন করেছিলেন, ৬৫০ সদস্যের পার্লামেন্টে তা ৪৩২-২০২ ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। থেরেসার রক্ষণশীল দলের অনেকে বিপক্ষে ভোট দেন; লেবার পার্টি ও ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের এমপিরা তো ছিলেনই। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সামনে এখন দুটি পথ খোলা রয়েছে, একটি হল তিন দিনের মধ্যে পার্লামেন্টে নতুন আরেকটি চুক্তির খসড়া তোলা, অন্যটি হচ্ছে ইইউর দেওয়া চূড়ান্ত সময়সীমা ২৯ মার্চ থেকে আবার বাড়িয়ে নেওয়া। কোনোটাই না করতে পারলে ২৯ মার্চ এক রাতেই ইউরোপের ২৭টি দেশের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে পড়বে যুক্তরাজ্যের, যা দেশটির অর্থনীতি, কূটনীতি ও অভ্যন্তরীণ অন্যান্য বিষয়ে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা।

পার্লামেন্টে হারের পর থেরেসাকে অনাস্থা ভোটেরও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। মঙ্গলবার ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে ভোটাভুটির পরপরই বিরোধী লেবার পার্টির নেতা জেরমি করবিন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এ অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে মের প্রস্তাব নাকচ হওয়ার পরপরই ইইউর প্রধান নির্বাহী ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ব্রেক্সিট বিষয়ক মধ্যস্থতাকারী টুইটারে ‘চুক্তি ছাড়াই’ ২৯ মার্চ যুক্তরাজ্যের জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া ঠেকাতে কী কী করা যেতে পারে সেসব পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে লন্ডনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে একমাত্র বাস্তব সমাধান হচ্ছে যুক্তরাজ্যের ইইউতে ‘থেকে যাওয়া’। ভোটের পরপরই ইইউর এ শীর্ষ নেতা বলেন, যদি কোনো চুক্তি করা সম্ভবই না হয়, এবং কেউই চুক্তি ছাড়া বেরিয়ে যেতে না চান, তাহলে শেষ পর্যন্ত কে সাহস নিয়ে একমাত্র ইতিবাচক সমাধানের কথাটি তুলবেন? লন্ডন ও ব্রাসেলসের মধ্যে দুই বছর ধরে কষ্টকর মধ্যস্থতার দেখভাল ও পার্লামেন্টে ভোটের আগে থেরেসাকে আশ্বস্ত করা ইউরোপীয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদ জাঙ্কার ব্রেক্সিট নিয়ে শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধাতে পৌঁছাতে পরামর্শ দিয়েছেন। ভোটের পর এক বিবৃতিতি জাঙ্কার চুক্তি ছাড়াই বিশৃঙ্খল পথে যুক্তরাজ্যের ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে গেল বলে মন্তব্য করেছেন। এক্ষেত্রে ইউরোপীয় কমিশনও চুক্তি ছাড়াই অগ্রসর হওয়ার পরিকল্পনা এগিয়ে নেবে, বলেছেন তিনি।

ডিসেম্বরে থেরেসার সঙ্গে ব্রেক্সিট চুক্তিকে স্বাক্ষর করা ইউরোপের নেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীদের খাপ খাইয়ে নিতে একটি মধ্যবর্তী সময় রাখায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উত্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবটিই ছিল জোট থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে সঠিক উপায়। প্রস্তাবটি অনুমোদন না পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই হতাশাও ব্যক্ত করেছেন তারা।

অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ টুইটারে বলেছেন, লন্ডনে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ব্রেক্সিট ভোটের যে ফলাফল এসেছে, তাতে দুঃখ প্রকাশ করছি। কোনোভাবেই বিচ্ছেদ চুক্তি নিয়ে নতুন আলোচনার সুযোগ নেই। কোনো চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলে যুক্তরাজ্যই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

এখন যুক্তরাজ্য ব্রেক্সিট বিষয়ে কী করবে সে বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত জানাতে বলেছে আয়ারল্যান্ডের সরকার। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাজ্য অপ্রত্যাশিতভাবে ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে তা হবে ভয়ংকর সর্বনাশ।

থেরেসার পরাজয়ে বেলজিয়াম, ডেনমার্ক ও লুক্সেমবার্গের নেতারাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের হতাশা প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, চুক্তি ছাড়াই এখন ব্রেক্সিট সম্পন্নের পরিকল্পনা করছেন তারা। ব্রেক্সিট বিষয়ে ইইউ পার্লামেন্টের মধ্যস্থতাকারী গাই ভেরহফস্ট্যাড বলেছেন, ব্রিটিশ আইনপ্রণেতাদের এখন বলতে হবে, কী ধরনের চুক্তি তারা চায়।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট বলেছে তারা কী চায় না। এখন সময় হয়েছে এটা বের করার যে তারা কী চায়। এর মধ্যে অবশ্যই নাগরিক অধিকারকে সুরক্ষিত রাখতে হবে, বলেছেন সাবেক এ বেলজিয়ান প্রধানমন্ত্রী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close