প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৭ জুলাই, ২০১৭

এডিবির গবেষণা

জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ

আগামীতে ভয়ংকর জলবায়ু ঝুঁকিতে পড়বে বাংলাদেশ। ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এবং জার্মান সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত পটসড্যাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের যৌথভাবে করা এক গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ‘সর্বনাশা’ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এডিবির নিজস্ব গবেষণা, ইন্টারগভর্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) বিভিন্ন প্রতিবেদন, পরিসংখ্যান অধিদফতরসহ বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন তথ্যের বরাত দিয়ে এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনি ব্যবস্থা না নিলে জনবহুল বাংলাদেশে ভৌগোলিক কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হবে বিপুলসংখ্যক নিম্ন আয়ের মানুষ। ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই অঞ্চলের কৃষি। আর হাজার হাজার মানুষ রূপান্তরিত হবে জলবায়ু উদ্বাস্তুতে।

এডিবির সেই প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনকে বর্তমান বিশ্বের সবথেকে বড় সংকট উল্লেখ করে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ সেলসিয়াসের নিচে রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

‘অ্যা রিজিয়ন অ্যাট রিস্ক : দ্য হিউম্যান ডাইমেনশনস অব ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে পূর্ববর্তী বিভিন্ন গবেষণার সূত্রে বলা হয়, বর্তমান ধারায় জলবায়ু পরিবর্তন অব্যাহত থাকলে এশিয়া মহাদেশের প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভিন্ন দেশে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। আন্তরাষ্ট্রীয় ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর (আইপিসিসি) বরাত দিয়ে চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানের নিম্নাঞ্চলীয় এলাকার ১৩ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বন্যার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ার আশঙ্কা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঝড়-পরবর্তী বন্যার ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের সংখ্যা এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে চীন, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়া মাঝেমধ্যেই ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে ১২৩৭ জন মানুষ বাস করে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা ৪ সেন্টিগ্রেড বাড়লে ২০৮০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬২ সেন্টিমিটার বাড়বে। হারিয়ে যাবে উপকূলের ১৩ শতাংশ ভূমি। এখনকার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি জমি প্লাবিত হবে। আর ২০৩০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১৫ সেন্টিমিটার বাড়লে ৩ শতাংশ জমি হারিয়ে যাবে, প্লাবিত হবে ৬ শতাংশ বেশি ভূমি। আর ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যদি ২৭ সেন্টিমিটার বেড়ে যায়, তাহলে ভূমি হারাবে ৬ শতাংশ আর প্লাবন বাড়বে ১০ শতাংশ। উপকূলীয় ঝড়ের কারণে নদীতীরবর্তী মানুষদের একটা বড় অংশের উদ্বাস্তু হওয়ার ভীতি রয়েছে। এ শতকের শেষে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন সত্ত্বেও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৪০ সেন্টিমিটার বাড়তে পারে। এর সঙ্গে রয়েছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খরা। প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, যেকোনো সময়ের চেয়ে খরা এবং ফসলের ক্ষতি বাড়বে। গবেষকদের দাবি, জলবায়ুর পরিবর্তন অব্যাহত থাকলে এসব দেশের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বর্তমান সময়ের উন্নয়নমূলক অর্জন উল্টোদিকে মোড় নেবে এবং জীবনযাপনের মান হ্রাস পাবে।

বন্যার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘১৩৬টি বড় উপকূলীয় শহরের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন ২০০৫ সাল পর্যন্ত বছরে গড় বৈশ্বিক ক্ষতি ৬ বিলিয়ন ডলার। তা বেড়ে ২০৫০ সাল নাগাদ ৫২ বিলিয়ন ডলার হবে।’

বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত বা স্থানচ্যুত হওয়ার অন্য কারণগুলোর মধ্যে আছে-মাটি ও পানির লবণাক্ততা (বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্বে) এবং নদীর তীরের ক্ষয়। এর মধ্য দিয়ে লোকজনের জীবনযাত্রা ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়। মানুষের বসবাসের স্থানচ্যুতি ঘটার আরেকটি কারণ হলো বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমি ঝড়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ এসব ঝড়ের তীব্রতা আরো বাড়তে পারে। বাতাসের গতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে কেউ যাচ্ছে কাছাকাছি নগরে। কেউবা রাজধানী ঢাকায়। বেশির ভাগ কাছাকাছি শহরকে পছন্দ করে। দক্ষিণ-পশ্চিমের উদ্বাস্তুরা খুলনা, পূর্বাঞ্চলের উদ্বাস্তুরা চট্টগ্রাম, আর মধ্যাঞ্চলের উদ্বাস্তুরা ঢাকাকে বেছে নেন। ভারতকেও বাছছেন কেউ কেউ। একটা ছোট অংশ বেছে নিচ্ছেন মিয়ানমারকে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন তেমন একটা ঘটে না, ব্যয় আর ঝুঁকির কারণে। স্থানচ্যুতি বা শরণার্থী হওয়ার পেছনে বহু রকমের কারণ থাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং মানুষের স্থানচ্যুতির মধ্যে কার্যকারণগত প্রমাণসিদ্ধ সংযোগ বের করার সুযোগ সীমিত। তবে এ ধরনের সংযোগের প্রমাণ কম থাকার মানে এই নয় যে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দেশান্তর বলে কিছু নেই।

যদিও বন্যা-পরবর্তী স্থানচ্যুতি নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্র এখনো সীমিত, তার পরও অনেকের মতে বন্যা পরিস্থিতিতে পরিবারগুলো নিজেদের স্থানান্তরকে অভিযোজন কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে। কখনো পুরো পরিবারই স্থানান্তর হয়ে যায় কিংবা কতিপয় ব্যক্তি স্থানান্তরিত হয়।

এডিবির নলেজ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট বামবাং সুসানতোনো বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে মানবসভ্যতা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে, তার মধ্যে সম্ভবত বিশ্বের জলবায়ুজনিত সংকটটি সবচেয়ে বড়।’

পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামিয়ে আনার ওপর জোর দিয়েছেন পটসড্যাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ (পিআইকে)-এর পরিচালক প্রফেসর হ্যানস জোচিম। পিআইকের পরিচালক প্রফেসর হ্যানস জোচিম বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কাজ হলো উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নিয়ে আসা। তাছাড়া ব্যাপক বৈশ্বিক উন্নয়নের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের যে অংশটুকু অনিবার্য হয়ে পড়বে, তার সঙ্গে সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এশীয় দেশগুলোকে কৌশল খুঁজে বের করতে হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist