আমির হোসেন

  ১২ জুলাই, ২০১৮

না থেকেও আছেন আফ্রিকানরা

রাশিয়া বিশ্বকাপে আফ্রিকা থেকে অংশ নেয় মিসর, সেনেগাল, মরক্কো, তিউনিশিয়া ও নাইজেরিয়া। একটি দলও গ্রুপ পর্বের গন্ডি পেরুতে পারেনি। তাই বলে কী আফ্রিকান দর্শকদের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গিয়েছিল? মোটেই না। শেষ ষোলোতে টিকে থাকা ইউরোপের ১০টি দেশের অনেক দলের হয়েই খেলেন আফ্রিকান ও আফ্রিকান বংশোদ্ভূত পিতামাতার সন্তানরা। সেই সংখ্যাটা সবচেয়ে বেশি ফ্রান্স ও বেলজিয়াম দলে। আছে ইংল্যান্ড দলেও। ফ্রান্সের দলে আফ্রিকান কিংবা আফ্রিকান বংশোদ্ভূত (পিতা কিংবা মাতার) খেলোয়াড়ের সংখ্যা প্রায় এক ডজন। বেলজিয়াম দলে ৮ জন। ইংল্যান্ড দলে ২ জন।

ফ্রান্সের ২৩ সদস্যের বিশ্বকাপ দলে থাকা এমবাপ্পে (বাবা ক্যামেরুনের/মা আলজেরিয়ার), পল পগবা (বাবা-মা গিনির), স্টিভ মানদানা (কঙ্গো), ব্লাইস মাতুইদি (অ্যাঙ্গোলা/কঙ্গো), এনগোলো কান্তে (মালি), ওসমানে ডেম্বেলে (মা মৌরিতানিয়ার, বাবা মালির), নাবিল ফেকির (আলজেরিয়া), স্যামুয়েল উমতিতি (ক্যামেরুন), আদিল রামি (মরক্কো), বেঞ্জামিন মেন্ডি (সেনেগাল), জিব্রিল সিদিবি (সেনেগাল) ও প্রেসনেল কিম্পেম্বে (কঙ্গো) আফ্রিকান বংশোদ্ভূত।

অন্যদিকে বেলজিয়ামের ভিনসেন্ট কোম্পানি (বাবা কঙ্গোর), মারোয়ানি ফেলাইনি (বাবা-মা কঙ্গোর), রোমেলু লুকাকু (বাবা-মা কঙ্গোর এবং তারা বাবা কঙ্গো জাতীয় দলে খেলেছেন), মুসা ডেম্বেলে (বাবা মালির), ডেডরিক বয়াটা (বাবা কঙ্গোর জাতীয় দলে খেলেছেন), মিচি বাতসুয়ি (বাবা-মা কঙ্গোর), নাছের চাদলি (মরক্কান বংশোদ্ভূত, একবার মরক্কোর হয়ে প্রীতি ম্যাচও খেলেছেন), ইউরি তিয়েলেমান্স (মা কঙ্গোর)। ইংল্যান্ডের ডেলে আলির বাবা নাইজেরিয়ান।

অন্যদিকে ড্যানি ওয়েলবেকের বাবা-মা ঘানার। ফ্রান্স যদি শেষ পর্যন্ত এই দল নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতে তাহলে ইউরোপ ও অন্যান্য মহাদেশের ফুটবল খেলুড়ে দেশগুলো তাদের সমালোচনা করতেই পারে। ১২ জন আফ্রিকান বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের নিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে আসা ফ্রান্স তাদের খেলোয়াড়দের সোনালি প্রজন্ম হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে। যেটার সমালোচনা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

অবশ্য ইউরোপের দেশগুলোতে আফ্রিকান খেলোয়াড়দের সংখ্যাধিক্য নিয়ে প্রত্যেক দেশেই কম-বেশি সমালোচনা হচ্ছে। স্বদেশিরা বর্ণবাদমূলক মন্তব্য করছেন। আফ্রিকানদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন। আবার আফ্রিকান ফুটবলাররা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের ফলে সন্ত্রাসবাদ ও অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে। তাই আফ্রিকান ফুটবলারদের ইউরোপে অভিবাসী হওয়ার আইনে অনেক দেশই পরিবর্তন এনেছে এবং আনছে।

ইউরোপে আফ্রিকানদের ছড়িয়ে পড়ার জন্য অবশ্য ইউরোপের দেশগুলোই দায়ী। নব্বইর দশকের দিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ক্লাবগুলো আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে তাদের প্রতিনিধি নিয়োগ করে, একাডেমি স্থাপন করে। তাদের মাধ্যমে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ট্যালেন্টেড কিশোর ফুটবলারদের তারা ইউরোপে নিয়ে এসে নার্সিং করতে শুরু করে। এরপর তাদের বিভিন্ন লিগে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়। তারা নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে এক সময় শীর্ষ লিগগুলোতে স্থান করে নেয়। প্রতি বছর হাজার হাজার আফ্রিকান ফুটবলার পাড়ি জমাচ্ছে ইউরোপের দেশগুলোতে। অনেকে ইউরোপের দেশগুলোতে থেকে যাচ্ছে। তাদের সন্তানরাই এখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের হয়ে খেলছে। নিজেদের জাত চেনাচ্ছে।

তবে কেউ কেউ এটাকে নতুন দাস প্রথা হিসেবেও উল্লেখ করেছে। মানব পাচারের অন্যতম মাধ্যম হিসেবেও দেখছেন। ইউরোপের ক্লাবগুলোর এমন আগ্রহের সুযোগ নিয়ে দারিদ্র্যপীড়িত আফ্রিকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে বিভিন্ন একাডেমি। তারা ফুটবল খেলতে আগ্রহী ছেলেদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এরপর তাদের পাচার করে দিচ্ছে ইউরোপ ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। তাদের বিক্রি করে দিয়ে একটি চক্র মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সন্তানকে ফুটবলার বানানোর স্বপ্নে একদিকে যেমন টাকা-পয়সা দিয়ে পরিবারগুলো নিঃস্ব হচ্ছে, অন্যদিকে হারাচ্ছে তাদের প্রিয় সন্তানকে। প্রতি বছর এভাবে হাজার হাজার শিশু-কিশোর ফুটবলের নামে পাচার হয়ে যাচ্ছে আফ্রিকা থেকে। তারপরও ইউরোপে আলো ছড়ানো আফ্রিকান ফুটবলারদের দেখে বাবা-মায়েরা স্বপ্ন দেখেন তাদের ছেলেদেরও ফুটবলার বানাতে, ইউরোপে পাঠাতে। এ চক্র যেন ভাঙার নয়। হাজারে একজনের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। বাকিদের স্বপ্ন ভাঙছে। কেউ কেউ সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist