প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২১ জুন, ২০১৮

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দেরি হলে কী করবে বাংলাদেশ

বিশ্বের যেসব দেশে বিপুল সংখ্যায় শরণার্থী অবস্থান করছে বাংলাদেশ তার একটি। বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছেন। প্রশ্ন উঠেছে এত সংখ্যাক শরণার্থীর জন্য আন্তর্জাতিক যেসব সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে সেটি আসলে কতদিন পাওয়া যাবে? তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কাজে দেরি হলে পরিস্থিতি কেমন হতে পারে? বাংলাদেশের অর্থনীতি কি পারবে সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে? এই প্রশ্নে বিবিসি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের অগাস্ট মাসে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় ¯্রােত এসেছিল বাংলাদেশে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে প্রাণ বাঁচাতে ওই দফায় বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল সাত লাখেরও বেশি শরণার্থী। আগে থেকেই ছিল আরো চার লাখ। সবমিলিয়ে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এখন প্রায় ১১ লাখ।

বাংলাদেশের শরণার্থী প্রত্যাবাসনবিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বিবিসিকে বলেছেন, এসব শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা মিললেও বাংলাদেশকেও ব্যয় করতে হচ্ছে প্রচুর অর্থ। তিনি বলেন, ‘প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের মতো সহায়তা এসেছে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে। তা দিয়েই আসলে প্রথম ছয় মাস পার হয়ে গেছে। এর বাইরে জিআরপি বা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে বাংলাদেশকে ৯৫১ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। সেখান থেকে ২০ ভাগ সহায়তা পাওয়া গেছে। আরো কিছু অর্থ পাইপলাইনে আছে।’

বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, এই হিসেবের বাইরেও রোহিঙ্গাদের পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে সরকার। কক্সবাজার ও টেকনাফের শরণার্থী শিবির থেকে তাদের যে ধীরে ধীরে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে, তার জন্যে বরাদ্দ করা হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা।

আবুল কালাম অবশ্য বলছেন, শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোই মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশের। সেজন্য জোর তৎপরতাও চালানো হচ্ছে। এদিকে, প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হলে কী হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন গবেষক ও অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সাহায্য সহযোগিতার কিছুটা হয়তো অব্যাহত থাকবে আগামী কয়েক বছর। বিশেষ করে উন্নয়ন সহযোগীদের মাধ্যমে কিছু সাহায্য আসবে। কিন্তু বেশি আসে সাময়িক সহায়তা। এটা কিন্তু অব্যাহত থাকে না।’

‘বিশ্বের অন্যান্য যেসব শরণার্থীরা অবস্থান করছে সেসব দেশেও এ ধরনের পরিস্থিতি দেখা গেছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাদের জন্য খাদ্য থেকে শুরু করে সবই লাগবে’ বলেন তিনি।

নাজনীন আহমেদ বলছেন খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশকেও বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে।

তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি ও অ্যানভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মুহাম্মদ দানেশ মিয়া বলছেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট আরো বড় ধরনের বিপর্যয় নিয়ে এসেছে। কক্সবাজার অঞ্চলের কৃষি, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এই মানবিক ভূমিকার মূল্য দিতে হচ্ছে বন ও পরিবেশ ধ্বংস করে। কৃষি ধ্বংস হচ্ছে। স্থানীয়দের আয় রোজগারে বড় সমস্যা তৈরি করছে। পরিবেশ ও অর্থনীতি নিয়ে তৈরি হয়েছে ভয়ানক পরিস্থিতি।’

এরকম পরিস্থিতিতে প্রায়শই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নানা প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসছেন। চলতি মাসের শেষে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শফিকুল আজম বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাংক সাহায্য দিতে চেয়েছে। তারা অনুদান দিতে রাজী হয়েছে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের মতো। প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্য খাতে ৫০ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা শেষ হয়েছে। রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ ও আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণসহ অন্য ক্ষেত্রে আরো প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার দেবে। এগিয়ে আসছে এডিবিও। এবার বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট আসবেন জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে। এখানে নতুন করে সহায়তা চাইবার কিছু নেই।’

কিন্তু অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলছেন, ‘আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে যে কোন বাণিজ্য চুক্তির সময় রোহিঙ্গা ইস্যুকে কাজে লাগালে ক্ষতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করতে পারে বাংলাদেশ।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist