মেহেরপুর প্রতিনিধি

  ২৫ এপ্রিল, ২০১৮

আর্সেনিক দূরীকরণে আশার আলো মোমিনুলের ফিল্টার

মেহেরপুর জেলা শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরের উজলপুর গ্রাম। গ্রামটিতে নিরাপদ পানি ছিল দুষ্প্রাপ্য। কারণ অধিকাংশ বাড়ির টিউবওয়েলে রয়েছে আয়রণ ও আর্সেনিক। গ্রামের চার রাস্তার মোড়ে সেভ দি চিলড্রেনের বসানো আর্সেনিক রিমুভ্যাল প্লান্ট স্থাপন করেছে। অর্থের বিনিময়ে সেখান থেকে পানি কিনতে হয়। বাধ্য হয়ে গ্রামের দুস্থরা প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কৃষি ব্যাংক পাড়া থেকে পানি সংগ্রহ করেন। মানুষের এই ভোগান্তি দূর করতে ওই গ্রামেরই যুবক মোমিনুল ইসলাম আবিষ্কার করেছেন আর্সেনিক দূরীকরণের পানির ফিল্টার। মোমিনুল দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নকাল থেকেই এই ফিল্টার তৈরির কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে স্নাতকোত্তর পর্ব শেষ করে শুরু হয় তার ফিল্টার তৈরির নতুন পথচলা।

মোমিনুল ইসলাম জানান, ফিল্টারের প্রটোটাইপটি তৈরি করতে একটি টিনের ড্রাম ব্যবহার করা হয়েছে। ড্রামের মাঝখানে একটি ফিল্টার বসানো হয়েছে। তবে এতে বিদ্যুৎ ও কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়নি। ফিল্টারের মধ্যে বালি ও কাঠ কয়লা নির্দিষ্ট পরিমাণে ব্যবহার করা হয়েছে। ফিল্টারেশনের কারণে পানিতে যে ময়লা জমা হয় তা একটি পাইপের মাধ্যমে ওপর দিয়ে বের হয়ে ডাস্ট পটে জমা হয়। তার পাশেই রয়েছে নিরাপদ পানি বের হওয়ার পাইপ। যার মাথাই দুটি সুইচ। যা দিয়ে পানির প্রবাহ বাড়ানো কমানো যায়। একটি বড় পরিবারের রান্না ও খাবার পানির পরিপূর্ণ চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম ফিল্টারটি। ফিল্টারটি কখনোই বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা নেই। আর কখনো বন্ধ হলেও ১০ মিনিটের মধ্যে ফিল্টারটি যে কেউ পরিষ্কার করতে পারবেন। পানি শেষ হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে টিউন সিগন্যাল দেবে ফিল্টারটি।

মোমিনুল ইসলাম আরো জানান, আর্সেনিকের পাশাপাশি আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, টারবেডিটি, রং, দুর্গন্ধসহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান ও ব্যাক্টেরিয়া দূর করতে সক্ষম তার আবিষ্কৃত ফিল্টারটি। সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা পেলে ফিল্টারটি জনসাধারণের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্যাটেন্ট অধিদফতরে আবেদন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ আবেদনের জন্য অর্থ সহযোগিতা করেছেন। প্যাটেন্টটি অনুমোদন হলে যেকোনো কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে এটি বাজারজাত করা সম্ভব হবে।

ঝিনাইদহ জেলার আঞ্চলিক পানি গবেষণাগারে উদ্ভাবিত ফিল্টার ও প্রতিবেশীদের পানির পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, প্রতিবেশীর নলকূপের পানিতে প্রতি লিটারে আর্সেনিকের মাত্রা ০.৩৯৬ মিলিগ্রাম, আয়রন ১৩.০৬ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ১.০২ মিলি গ্রাম পাওয়া যায়। অথচ ফিল্টার করার পরে ওই পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা ০.০৬৯ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৭৪ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ০.০৫ মিলি গ্রাম পাওয়া যায়। পরবর্তীতে প্রটোটাইপটি কিছুটা উন্নত করা হলে ওই আর্সেনিকের মাত্রা ০.৩৯৬ থেকে ০.০০৯ মিলিগ্রাম, আয়রন ১৩.০৬ থেকে ০.০০ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়। কিছুদিন পর অন্য প্রতিবেশী মো. মোস্তাকিন শাহের নলকূপের পানি ও উক্ত পানি ফিল্টার করে পরীক্ষা করা হয়। এতে আর্সেনিকের মাত্রা আসে ০.১৮১ মিলিগ্রাম থেকে ০.০০৭ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়। মোমিনুলের এই ফিল্টার ২৪ ঘণ্টায় ৯০ লিটার পানি দূষণমুক্ত করতে পারে।

মোমিনুলের প্রতিবেশী আবদুর রশিদ জানান, সারা দিন ফিল্টার নিয়ে পড়ে থাকে মোমিনুল। কয়েকটি চাকরি করেও সে ছেড়ে দিয়েছে। এলাকায় সকলে তাকে পাগল বলে ডাকে। তবে তার ফিল্টারটি যাতে মানুষের উপকারে আসে।

মোমিনুলের পরিচয় : মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর শাহজী পাড়ার মৃত লুৎফর রহমানের বড় ছেলে মোমিনুল ইসলাম। ২০০৫ সালে এসএসসি, ২০০৭ সালে এইচএসসি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয় নিয়ে সম্মান (অনার্স) এবং ২০১৩ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

মেহেরপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল গফফার মোল্লা জানান, উদ্ভাবনটি দেখার পর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করব। মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক বলেন, ইতোমধ্যে তার ফিল্টার নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। ফিল্টারটি বাজারজাত করতে তার কিছু অর্থ সহযোগিতা লাগবে। ফিল্টারটি বাজারজাতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist