বদরুল আলম মজুমদার

  ২৯ জুন, ২০১৯

অলির মুক্তি মঞ্চের পেছনে জামায়াত

বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নতুন জোট ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’-এর পেছনের নাটাই জামায়াতের হাতে। এ নিয়ে এলডিপির নেতারা কোনো ধরনের রাগটাগ না রেখেই তা স্বীকার করে নিচ্ছেন। জোটের প্রধান দল বিএনপি ২০-দলীয় জোটকে নিষ্ক্রিয় রাখার পাল্টা কৌশল হিসেবে জোটের ভেতর এ নতুন জোট।

এলডিপি, জামায়াত ও জামায়াত সমর্থনপুষ্ট কয়েকটি ছোট দল নিয়ে এ জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিকল্প হিসেবে দাঁড়াতে চায়। এজন্য ড. কামালের ঐক্যফ্রন্টবিরোধী বিএনপির অধিকাংশ নেতাকে তারা সঙ্গে চান। ধারণা করা হচ্ছে, নবগঠিত এ জোট থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে জোরালোভাবেই মাঠে নামার চিন্তা আছে। তবে নতুন এ জোট নিয়ে বিএনপি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

তবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে গতকাল শুক্রবার বলেছেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে যারাই রাজপথে নামবেন, তাদেরকে স্বাগত জানাব। সূত্র জানায়, বিএনপির কট্টরধারার নেতারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও দলের মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর বেশ ক্ষুব্ধ। এ অংশের নেতারা এখনো প্রকাশ্যে অলির সমর্থনে কথা না বললেও মহাসচিবকে কোণঠাসা করতে সহসাই সরব হতে পারেন।

এ নিয়ে জামায়াত ও অলির সঙ্গে এ অংশটির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ দলের সবাই কম-বেশি জানে। এ অংশের নেতারা ইতিপূর্বে অলিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে নিয়ে আসার জন্য বেশ উঠে পড়ে লেগেছিলেন। অলির এলডিপিকে বিএনপির সঙ্গে একীভূত করার চিন্তায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও পজেটিভ ছিলেন। কিন্তু দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ায় এ আলোচনা একেবারে থমকে যায়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অলির অতীত কর্মকান্ডের জন্য তাকে আর বিএনপিতে ফিরিয়ে নেওয়ার পক্ষে ছিলেন না। তাছাড়া বিএনপির উদার অংশের নেতারা অলিকে পুনরায় বিএনপিতে পুনর্বাসন করাতে চান না।

অন্যদিকে জামায়াতের একটি সূত্র জানায়, বিএনপি জোটে জামায়াতের গুরুত্ব কমে যাওয়া এবং দলটি থেকে কয়েকজন নেতা বের হয়ে নতুন দলের উদ্যোগ গ্রহণ করায় নির্বাচন পরবর্তী সময়ে জামায়াত আরো বাড়তি চাপে পড়ে। এ অবস্থা থেকে বের হতে হলে দলটির প্রকাশ্যে কর্মসূচিতে আসার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। কেননা দলটির তৃণমূল নেতারা মজিবুর রহমান মঞ্জুর ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’কে জামায়াতেরই একটি উদ্যোগ হিসেবে মনে করছিলেন। এ অবস্থায় দলের মধ্যম সারির নেতারা মঞ্জুর সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকেও মিলিত হচ্ছেন হরহামেশাই; যা জামায়াতকে ভাবনায় ফেলে দেয়।

সূত্র আরো জানায়, ব্যারিস্টার রাজ্জাক ও মঞ্জু দল থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর সংকটকালীন সময় অতিক্রম করছে জামায়াত। এ অবস্থা থেকে বের হতে অলিকে সামনে আনে দলটি। অলির এ উদ্যোগের পেছনে জামায়াত যে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে, তা গোপনও করেননি এলডিপির সভাপতি। জামায়াতের পক্ষে প্রকাশ্যে এমন অবস্থান জামায়াতের কৌশলেই হয়েছে। প্রকাশ্য সভায় জামায়াতের প্রশংসা করে অলি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা জামায়াতের নিষ্ক্রিয়তা ভেঙে মাঠে আসার একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে। অলির এমন প্রকাশ্যে ঘোষণার মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে জামায়াতের তৃণমূলে একটি বার্তা দেওয়া।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, আসলে দল থেকে দুই নেতা বের হয়ে যাওয়ায় ইমেজ সংকটে পড়ে জামায়াত। আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে দলত্যাগের বিষয়টি একবারেই ‘রেয়ার’। মুক্তিযুদ্ধের বিতর্কিত ভূমিকার প্রশ্ন তোলায় আরো বেকায়দায় পড়ে দল। এ অবস্থায় মধ্যম সারির অনেক নেতাই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে মঞ্জুর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। অনেকে সেই উদ্যোগকে জামায়াতের গোপন কৌশল ভেবে ভুলও করছেন। তাই দলকে সংগঠিত করার প্রয়াস থেকেই অলির উদ্যোগের সঙ্গে সক্রিয় হওয়ার চিন্তা করছে জামায়াত। যদিও এ আলোচনা এখনো চূড়ান্তরূপ পায়নি।

এর বাইরে এলডিপি সূত্রেও জানা গেছে, নতুন এ উদ্যোগের পেছন থেকে সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে জামায়াত। তবে কৌশলগত কারণে তাদের কোনো শীর্ষনেতা সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চে উপস্থিত হননি। কিন্তু দর্শক সারিতে যাদের দেখা গেছে, তাদের অনেকেই জামায়াতের কর্মী-সমর্থক। আর খেলাফত মজলিসের মহাসচিব শিবিরের সাবেক সভাপতি ড. আহমেদ আব্দুল কাদের নিজে না এসে একজন প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রণাঙ্গনে নিজের ভূমিকার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সখ্যর কথা তুলে ধরে নিজেকে তার ছায়াসঙ্গী হিসেবে উল্লেখ করেন অলি আহমদ।

তিনি বলেন, ১৯৭৯ সালে নভেম্বর মাসে জিয়াউর রহমানের অনুরোধে ১৩ বছর চাকরি অবশিষ্ট থাকা অবস্থায় স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করি এবং ১৯৮০ সালে এমপি নির্বাচিত হই। ১৯৮১ সালের পর থেকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সব সময় খালেদা জিয়ার পাশে ছিলাম। সেই নেত্রী আজ কারাগারে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে হবে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়া যদি মুক্ত হন, একনায়কতন্ত্র থেকে যদি দেশ মুক্ত হয়।

‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘আশা করি, জাতীয়তাবাদী সব শক্তি আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতিকে মুক্ত করার জন্য এগিয়ে আসবেন। বিশেষভাবে গণতন্ত্রপ্রেমী ও বাংলাদেশপ্রেমী সব রাজনৈতিক দল, সব নাগরিক, সামাজিক সংগঠন, প্রবীণ ও তরুণরা আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন।’

বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে বলেই কি আপনি নতুন প্ল্যাটফরম দাঁড় করতে চাচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কে ব্যর্থ হয়েছেন আর কে সফল হয়েছেন, সে বিষয়টি নিয়ে আজ কোনো কথা হবে না। আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছি।’

জামায়াতের বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা দেশকে ভালোবাসেন এবং তারা দেশপ্রেমিক। ১৯৭১ সালের জামায়াত আর ২০১৯ সালের জামায়াত এক নয়। দেশকে তারা অনেক ভালোবাসে, তাদের মধ্যে অনেক সংশোধনী এসেছে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ,জাতীয় মুক্তি মঞ্চ,জামায়াত,বিএনপি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close