‘বিএনপি আওয়ামী লীগের ওপর ‘ব্লেম গেম’ শুরু করেছে’
নির্বাচনে সাড়া না পেয়ে বিএনপি আওয়ামী লীগের ওপর ‘ব্লেম গেম’ শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। রাজশাহীতে বিএনপির নির্বাচনি মিছিলে বোমা হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘তাদের নিজেদের ভাষ্যে বোমা হামলার বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে। আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করার জন্য তারা নিজেরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। নিজেরাই ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের ওপর দোষারোপ করে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রচার করছে। নাটক করে তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়।’
সোমবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদের শুরুতে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে সন্ধ্য ৬টায় এ সভা শুরু হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চলছে। এর মধ্যে হঠাৎ দেখা গেলো রাজশাহীতে তাদের (বিএনপি) নির্বাচনি মিছিলে বোমা হামলা। তাদের মিছিলে তিনটি ককটেল ফুটলো। সঙ্গে সঙ্গে আমরা নির্দেশ দিলাম, কারা এর সঙ্গে জড়িত খুঁজে বের করতে। বললাম, এর সঙ্গে জড়িত যেই হোক বা যে দলের হোক তাকে ধরতে হবে। কারণ, আমরা এটা চাই না। আমরা চাই সবাই শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনি প্রচার চালাবে। তারা আমাদের ওপর দোষ দিলো। কিন্তু পরে দেখা গেলো, তাদের নিজেদের ভাষায় বেরিয়ে এলো— তারা নিজেরা এটা করেছে আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি) যখন নির্বাচনে জনগণের কাছে সাড়া পাচ্ছে না তখন এই ব্লেম গেম শুরু করলো এবং হাতেনাতে ধরা পড়লো। তারাই হত্যাকাণ্ড ঘটায় আবার তারাই প্রচার করে। তারা নাটক করায় যথেষ্ট পারদর্শী।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে নানা রকম খেলাও শুরু হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরা নীতি-আর্দশ নিয়ে দেশকে যেভাবে গড়ে তুলছি, উন্নয়ন করছি, তা অব্যাহত থাকলে মানুষ ভালো থাকবে। আর মানুষ যেন ভালো থাকে সেটাই আমরা চাই। আমরা উন্নয়ন করেছি। এই উন্নয়নের ছোঁয়া সাধারণ মানুষের ঘরে পৌঁছে গেছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘উনি জেলাখানায় খান-দান, বহাল তবিয়াতে থাকেন। বেশ আরাম-আয়েশ করে থাকেন। সমানে লোকজন গিয়ে দেখা করেন। খোঁজ-খবর তো আমরা রাখি। তাকে মেইড সার্ভেন্ট দেওয়া হয়েছে। স্পেশাল খাট, স্পেশাল গদি— কোনোকিছুই তো কম দেওয়া হয়নি; এয়ারকন্ডিশন— সব কিছুরই ব্যবস্থা রয়েছে তার জেলখানায়। যা যা চাচ্ছেন, তাই পাচ্ছেন। এ রকম আয়েশ করে আর কেউ তো পায়েস খেতে পারেননি, যেটা উনি খাচ্ছেন। কিন্তু যেই কোর্টের তারিখ আসে তখনই অসুস্থ হন। জানে, কোর্টে গেলে ধরা খাবে— এজন্য কোর্ট আসলেই অসুস্থ। কোর্টের তারিখ চলে যাওয়ার পর ভালো থাকেন।’
খালেদা জিয়ার এই অসুস্থতাকে প্রধানমন্ত্রী আরেকটি ‘নাটক’ বলে আখ্যায়িত করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘অসুস্থ তো উনি (খালেদা জিয়া) আগাগোড়াই। তার হাঁটুর অপারেশন করানো হয়েছে। দুবার অপারেশন করা হয়েছে। রিপ্লেস করা হয়েছে। এই সমস্যাগুলি তো তার আছেই। কিন্তু ওই অবস্থায় তো তিনি মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেন। থামেন তো নাই। পুড়িয়ে মারা, অত্যাচার করা, আমাদের ওপর অত্যাচার করা; তাদের বোমায় তো গরু-মুরগিও রেহাই পায়নি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতি করে এতিমের টাকা চুরি করেছেন। এই টাকা মেরেই তো তিনি জেলে। জেলে তো আমরা তাকে দেয়নি। কাজেই আমাদের কাছে মুক্তির আন্দোলন করে তো লাভ নেই। আমরা ইচ্ছা করলেও তো ছাড়তে পারবো না, যতক্ষণ কোর্ট অর্ডার না দেবেন। ১০/১১ বছর মামলা চলে সেই মামলার রায়ে খালেদা জিয়া জেলে গেলেন। তার বাঘা বাঘা আইনজীবীরা তো প্রমাণ করতে পারলেন না যে এই টাকা খালেদা জিয়া বা তার পরিবারের কেউ নেননি।’
বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখনই বাঙালি জাতি মর্যাদা পায় তখনই বিএনপির মাথা খারাপ হয়। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে দেখেই তাদের অন্তর্জ্বালা শুরু হয়ে গেছে। কারণ, যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে তাদের ঘর-সংসার। তাদের নিয়ে তাদের দল, তাদের নিয়ে ক্ষমতা। স্বাভাবিকভাবেই তাদের দেশের উন্নয়ন ভালো লাগবে না। সবকিছুতেই তারা খারাপ দেখবে।’
আগামী নির্বাচন উপলক্ষে দলের ইশতেহার প্রণয়নের উদ্যোগের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের জন্য আমাদের ইশতেহার প্রস্তুত করতে হবে। এই বৈঠকে আমরা ইশতেহার প্রস্তুতের জন্য একটি কমিটি করে দিতে পারি। ২০১৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে কী কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা কতটা বাস্তবায়ন করেছি— তার হিসাবও নিতে হবে। তবে এইটুকু বলতে পারি যে আমরা প্রতিশ্রুতির থেকে বেশি কাজ করতে পেরেছি।’
পিডিএসও/রিহাব