হাসান ইমন

  ১৬ এপ্রিল, ২০১৯

জলাবদ্ধতা মোকাবিলায় প্রস্তুত সেবাদাতা সংস্থাগুলো

আসন্ন বর্ষা মৌসুমে রাজধানীতে জলজট মোকাবিলায় প্রস্তুত সেবাদাতা সংস্থাগুলো। এরইমধ্যে ওয়াটার অ্যান্ড সুয়ারেজ অথোরিটি (ঢাকা ওয়াসা) এবার ১৫টি খালের ২০ কিলোমিটার ও ৩০০ কিলোমিটার স্টর্ম ওয়াটার পাইপ ড্রেন পরিষ্কার করছে। এছাড়া চারটি স্থায়ী ও ১৫টি অস্থায়ী পাম্পের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি অপসারণ করা যায় এমন পরিকল্পনাও রয়েছে সংস্থাটির।

এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ড্রেনগুলো পরিষ্কার করছে। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, ওয়াসাকে পানি নিষ্কাশনের জন্য পাম্পের সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। তা না হলে এবারও নগরীতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা থেকেই যাবে।

তবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম অবশ্য নগরবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, রাজধানীতে বেশকিছু মেগা প্রকল্পের কাজ এবং নর্দমা সংস্কার ও তৈরির কাজ চলমান থাকায় সাময়িকভাবে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। এসব প্রকল্প সম্পন্ন হলে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার সমাধান হবে। এছাড়া দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয়ের জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওয়াসাকে। এই মৌসুমে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে জলাবদ্ধতা কম হবে বলেও জানিয়েছেন এই মন্ত্রী।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আরো বলেন, সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার জন্য দুই সিটি করপোরেশন ও ওয়াসাকে নিয়ে সভা করেছি। সভায় বেশকিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্পমেয়াদি কাজগুলো সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা শুরু করেছে। খাল খনন, সংস্কার ও উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লাগবে কিছুটা। তবে এবার জলাবদ্ধতা কম হবে বলে আশাবাদী আমি।

ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ বিভাগের সূত্র মতে, ফেব্রুয়ারি থেকে আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতা রোধের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু ভারী বৃষ্টি হলে মতিঝিল ও আশপাশে এবং মৌচাক ও আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে বিশাল জায়গাজুড়ে জলাধার ছিল। বৃষ্টির পানি সেখানে গিয়ে জমা হতো। পরে বিভিন্ন খাল দিয়ে সেই পানি পৌঁছাত বালু নদে। এখন এসব খাল ভরাট ও দখল হয়ে গেছে। পরিষ্কার করলেও অল্প ?দিনেই আবার আবর্জনায় ভরে যায়। ফলে ভারী বৃষ্টির পানি বিভিন্ন সড়কেই আটকে থাকে।

আরো জানা যায়, গত বছর ১৭টি খালে মোট ৩০ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হয়েছে। এ বছর ১৫টি খালের ২০ কিলোমিটার পুনঃখনন করার কাজ চলছে। এছাড়া স্ট্রর্ম ওয়াটার পাইপ ড্রেন ৩০০ কিলোমিটারের পরিষ্কারের কাজ চলছে। ২৪৯ কিলোমিটার ড্রেন পরিষ্কার করা হয়েছে। এ বছর সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্টের ১০ হাজার ঘনমিটার ময়লা পরিষ্কার করার কাজ চলছে। যা গত বছর ১৪ হাজার ৩০০ ঘনমিটার ময়লা পরিষ্কার করেছে সংস্থাটি। ভারী বৃষ্টিপাত হলে চারটি স্থায়ী ও ১৫টি অস্থায়ী পাম্পের মাধ্যমে পানি অপসারণ করা হবে।

এ বিষয়ে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, আসন্ন বর্ষা মওসুমে রাজধানীতে যাতে জলাবদ্ধতা না হয়, সে জন্য গত বছর ১৭টি খালের ৩০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করে ২ লাখ ৬২ হাজার ঘনমিটার মাটি অপসারণ করা হয়েছে যা প্রায় ২৫ হাজার ট্রাকের সমপরিমাণ। এতে খালের গভীরতা বেড়ে পানির ধারণক্ষমতা বেড়েছে। পানি যাতে দ্রুত ড্রেন দিয়ে চলে যেতে পারে এ জন্য ৩০০ কিলোমিটার স্ট্রর্ম ওয়াটার পাইপ পরিষ্কার করা হয়েছে। রাস্তার পানি যাতে দ্রুত পাইপ ড্রেনে প্রবেশ করতে পারে এ জন্য ৭০০টি ক্যাচপিট পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। কাজেই এবার জলাবদ্ধতা অনেকটা লাঘব হবে।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শান্তিনগর ও নাজিম উদ্দিন রোডে বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে চওড়া ড্রেন তৈরি করায় সেখানে জলাবদ্ধতা কমেছে। তবে সামগ্রিকভাবে ঢাকার বেশির ভাগ এলাকাতেই এখনো সুপরিকল্পিত ড্রেন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এখনো আরো অনেক কাজ করতে হবে। আর যেসব এলাকায় ড্রেন আছে তাও প্রয়োজনের তুলনায় কম। তবে আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতা নিরসনে নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কারের কাজ চলছে। ডিএসসিসি এলাকার ২৯২ কিলোমিটার ড্রেন পরিষ্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চলতি এপ্রিল মাসের শেষ নাগাদ পরিষ্কার কাজে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা যাবে। ফলে আগের তুলনায় জলাবদ্ধতা কিছুটা কম হবে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, মতিঝিল, পল্টন, প্রেস ক্লাব, সেগুনবাগিচা ও ফকিরাপুল এলাকার পানি যাওয়ার একটিই পথ (আউটলেট) আছে জনপদে। সেখানে ওয়াসার তিনটি পাম্প আছে। এগুলোর পানি টানার সার্বিক ক্ষমতা প্রতি ঘণ্টায় ৫৪ হাজার কিউবিক মিটার, কিন্তু প্রয়োজন ১ লাখ কিউবিক মিটারের বেশি। ফলে ৬০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে মতিঝিলসহ আশপাশের পুরো এলাকায় জলাবদ্ধতা হবেই। তবে এখানে পাম্পের সংখ্যা দ্বিগুণ করলে জলজট কম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এ কর্মকর্তা আরো বলেন, ডিএসসিসি এলাকায় পাইপলাইন ও ভূউপরিস্থ মিলে প্রায় যে ১ হাজার কিলোমিটার নর্দমা রয়েছে, তা নিয়মিত পরিষ্কার রাখা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে কে কাজ করবে, কে করবে না, কোত্থেকে বাজেট পাব, সেগুলো দেখব না। জলাবদ্ধতা নিরসনে যতটুকু করার তার সর্বোচ্চ করার চেষ্টা করব। তিনি বলেন, এরইমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরু করব। যেসব ড্রেন দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে না, সেগুলো পরিষ্কার করা হবে। খালগুলো ভরাট হয়ে আছে সে কারণে অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তা ডুবে যাচ্ছে। সেগুলো উদ্ধারে আমরা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কাজ করছি। পাশাপাশি ওয়াসাকে অনুরোধ করব তারা যেন জনগণকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে কাজ করে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জলাবদ্ধতা,সেবাদাতা সংস্থা,রাজধানী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close