গাজী শাহনেওয়াজ

  ০২ জানুয়ারি, ২০১৯

নতুন সরকার আগামী সপ্তাহে

এমপিদের শপথ কাল, অধিবেশন চলতি মাসেই

আবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে সার্বভৌম সংসদ। নতুন এমপিদের পদচারণে মুখর হবে সংসদ ভবন ও আশপাশের চত্বর। গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়। নতুন এমপিদের বরণ এবং শপথের আয়োজনে গত কয়েক দিনের ব্যস্ততা শেষ করে এনেছে সংসদ সচিবালয়। সব ধরনের প্রস্তুতি শেষে এখন নতুন এমপিদের শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনের অপেক্ষায় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবাই। এদিকে নতুন সরকার শপথ নেবে ১০ জানুয়ারির মধ্যে।

সংসদ সচিবালয় সূত্র বলছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শপথ অনুষ্ঠিত হবে; সংসদ ভবনের নিচতলায় শপথ কক্ষে। আর নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে, বুধবারের মধ্যেই গেজেট জারি করে তা সংসদ সচিবালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার শপথ নিলেও ২৮ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নবনির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করবেন।

সংসদ সচিবালয়ের সচিব বলেন, আগামী ৩ জানুয়ারি নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গুছিয়ে আনা হয়েছে। স্পিকারের পরামর্শে পুরো আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে। তবে সবাই আগে নির্বাচিতদের গেজেট হাতে এসে পৌঁছানো দরকার। আর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জানিয়েছেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের বিজয়ীদের শপথ ৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, নাম, ঠিকানাসহ নির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবারের মধ্যে সম্ভব না হলে বুধবার গেজেট প্রকাশ করা হবে। গেজেট প্রকাশের পর শপথের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্পিকারের কাছে তা পাঠাবে ইসি সচিবালয়। সংসদ নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে শপথের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরপর ৩০ দিনের মধ্যে অধিবেশন ডাকতে হবে। তবে ভোটের কত দিন পর গেজেট হবে সেই বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে অবহিত না করলে বা শপথ না নিলে সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে।

জানা গেছে, সংসদ সদস্যদের নাম গেজেটে প্রকাশের পরপরই স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাদের শপথ পড়াবেন। গতকাল মঙ্গলবার স্পিকার রংপুর থেকে ঢাকায় ফেরেন। তার আগমনের আগে এ সংক্রান্ত প্রাথমিক প্রস্তুতি এগিয়ে রেখেছে সংসদ সচিবালয়।

শপথ পড়ানোর বিষয়ে সংবিধানে ১৪৮-এর ২(ক)-তে বলা হয়েছে, ১২৩ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বলা হয়েছে, ‘সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচনের ফল সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত হইবার তারিখ হইতে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এই সংবিধানের অধীন এতদুদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা তদুদ্দেশ্যে অনুরূপ ব্যক্তি কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোনো ব্যক্তি যে কোনো কারণে নির্বাচিত সদস্যদের শপথ পাঠ পরিচালনা করিতে ব্যর্থ হইলে বা না করিলে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার উহার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে উক্ত শপথ পাঠ পরিচালনা করিবেন, যেন এই সংবিধানের অধীন তিনিই ইহার জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তি।’

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সে বছর ২৯ জানুয়ারি সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিপুলসংখ্যক আসন নিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আগামী ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে। সরকারিভাবে ফল ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে সংসদ অধিবেশন ডাকার বিষয়ে সংবিধানে বাধ্যবাধকতা আছে।

এ প্রসঙ্গে সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (২)-এর (১) দফায় বলা হয়েছে, ‘সংসদ সদস্যদের যে কোনো সাধারণ নির্বাচনের ফল ঘোষিত হইবার ত্রিশ দিনের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য সংসদ আহ্বান করা হইবে।’ নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নামে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সরকারিভাবে ফল ঘোষণা করা হয়। কাজেই গেজেট প্রকাশের দিন থেকে এক মাসের মধ্যে সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে।

অধিবেশনের প্রথম দিন থেকে নতুন সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শুরু হবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে আগামী ৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার শপথ অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে বুধবারের মধ্যেই গেজেট প্রকাশিত হবে। রোববার দেশের ২৯৯টি আসনে একযোগে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। বেসরকারি ফল অনুযায়ী এই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা পেয়েছেন ২৬৬টি আসন। লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করে ২২টি আসন পেয়েছে জাতীয় পার্টি। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট ৭টি আসন এবং অন্যরা ৪টি আসনে জয়লাভ করেছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অধিবেশন,নতুন সরকার,শপথ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close