গাজী শাহনেওয়াজ
আরপিওতে সংশোধনী
ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগে বন্ধ হচ্ছে প্রচারণা
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগেই বন্ধ হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণাসহ মিছিল-মিটিং ও সভা-সমাবেশ। এছাড়া ভোটগ্রহণের পর অর্থাৎ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময়ের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা একই ধরনের মিছিল-শোডাউন বন্ধ থাকবে। এমন বিধান রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধনী আনছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আরপিওর ৭৮(১) ধারায় সংশোধনী এনে নতুন ওই সময়সীমা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে।
এছাড়া ৯ম জাতীয় সংসদের আগে নিবন্ধন পাওয়া ৪০ দলকে ওই সংসদের প্রথম সভা বসার পরবর্তী ১ বছরের মধ্যে গঠনতন্ত্র জমা দেওয়ার যে বিধান এতদিন অকার্যকর ছিল—তাও বাদ দিচ্ছে কমিশন। গতকাল মঙ্গলবার আইন সংস্কার কমিটির বৈঠক হয় এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার কমিশন সভা হবে।
কমিশনের ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে, বাস্তবতার নিরীখে যেমন নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারের সময় ভোট শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে কমিয়ে ৩২ ঘণ্টা করা হচ্ছে। একইভাবে, নিবন্ধিত দলের গঠণতন্ত্র জমা দেওয়ার যে বিধান ছিল এখন কার্যকারিতা না থাকায় এটি আরপিও থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আরপিওতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বিতর্কিত ইভিএম-ডিভিএম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকসূচক ভোটারের হার করা হচ্ছে নির্দিষ্ট। একইসঙ্গে আইসিটি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র অনলাইনে জমার বিধান সংযোজন হচ্ছে। আর সংস্কার কমিটির অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে—নির্বাচনী কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে নির্বাচনী অপরাধের দায়ে প্রত্যাহারের পাশাপাশি বদলির সুযোগ রাখার বিধান যুক্ত করা, ঋণখেলাপিদের প্রার্থিতা অগ্রাধিকার দিতে মনোনয়নপত্র জমার আগ পর্যন্ত ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ রাখা, ভোট কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিতে আরপিওর সংজ্ঞায় তাদের জন্য শক্ত আইন যুক্ত এবং দুজন প্রার্থীর ভোটের ফল সমান হলে বিদ্যমান লটারির বদলে ভোটাধিকারের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা।
জানা গেছে, কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বরে ১৭ তারিখের আইন সংস্কার কমিটির প্রস্তাব চূড়ান্ত করার কথা ছিল। আর নির্ধারিত ছিল ডিসেম্বরের মধ্যে এটির সব কার্যক্রম শেষ করার। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পর প্রায় আড়াই মাসের মাথায় নির্বাচনী আইন সংস্কার কমিটি তাদের প্রস্তাব চূড়ান্ত করে। গত রোববার কমিটির সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করে কমিশন মুলতুবি করেন। এরই মধ্যে প্রচারণার সময় সংক্রান্ত ধারা সংযোজন করেছে। এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার কমিটি নিজেদের মধ্যে আরেক দফা বসে। আর আজ বুধবার কমিটির প্রস্তাব কমিশন সভায় উত্থাপনের পর তা আইনের রূপ দিতে সরকারের কাছে পাঠানো হবে।
প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বর্তমানে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট আসনের মোট ভোটারের ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হয়। কিন্তু কমিশন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে ১ শতাংশের বিধান তুলে দিয়েছে। এখন এসব প্রার্থীর এক হাজার জন ভোটারের সমর্থন নিতে হবে। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে না যেয়ে অনলাইনে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। কমিটির অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে নির্বাচনে অবৈধ টাকার প্রভাব ও প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় সীমা নির্দিষ্ট রাখতে ব্যয় মনিটরিং কমিটি ও অডিটের নিমিত্তে আলাদা কমিটি গঠন, নির্বাচনে অভিযোগ দাখিল ও তা দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি হলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফেরাতে এ বিধান সংযোজন, প্রার্থীদের জামানত ফি বাড়িয়ে ৫০ হাজার করা এবং তা অফেরতযোগ্য বিধান যুক্ত করা, প্রার্থীদের হলফনামায় মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সার্টিফিকেটের পাশাপাশি মার্কশিট সংযোজনের বিধান সংযোজন, সংসদ নির্বাচনে বড় জেলায় দুজন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের ফলে জটিলতা তৈরি হয়, তাই এটা নিরসনে জেলার পাশাপাশি আসন শব্দটি যোগ করা এবং নির্বাচনে বড় ধরনের অনিয়ম রোধে নিজস্ব কর্মকর্তাদের স্থায়ী দায়িত্ব পালনের বিধান যুক্ত করার সুপারিশ থাকছে আইন সংস্কার কমিটির।
পিডিএসও/হেলাল