পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা

  ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯

নাগরিকত্ব বিল : ত্রিপুরার পর আসামেও সেনা

রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়ে যাওয়ার পরে উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বিশেষত আসামের বিভিন্ন এলাকা থেকে একের পর এক হিংসাত্মক ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। গোটা উত্তরপূর্ব ভারতের পরিস্থিতির ওপরে সেনাবাহিনীর সদর দফতর থেকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। শুধু আসাম নয়, ত্রিপুরা, মণিপুর ও অরুণাচলেও চলছে বিক্ষোভ ও মিছিল। ছাত্রদের নেতৃত্বে মিছিলে হেঁটেছেন বহু মানুষ।

আসামে নেমেছে ২ কলাম আসাম রাইফেল্সের জওয়ান। গুয়াহাটির বিজেপি সাংসদ কুইন ওঝার বাড়িতেও ভাঙচুর চালিয়ে বাড়ির উঠোনেই তার কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছে জনতা। বহু মানুষ উলঙ্গ হয়েও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যে আসামের ৪ জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।এর মধ্যে দু-কলাম জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে গুয়াহাটিতে। এছাড়া জোরহাট শহর ও তিনসুকিয়া এবং ডিব্রুগড় জেলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

শান্তি ফিরিয়ে আনতে জওয়ানরা ফ্ল্যাগমার্চ শুরু করেছেন। গুয়াহাটি এবং ডিব্রুগড়ে ইতিমধ্যে জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। যে কোনো ধরনের জমায়েত, মিটিং, মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ১০ জেলায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত করে দিয়েছে। বিপর্যস্ত সড়ক ও রেল পরিষেবা। অবরোধের জেরে অন্তত ১০টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে টানা ২৪ ঘণ্টা তিনসুকিয়া, ধীমাজি, ডিব্রুগড়, চড়াইদেউ, শিবসাগর, জোরহাট, গোলাঘাট, কামরুপ (মেট্রো) এবং কামরুপ এবং লখিমপুর জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রেখেছে প্রশাসন।

এদিকে,নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আর বিল পাসের উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দিনটিকে দেশের পক্ষে যুগান্তকারী আখ্যা দিয়েছেন তিনি।রাজ্যসভায় জয়ের মুহূর্তের মধ্যে ট্যুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি লিখেছেন ,দেশের জন্য যুগান্তকারী দিন। সহমর্মিতা এবং সৌভ্রাতৃত্বের যে চিরন্তন ঐতিহ্য ভারত বহন করে সেই দিন থেকেও আজকের দিনটি যুগান্তকারী।

একইসঙ্গে এই বিলকে সমর্থনকারী সাংসদদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, এই বিল বছরের পর বছর ধরে অত্যাচারের মুখোমুখি হওয়া বহু মানুষের কষ্ট লাঘব করবে।বুধবার টানা ৯ ঘণ্টা আলোচনার পরে ভোটাভুটিতে ২০ ভোটের ব্যবধানে বিলটি পাশ হয়ে গিয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের পক্ষে ১২৫টি ভোট পড়েছে। অন্যদিকে, বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ৯৯ জন সাংসদ।

অন্যদিকে, লোকসভা এবং রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাসের পর কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর প্রতিক্রিয়া, ভারতের সংবিধানের ইতিহাসে একটা কালো দিন। প্রথম থেকে বিলটি বিরোধিতা করে আসছিল কংগ্রেস। বিলটি ভারতের বহুত্ববাদের আদর্শের পরিপন্থী বলে দাবি করেছে তারা। রাজ্যসভার বিতর্কে সরব হয়েছেন আনন্দ শর্মা, দিগ্বিজয় সিংরা। তার জবাবও দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরিয়ে বিলটি পাস করিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। তারপর রাতে, কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর প্রতিক্রিয়া, ভারতীয় সংবিধানের ইতিহাসে কালো দিন। ভারতের বহুত্ববাদের উপরে নিম্নরুচি ও ধর্মান্ধতার জয়।

পাশাপাশি, বাংলায় এনআরসি করতে দেবেন না বলে হুঙ্কার দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তার জবাব রাজ্যসভায় দিয়েছেন অমিত শাহ। জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলা তো বটেই, গোটা দেশেই হবে এনআরসি। একইসঙ্গে অমিত আশ্বাস দিয়েছেন, স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলায় আসা সব উদ্বাস্তু হিন্দুই বিনা প্রশ্নে নাগরিকত্ব পাবেন। রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে জবাবি ভাষণ দিয়েছেন অমিত শাহ।

তারপর সব সাংসদদের প্রশ্ন করতে ১ মিনিট সময় দিয়েছেন চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু। তখনই রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত প্রশ্ন করেন, একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এনআরসি হবে না বলে দাবি করেছেন। উনি কি আটকাতে পারেন? অমিত শাহের জবাব, আপনি, স্বপন দা অত্যন্ত বিনয়ী। নাম না নিয়ে ভদ্রতা দেখাচ্ছেন। খুলে বলতে পারছেন না। তবে আমি স্পষ্ট করে দিই, বাংলা-সহ গোটা দেশেই হবে এনআরসি।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলায় আসা সব উদ্বাস্তু হিন্দুই শর্তছাড়াই পাবেন নাগরিকত্ব। কোটি কোটি বঞ্চিত ও নির্যাতিতদের স্বপ্ন সত্যি হলো, রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাসের পর টুইটারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও ধন্যবাদজ্ঞাপন করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

রাজ্যসভায় দিনভর বিরোধীদের নানা প্রশ্নবাণ রাজ্যসভায় সামলে ভোটাভুটিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পর টুইটারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া,ভারতীয় সংসদে পাস হয়ে গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯। কোটি কোটি বঞ্চিত ও নির্যাতিতদের স্বপ্নপূরণ হলো ।নির্যাতিতদের সম্মান ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিলটি সমর্থনের জন্য সকলকে ধন্যবাদ।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নাগরিকত্ব বিল,রাজ্যসভা,আসাম,সেনা মোতায়েন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close