শ্রীধর দত্ত

  ১৩ জুলাই, ২০১৯

আত্মশুদ্ধিতায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

নিজে বাঁচুন নিজেকে রক্ষা করুন। কথায় আছে দাওয়াতে আগে যাও মারামারিতে পরে যাও। চাচা আপন প্রাণ বাঁচা। আমাদের দেশের অভিভাবক নিজ সন্তানদের এ ধরনের উপদেশ দিয়ে থাকে। এই ধরনের উপদেশ যৌক্তিকতা আছে। মানুষ জেনে শুনে নিজের পায়ে কুড়াল মারতে চায় না। দুজন ভালো মানুষের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হলে তৃতীয় ব্যক্তি এগিয়ে আসে ঝগড়া নিষ্পত্তিতে, কিন্তু অপরাধী কিংবা সন্ত্রাসী কোনো অপরাধ সংঘটিত করলে তখন কেউ এগিয়ে আসে না। এটা বাস্তব পরিস্থিতি, কিন্তু কেন?

কারণ, প্রতিরোধের সুসমাজ আমরা গড়তে পারেনি। পুলিশের হয়রানি না হলে, বিচার বিভাগের প্রহসন না হলে, ক্ষমতাসীন ব্যক্তি কিংবা রাজনৈতিক নেতাকর্মী প্রভাব বিস্তার না করলে সাধারণ জনগণ যেকোনো নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতো। কারণ, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কিংবা প্রতিরোধ করতে গেলে উল্টো বিপদগ্রস্ত হতে হয়।

মানুষ এখন সন্ত্রাসী কিংবা পুলিশের কাছ থেকে অনেক দূরে থাকতে চায়। কথায় আছে, থানার কাছে কানাও যায় না। পুলিশ যেখানে দুর্নীতিগ্রস্ত সেখানে প্রতিবাদী দুঃসাহসে কেউ এগিয়ে আসে না। কেউ যদি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন কিংবা বিপদে পড়ে, সাধারণ জনগণ যদি প্রতিরোধ গড়ে তোলে তখন ৯০ ভাগ পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হয় এবং উপরন্তু অপরাধী কর্তৃক হামলার ভয় থাকে। তাই কেউ ইচ্ছে করে বিপদে পড়তে চায় না। পুলিশ কর্তৃক হয়রানির শিকার শত শত প্রমাণ আছে। সন্ত্রাসী কর্তৃক সাক্ষীর চলাফেরা কিংবা ঘরবাড়িতে হামলা শিকার হতে হয়। যারা অপরাধ সংঘটিত করে তাদের খুঁটি অনেক শক্ত। তাদের অর্থবল না থাকলেও রাজনীতি বল অবশ্যই আছে। তা না হলে এ দুঃসাহস পায় কোথা থেকে।

আপনি দেখবেন, যারা অপরাধ করে তাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা আছে, তারা অনেকবার জেল কেটেছে, কিন্তু আবার পুনরায় ছাড়া পায়। এইভাবে অপরাধী ও পুলিশের মধ্যে ঘুষ বাণিজ্যের লুকোচুরি খেলা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অকারণে শত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা কিংবা নিরপরাধ ব্যক্তিকে আটক করে৷ কে অপরাধী আর কে উদ্ধারকারী তা দেখে না৷ এরপর শুরু হয় পুলিশের অর্থ বাণিজ্য৷ আদালতে লেফট রাইট ও অর্থের জলাঞ্জলি। এই পরিস্থিতিতে প্রত্যক্ষদর্শী কেউ কেউ ঘটনার ভিডিও করাও একটা দুঃসাহসের কাজ৷ জলজ্যান্ত ভিডিও ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও অপরাধীর কোনো বিচার হয় না। অনেক ঘটনার ভিডিও থাকে না সেগুলো প্রমাণের অভাবে ধামাচাপা পড়ে যায়।

টকশোতে অনেক বুদ্ধিজীবীরা বলে থাকেন, কেউ কি এগিয়ে আসতে পারলো না, কিন্তু বাস্তবে কতটুকু। বরগুনার রিফাত হত্যাকাণ্ড জনগণ অবশ্যই রুখে দিতে পারত। জনগণ কোন ভরসায় প্রতিরোধে এগিয়ে আসবে? যেকোনো অপরাধ প্রতিরোধ করার জন্য জনগণ পুলিশের সহযোগিতা, রাজনৈতিক নেতাকর্মীর সমর্থন পায় না। ২০১৬ সালে সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে কোপানো হয় প্রকাশ্যে। একইভাবে বিশ্বজিৎকে পুরনো ঢাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ব্লগার অভিজিৎ রায়কেও প্রকাশ্যে কোপানো হয়। প্রকাশ্যেই কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হয় লেখক হুমায়ুন আজাদকে। এসব ঘটনাতে প্রত্যক্ষদর্শী অনেকে ছবি তুললেও কেউ রক্ষা করতে এগিয়ে যায়নি।

শুধুই হামলাকারীর ভয় নয়, পুলিশি হয়রানির শিকার হওয়ার ভয়ে এখন আর কেউ কাউকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে না। এসব ঘটনার কি বিচার হয়েছে? বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে সুষ্ঠু বিচার সম্ভব নয়। রিফাত হত্যাকাণ্ডের মূল আসামী নয়নের ক্রসফায়ারে মৃত্যু আমাকে অবাক করেনি। তবে আরো যারা জড়িত তাদেরও ছাড় নয়। স্বজনপ্রীতি ও অর্থপ্রীতি যেন করা না হয়। যেকোনো নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক ক্রসফায়ার। তবে সত্যতা যাচাই করার পর এবং নিরপরাধ ব্যক্তি যেন ভুক্তভোগী না হয়।

যারা সমাজে নয়নদের সৃষ্টি করে তাদেরকেই প্রথমে চিহ্নিত করতে হবে। তারাই কিন্তু নাটের গুরু। পুলিশের আত্মশুদ্ধি, বিচার বিভাগের আত্মশুদ্ধি এবং রাজনৈতিক নেতাদের আত্মশুদ্ধি না হলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমবে না। প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যদি আত্মশুদ্ধি হতো তাহলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা অনেক কমে যেত।

[মতামত লেখকের ব্যক্তিগত]

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
হয়রানি,আত্মশুদ্ধিতা,অপরাধ,হত্যাকাণ্ড
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close