তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম

  ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

পারকির চর সৈকতে নজর কাড়ে ‘ঢেউয়ের নাচন’

শীত এলেই ভ্রমণপিপাসুরা খুঁজতে থাকেন সুন্দর ভ্রমণের জায়গা। বন্ধুরা মিলে ঠিক করেন সেই গন্তব্য। প্রতি বছর শীত মৌসুমে দেশের নামকরা পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকে থাকে ঠাসা। এ কারণে নতুন গন্তব্যের সন্ধানও করেন ভ্রমণবিলাসীরা। তেমনই একটি পছন্দের পর্যটন স্পট ‘পারকির চর’।

চট্টগ্রাম শহরের আনোয়ারা উপজেলায় এর অবস্থান। এ চরের নান্দনিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মন মাতায়, নজর কেড়ে নেয় নীল জলের নাচানাচি। চট্টগ্রাম শহর থেকে পারকি সৈকতের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। যেতে সময় লাগে মাত্র এক ঘণ্টা। এটা মূলত কর্ণফুলীর মোহনায় অবস্থিত। অর্থাৎ কর্ণফুলী নদীর মোহনার পশ্চিম তীরে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এবং পূর্ব-দক্ষিণ তীরে পারকি সমদ্রসৈকত। চট্টগ্রাম সার-কারখানা ও কাফকো যাওয়ার পথ ধরে যেতে হয়।

পারকি সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার পথে দেখা মিলে অন্যরকম এক দৃশ্য। আঁকাবাঁকা পথ ধরে ছোট ছোট পাহাড়ের দেখা মেলবে। দেখা মেলবে চট্টগ্রাম ইউরিয়া কারখানা এবং কাফকোর দৃশ্যও। চোখে পড়বে কর্ণফুলী নদীর ওপর প্রমোদতরীর আদলে নির্মিত নতুন ঝুলন্ত সেতু। এ মনোলোভা দৃশ্য যে কারো ভ্রমণকে দেবে বাড়তি আনন্দ। সৈকতে ঢোকার ১ কিলোমিটার আগে চোখে পড়বে সারি সারি গাছ, সবুজ প্রান্তর, দেখা যাবে মাছের ঘের। অনেকের ইচ্ছে থাকে মাছের ঘের দেখার। সে ইচ্ছা মিটবে।

এ বেলাভূমিতে রয়েছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের মতো অসংখ্য ঝাউগাছ আর ঝাউবন। দীর্ঘ ১৩ কিলোমিটারজুড়ে বিশাল এ সৈকতে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য চোখে পড়বে। তাছাড়া নদীপথেও যাওয়া যায় পারকি বিচে। চট্টগ্রামের নেভাল একাডেমি কিংবা বিমানবন্দর এলাকা থেকে কর্ণফুলী নদী পেরোলেই পারকির চর। দেশের পর্যটন স্থানের তালিকায় দীর্ঘ এক যুগ ধরে পারকির সাগরসৈকতের নাম থাকলেও সরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকার কারণে পিছিয়ে পড়ছে এ সুন্দর চরটি।

প্রতি বছর শীত এলে পর্যটকের আনাগোনায় মুখরিত হয় পুরো চর। সাগরের গর্জন শুনতে আর ঢেউয়ের মিতালি দেখতে এখানকার ঝাউবনে প্রতিদিন শত শত পর্যটক ভিড় করেন। যেখান থেকে উপভোগ করা যায় সৈকতের বালুচরে লাল কাঁকড়ার ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য কিংবা দূরে গভীর সমুদ্রে নোঙর করা কিংবা সমদ্রপথে চলতে থাকা ছোট-বড় জাহাজের সারি।

পর্যটকদের আরো বাড়তি আনন্দ দেয় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা নারিকেল ও সুপারিগাছ। এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন শত শত পর্যটক বেড়াতে আসছে পারকির চর সৈকতে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে এখানে নেই কোনো ভালো রেস্তোরাঁ ও বিশ্রামের স্থান। নেই থাকার হোটেল। সন্ধ্যার আগেই চট্টগ্রাম শহরে ফিরতে হয় পর্যটকদের।

সম্প্রতি পারকির চর বিচে গিয়ে দেখা যায়, অস্যংখ্য পর্যটক সঙ্গী, পরিবার ও পরিজন নিয়ে সৈকতের বালিয়াড়িতে বসে কেউ গল্পে মেতেছে আবার কেউ সাগরের পানিতে গা ভিজিয়ে নিচ্ছে। সৈকতের পাশে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট ঝিনুকের দোকান। মাঝে কয়েকটি ফুসকা ও চটপটির দোকান। এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানান, পারকির সমুদ্রসৈকত দেখতে কক্সবাজারের চেয়ে কম নয়। কিন্তু থাকা ও খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সৈকতের আনন্দ উপভোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

তাদের মতে, সরকার এই সৈকতকে পর্যটন করপোরেশনের আওতায় আনলে অতি অল্প সময়ে পর্যটকবান্ধব হবে পারকির চর। পাশাপাশি সরকার পাবে রাজস্ব। চট্টগ্রামের পর্যটনসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পারকির চরকে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে পরিচিত করতে হবে। এজন্য দরকার সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ও বিনিয়োগ।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চট্টগ্রাম,পারকি সমুদ্র সৈকত,পারকির চর,সৈকত
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close