নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ জুন, ২০১৭

রাজধানীতে জলাবদ্ধতা : ভোগান্তির শেষ নেই

সুরাহা হচ্ছে না রাজধানীর জলাবদ্ধতা সমস্যার। বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছরে এর পরিমাণ বেড়েছে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নগরীর নিম্নাঞ্চলগুলোতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। বৃষ্টিপাতের তিন দিন পরও বিভিন্ন এলাকায় এখনো জমে আছে পানি। ড্রেনের ময়লা ও দূষিত পানির সঙ্গে বৃষ্টির পানি মিশে নগরীর সড়কগুলো একাকার হয়ে যায়। তাতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে আগামীতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এর জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবকে দায়ী করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনেই জলাবদ্ধতা বেশি হয়। দক্ষিণ সিটির শান্তিনগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর ফলে ওই এলাকায় ৬০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলেও এখন আর পানি জমে না। তবে এই এলাকাটি ছাড়া অন্যান্য এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩১০ কিলোমিটার নর্দমা পরিষ্কার এবং ২৩৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৪০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এমন তথ্য জানিয়েছেন মেয়র সাঈদ খোকন।

রাজধানীর খিলগাঁও, শাজাহানপুর, সবুজবাগ, রাজারবাগ, ফকিরাপুল, আরামবাগ, যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকা, জুরাইন, শহীদনগর, বাসাবো কালীমন্দির সড়ক, পুরোনো ঢাকার নাজিরাবাজার, নাজিমউদ্দিন রোডে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা যায়।

অপরদিকে, নগর ভবনে দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ১৬৮ কিলোমিটার ড্রেন পরিষ্কার করেছে ডিএনসিসি। এ ছাড়া জরুরি মুহূর্তে নগরীর নর্দমা দ্রুত ও কার্যকরভাবে পরিষ্কার করার জন্য ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন কেনা হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে জলাবদ্ধতার উন্নতি হবে।’ যদিও ডিএনসিসির এই যন্ত্রটি কেনার সময় বলা হয়েছে, মাত্র ১০ মিনিটেই এই যন্ত্রটি বিশাল এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে সক্ষম হবে।

ডিএনসিসির অভিজাত এলাকা বসুন্ধরা, গুলশান, বনানী, বারিধারা, পূর্ব রামপুরা, হাজীপাড়া, মৌচাক, মালিবাগ, মগবাজার, প্রগতি সরণীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাড্ডা, কারওয়ান বাজার, বেগুনবাড়ি, পান্থপথের বিভিন্ন এলাকা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মালিবাগের গুলবাগ, মগবাজারের নয়াটোলা সড়ক, ফার্মগেটের পূর্ব ও পশ্চিম রাজাবাজার, খিলক্ষেত নিকুঞ্জ ও নিকুঞ্জ-২ এর জামতলা এলাকা, উত্তরার বিভিন্ন সেক্টর, মিরপুরের শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, কালশী ও মধুবাগে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।

এদিকে, জলাবদ্ধতা থেকে দ্রুত মুক্তি দিতে দুই সিটি করপোরেশন তার কাউন্সিলর ও পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শকদের সমন্বয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কমিটি গঠন করে দিয়েছে। ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম’ নামে ওই কমিটিতে ১০ জন সদস্য রাখা রয়েছে। সে হিসেবে দুই সিটির ৯১টি ওয়ার্ডে ৯১০ জন কর্মী থাকার কথা। বৃষ্টির পর এসব কর্মীরা মাঠে নেমে ড্রেন ও ম্যানহেলগুলোর ঢাকনা খুলে দেবে। একই সঙ্গে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিতে হলে তাও করবে। কিন্তু জলাবদ্ধতা হলে এসব কর্মীর কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছর বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা বেড়েছে। এর পেছনে মূলত দুটি কারণ রয়েছে। পুকুর, জলাশয় এবং উন্মুক্ত স্থান না থাকায় বৃষ্টির পানি ভূ-গর্ভে যেতে না পারা। অন্যদিকে, খাল দখল ও পর্যাপ্ত ড্রেন না থাকায় বৃষ্টির পানি নদীতে যেতে পারে না। এ কারণেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘পানি ওপর থেকে পড়বে, এটা বিশেষ রহমত। কিন্তু আমরা এই পানিকে দুর্ভোগের কারণ করে ফেলেছি। আমাদের উন্নয়ন সড়কের নামে পানির এই প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। এ জন্যই নগরবাসীকে প্রতিবছর দুর্ভোগে পড়তে হয়।’

এই স্থপতি আরো বলেন, ‘যে পদ্ধতিতে দুই সিটি করপোরেশন ও ঢাকা ওয়াসা এগোচ্ছে তাতে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে আগামী বছরগুলোতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

এসব বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার কিছু জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমরা সংস্থাগুলোর সঙ্গে বসেছি, তাদেরকে সাত দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই সাত দিনের মধ্যে সড়ক চলাচলের উপযোগী করতে বলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জলাবদ্ধতা একেবারে নিরসন করা সম্ভব নয়। নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist