খালিদ হাসান, জবি

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় চলছে জবির ভর্তি পরীক্ষা

শুরু হয়েছে দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা।ইতোমধ্যে ‘সি’ ইউনিটের (বিবিএ) ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ১৫ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) ও কলা অনুষদের অন্তর্ভূক্ত ‘ই’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ১৬ সেপ্টেম্বর (শনিবার) বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ক্যাম্পাস সহ রাজধানীর ছয়টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে।কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার কারণে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী একটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি বলে অভিযোগও উঠেছে।

ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ঠেকাতে শুক্রবার (১৫ সেপ্টম্বর) সকাল ১০টার পর বহিরাগত প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে জবি কর্তৃপক্ষ। দুপুর ১২টা থেকেই ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ফটকে পরীক্ষার দায়িত্ব প্রাপ্তরা অবস্থান নেন।কিন্তু প্রশাসনের নিয়মকে তোয়াক্কা না করে ওই দিন পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবকে কেন্দ্রে প্রবেশ করান সহকারী অধ্যাপক আবদুল মোমেন ।এতে বাধা দেয়ায় জবির সহকারী প্রক্টর ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামালকে ‘দেখে নেয়ার’ হুমকিও দেন ওই প্রভাবশালী শিক্ষক। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে বেশ হট্টগোল হয়।অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী অধ্যাপক ড. আবদুল মোমেন দুজন অভিভাবক প্রবেশের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ডরমেটরিতে থাকি। আমার আত্মীয়রা আসতেই পারে।’তবে হুমকি দেয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি আরো বলেন,‘প্রক্টর স্যার থাকতে সহকারী প্রক্টর মোস্তফা কামালতো আমাকে বাধা দিতে পারে না।’

অপরদিকে শনিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ই’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা চলার সময় কয়েকটি বিভাগের সান্ধ্যকালীন ক্লাস চালু রাখায় চরম বিশৃঙ্খলা ও পরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন ঘটে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক সহকারী প্রক্টর।বিকাল ৩টায় ‘ই’ ইউনিটের এক ঘণ্টার ভর্তি পরীক্ষা ছিল। একই সময়ে সান্ধ্যকালীন এমবিএর ক্লাসসহ বিভিন্ন রুটিন কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছিল।নিয়ম অনুযায়ী, যেসব ভবনে পরীক্ষাকেন্দ্র বসানো হয়, সেগুলোর ফটক দিয়ে পরীক্ষার্থী ছাড়া আর কেউ ঢুকতে পারেন না। সেজন্য পরীক্ষার সময় সংশ্লিষ্ট ভবনে রুটিন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকে, ফটকে তল্লাশি করে ঢুকানো হয়।কিন্তু ক্যাম্পাসে একমাত্র প্রবেশ পথে শনিবার একই সময়ে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে সান্ধ্যকালীন শিক্ষার্থীরাও প্রবেশ করতে থাকে। তাদের সঙ্গে ব্যাগ, মোবাইল ও ল্যাপটপও দেখা যায়। তাতে ফটকে ব্যাপক ভিড় জমে এবং পরীক্ষার্থীদের প্রবেশে বাধার সৃষ্টি হয়।বিশ্ববিদ্যালয় মূল ফটকে সান্ধ্যকালীন শিক্ষার্থীদের ভিড় ঠেলে অনেক পরীক্ষার্থী সময়মতো ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। সে কারণে দেরি হলে তাদের পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সহকারী প্রক্টর বলেন,‘পরীক্ষা চলার সময় সান্ধ্য প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের জানিয়ে সব কিছু বাতিল করা উচিত ছিল। ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে এরকম বিশৃঙ্খলা মেনে নেওয়া যায় না।’এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর ড.মোস্তফা কামাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি দিন ভর্তি পরীক্ষা হয়। এ দিনগুলো কেন অন্য কোনো কার্যক্রম থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ে? আমাদের প্রক্টরিয়াল বডিকে আসন বরাদ্দের তালিকা পর্যন্ত দেয়নি পরীক্ষা কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত হাজার শিক্ষার্থীর একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকলে কেন বিছিন্নভাবে সব ভবনে মাত্র দু হাজার ভর্তি পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার আসন বিন্যাস করা হবে?’ পরীক্ষার সময় ক্লাস চালু রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার কারণে ৩টার ক্লাস সাড়ে ৩টায় নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ইভিনিং এমবিএর শিক্ষার্থীরা একই সময়ে ঢুকেছে।’ ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে অর্থনীতি বিভাগের আয়োজনে একটি সেমিনার চলছিল, সেখানকার অংশগ্রহণকারীরাও ভর্তিচ্ছুদের প্রবেশের সময় মূল ফটক দিয়ে যাতায়াত করেন।’এ বিষয়ে বিভাগটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সেমিনার সকাল ৯টায় শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে। আমাদের সেমিনারের কারণে তো ভর্তি পরীক্ষায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবার কথা নয়। আমরা এটা তো বন্ধের দিনে আয়োজন করেছি।’এ বিষয়ে ‘ই’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও কলা অনুষদের ডিন অ্যধাপক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা একটি পাবলিক পরীক্ষা। সবাই জানে কত তারিখে কোন অনুষদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।’ পরীক্ষার শুরুর আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান।তিনি বলেন, ‘যারা পরীক্ষা শুরুর আগে এসেছে, তাদের কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়নি। তবে মিসম্যানেজমেন্ট ছিল।’

‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষা শুক্রবার

ঘোষনা অনুয়াযী কলা অনুষদের অন্তর্ভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আগামী শুক্রবার।ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ঠেকাতে কঠোর নজরদারি বাড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রশ্নপত্রের অনেকগুলো সেটের পাশাপাশি গোপন বার কোডও ব্যবহার করা হচ্ছে।ভর্তি পরীক্ষা-সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকেও নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পূর্বেই পরীক্ষা কেন্দ্রে আসন গ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট পূর্বেই সব কেন্দ্রের মূল ফটক বন্ধ করে দেওয়া হবে। এরপর কোনোভাবেই পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।পরীক্ষা কক্ষে মোবাইল ফোন, ক্যালকুলেটর, ঘড়ি ও অন্য যে কোনো প্রকার ইলেকট্রনিক ডিভাইস সঙ্গে নিয়ে আসা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আসনবিন্যাসসহ ভর্তি-সংশ্লিষ্ট বিস্তারিত তথ্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট http://admission.jnu.ac.bd অথবা http://admissionjnu.info

পিডিএসও/রানা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা,জবির ভর্তি পরীক্ষা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist