reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৮ অক্টোবর, ২০১৮

ছাত্রলীগের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত, মাভাবিপ্রবি’র ৫৬ শিক্ষকের পদত্যাগ

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগে একইসঙ্গে ৫৬ শিক্ষক বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এরমধ্যে দুইজন রিজেন্ট বোর্ড সদস্য, চারজন ডিন, চারজন প্রভোস্ট, ১৪ জন বিভাগীয় চেয়ারম্যান, সব হলের হাউজ টিউটর, সব সহকারী প্রক্টর রয়েছেন।

শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় মাভাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের চার নেতার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে তাৎক্ষণিক বিচার না পাওয়ায় সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ৫৬ জনের পদত্যাগপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. তৌহিদুল ইসলামের কাছে জমা দেওয়া হয়।

শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত শনিবার দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ। এ পরীক্ষায় এক ছাত্রী উন্নীত হতে পারেননি। তার ফলাফল ৪-এর মধ্যে ১.৯৮। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী সর্বনিম্ন ২.২৫ পেলে উন্নীত হিসেবে গণ্য করা হবে। এদিকে পরীক্ষার ফলাফল একদিন আগে ঘোষণা করাকে অধ্যাদেশবিরোধী উল্লেখ করে মাভাবিপ্রবি’র ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার তার সহযোগীদের নিয়ে রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কোয়ান্টাম মেকানিক্স-১ পরীক্ষায় ওই ছাত্রীকে সিটে বসিয়ে দেয়। এ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ব্যাপারে বিভাগের কোনও অনুমোদন না থাকায় শিক্ষকরা এ বিষয়ে বাধা দেন। এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আনোয়ার হোসেন এবং শিক্ষক মহিউদ্দিন তাসনিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং লাঞ্ছিত করে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পাহারা দিয়ে ওই ছাত্রীর সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করায়। পরীক্ষা শেষ করানোর পর সব শিক্ষার্থীকে ডেকে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের জন্য মিছিল শুরু করে। এ সময় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা বন্ধ করা হয়।

এদিকে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় ওইদিনই বিকাল ৪টায় জরুরি সভা ডাকে শিক্ষক সমিতি। সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার, সহ-সভাপতি ইমরান মিয়া, সহ-সভাপতি আদ্রিতা পান্না ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাবির ইকবালের বিচারের দাবি জানানো হয়। মাভাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি ও ১৫ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর দুটি আবেদনে এই চারজনের বিচারের দাবি জানানো হয়। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভাইস চ্যান্সেলরের কক্ষে ছাত্রলীগ ও শিক্ষকদের নিয়ে সভা করা হয়। সভার একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতারা বের হয়ে এসে প্রতিটি হল থেকে ছাত্রছাত্রীদের বের করে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভ শেষে শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর ভাইস চ্যান্সেলরের কনফারেন্স রুমে বৈঠক করে রাতেই সব শিক্ষক একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

অন্যদিকে রাতে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হলের ছাত্রলীগ নেত্রীরা হলে ফিরে গেলে সেখানে সাধারণ ছাত্রীদের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। খবর পেয়ে সজীব তালুকদার ও সাইদুর রহমান ছাত্রী হলে ঢুকে অন্য ছাত্রীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। একপর্যায়ে সজীব ও সাইদুরকে সাধারণ ছাত্রীরা হল থেকে ধাওয়া দিয়ে বের করে দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এসে ছাত্রলীগের নেত্রীদের হলে ঢুকিয়ে দেন।

মাভাবিপ্রবি’র ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার বলেন, ‘পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিন তাসনিন দেড় বছর ধরে ওই ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছে। কিন্তু মেয়েটি রাজি না হওয়ায় এর আগেও তাকে পরীক্ষায় ফেল করানো হয়েছে। সম্প্রতি দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষায় তাকে ফেল করালে ছাত্রীটি তার পরীক্ষার খাতা রি-এক্সাম করানোর দাবি জানায়। তবে এ বিষয়ে রাজি হননি ওই শিক্ষক ও ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান।’

তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মীমাংসার বিষয়ে আলোচনার সময় ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান জামায়াতপন্থী ড. আনোয়ার হোসেন বৃদ্ধাঙ্গুলি উঁচিয়ে বলতে থাকেন কীসের ছাত্রলীগ, কীসের ছাত্রলীগ নেতা। একথা শুনে উপস্থিত ছাত্রলীগ কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে হইচই শুরু করে। গালিগালাজের কোনও ঘটনা ঘটেনি।’

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন বলেন, ‘ফেল করা ছাত্রীকে মাভাবিপ্রবি’র ছাত্রলীগ সভাপতি ও তার বন্ধুরা মিলে জোর করে পরীক্ষায় বসায়। এতে বাধা দেওয়ায় শিক্ষকদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে ওই ছাত্রীর সমর্থকরা অশালীন আচরণ করে। বিষয়টি শিক্ষক সমিতির জরুরি সভায় ভিসিকে জানানো হয়। পরে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় ৫৬ জন শিক্ষক তাদের বিভিন্ন পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।’

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিন তাসনিনের বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যদি দেড়-দুই বছর আগে কুপ্রস্তাব দেওয়ার কোনও ঘটনা ঘটে থাকতো তবে অবশ্যই ওই ছাত্রী ওই সময়ই বিষয়টি লিখিত আকারে জানাতো। পরীক্ষায় ফেল করার পর এটা প্রকাশ করতো না। কোনও শিক্ষক ছাত্রীকে এমন কথা বলতে পারে বলে আমি মনে করি না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষকরা সঠিক বিচার না পাওয়ায় আজ সোমবার দুপুরের দিকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। আমরা এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’

এ বিষয়ে জানতে শিক্ষক মহিউদ্দিন তাসনিনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ড. আনোয়ার হোসেনকেও কয়েকবার ফোন করে পাওয়া যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মাভাবিপ্রবি,ছাত্রলীগ,শিক্ষক লাঞ্ছিত,৫২ শিক্ষক পদত্যাগ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close