ঢাবি প্রতিনিধি
প্রক্টর অবরুদ্ধ : ঢাবির অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীকে অবরুদ্ধ এবং কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা করেছে ঢাবি প্রশাসন। বৃহস্পতিবার শাহবাগ থানায় অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কামরুল আহসান খান। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী।
তিনি বলেন, ‘গত বুধবারের ঘটনায় শাহবাগ থানায় অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা।করা হয়েছে। এছাড়াও গত বুধবার ও।সোমবারের ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান।বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গতকাল ৫০-৬০ জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে। মামলা নম্বর- ৩৮। ধারা ১৪৩/৪৪৮/৪২৭/১০৯ পেনাল কোড।
এদিকে এই ঘটনা ও রাজধানীর সরকারি।সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান প্রক্টর। রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে করা তদন্ত কমিটিতে রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদাকে আহবায়ক করা হয়েছে। কমিটিতে সিনেট সদস্য অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দারকে সদস্য ও সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক আবু হোসেন মোহাম্মদ আহসানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
অন্যদিকে নিপীড়নের বিচার চাইতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরতে অবরুদ্ধ করে রাখা, অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও কলা ভবনের কলাপসিবল গেইট ভাঙার ঘটনায় আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিতে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাকসুদুর রহমানকে আহবায়ক, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেনকে সদস্য ও সহকারী প্রক্টর এ কে লুৎফল কবিরকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
এদিকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় একটি মিছিল টিএসসি থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পদক্ষিণ শেষে ভিসির বাস ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান শেষে পুনরায় টিএসসিতে এসে শেষ হয়। মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মাসুদ আল মাহদী। তিনি বলেন, আমাদের আগের তিনটি দাবির সঙ্গে নতুন দাবি যুক্ত হয়েছে, সেটি হচ্ছে প্রক্টরের পদত্যাগ। ছাত্রীদের ওপর যৌন নিপীড়নের বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়েছে, এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতার চরম বহিঃপ্রকাশ। প্রক্টর পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
এরপর টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে সারা রাত নিজেকে ‘অজ্ঞতনামা এবংভাঙচুরকারী’ প্লাকার্ড বহন করে গ্রেপ্তারের দাবি করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে দুই শিক্ষার্থী। অবস্থানকারী দুই শিক্ষার্থী হলেন- রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র রাজীব দাস এবং অ্যাকাউন্টিং বিভাগের মাহির রাজ। সকালে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আরো ১৫-২০ শিক্ষার্থী। বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান শেষে ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ মিছিল পালন করে। এসময় তারা আগের তিনটি দাবির সঙ্গে প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানীর পদত্যাগ ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেন। সন্ধ্যায় টিএসসিতে মশাল মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। অবিলম্বে দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। মশাল মিছিল পরবর্তী চার দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। দাবি সমূহের মধ্যে রয়েছে- প্রক্টরের পদত্যাগ, মামলা প্রত্যাহার, নিপীড়নকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করা এবং ৭ কলেজ ইস্যুর সুষ্ঠু সমাধান করা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাজধানীর সাত সরকারি কলেজ বাতিলের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চলমান কর্মসূচিতে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এসময় আন্দোলনকারী ছাত্রীদের উত্ত্যক্তকরণ, আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ককে ভিসির কার্যালয়ে মারধর এবং অন্যান্যদের হেনস্তার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ছাত্রলীগকে ডেকে এনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ‘লেলিয়ে দিয়েছেন’। এ ঘটনার প্রতিবাদ।জানিয়ে গত বুধবার ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের বিচার চেয়ে প্রক্টরের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। ভাঙচুর করা হয় প্রক্টর কার্যালয়ের সামনের কলাপসিবল গেইট। ৫ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয় প্রক্টর গোলাম রব্বানীকে। এক পর্যায়ে প্রক্টর অপরাগতা স্বীকার করে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কার্যালয়ে চলে যান। আন্দোলনকারীরাও ভিসির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে তিন দফা আদায়ে ভিসিকে ৪৮ কর্মঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ওই দিনের কর্মসূচি শেষ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।পিডিএসও/রানা