মুহাম্মদ কামাল হোসেন

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

নিবন্ধ

ফিলিস্তিন টু আরাকান...

বিশ্বজুড়ে এক ভয়াবহ নৃশংসতা ও গণহত্যার মচ্ছব চলছে। সামান্য ঘটনায় তিলকে তাল বানিয়ে যখন-তখন মুসলমানদের পাইকারি হারে হত্যা ও নিধন করা হচ্ছে। কেউ কোনো উচ্চবাক্য করছে না। প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের পাশে কেউ নেই। কখনো ছিলও না। স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর দল ও সাম্রাজ্যবাদী দোসররা মাঝেমধ্যে সর্বস্ব লুটপাটের ধান্ধায় বন্ধুত্বের রূপ নিয়ে হাত বাড়িয়েছে। স্বার্থ উদ্ধার হওয়ার পর প্রকৃত মুখোশ উন্মোচিত হয়ে গেছে। নামসর্বস্ব ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানগুলো মুসলমানদের পক্ষে মাঝেমধ্যে কাগুজে বিবৃতি, লম্পঝম্প ও হাঁকডাকেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছে। কাজের কাজ মূলত কেউ করছে না। বিশ্বব্যাপী মুসলমানই একমাত্র জাতি যারা সবচেয়ে নিগৃহীত ও নির্যাতিত। প্রকৃতপক্ষে মানুষ হিসেবে কেউ তাদের গণ্য করছে না। দিকে দিকে মজলুম অসহায় মুসলমান নারী-পুরুষকে নিধন করা হচ্ছে। ভূমিষ্ঠ নিষ্পাপ শিশুদেরও হত্যা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, গর্ভের অনাগত সন্তানরাও রেহাই পাচ্ছে না। তাদের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। খোদার আরশ কেঁপে উঠছে। মুসলমানদের আহাজারি ও কান্না কাউকে সামান্যতম স্পর্শ করছে না। মুসলমানরা মার খেতে খেতে সামান্য প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলে বিশ্বময় সবাই সমস্বরে জঙ্গিবাদের ধুয়া তুলছে। অথচ জঙ্গিবাদের প্রকৃত দোসর হিসেবে তারাই নতুন নতুন জঙ্গি গ্রুপ বিশ্বময় ছড়িয়ে দিচ্ছে। শান্ত পৃথিবীকে অশান্ত ও অগ্নিগর্ভ করে তুলছে। এসব জঙ্গিবাদের ওপর স্ট্যাম্প লাগাচ্ছে শান্তিময় ইসলাম ধর্মের। কলুষিত করার চেষ্টা চলছে মুসলমানদের সুদীর্ঘ বর্ণাঢ্য অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য। ‘ফিলিস্তিন টু আরাকান’ আজ একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এই রোডম্যাপ শুধুই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন নতুন দেশ। যেখানে মুসলমান সেখানেই বর্বরতা ও গণহত্যা চালানো হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী চলমান নৃশংসতা ও হত্যাকান্ডের ধরন বারবার একই চিত্রনাট্যের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আজ বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের ঘোর দুর্দিন, ঘোর অমানিশা। এক দুর্বিষহ জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে তারা প্রতিটি মুহূর্ত পার করছে। নিজ দেশেই তারা পরবাসী। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের শিকার। দুনিয়াজুড়ে আধিপত্যবাদ ও সা¤্রাজ্যবাদীদের নীলনকশায় তারা নিগৃহীত। বিশেষত যেসব দেশে মুসলমানরা সংখ্যালঘু সেখানে তাদের ধর্মীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকারসহ সব কিছুই পর্যুদস্ত। বিশ্বে এক সময়ের শির উঁচু করা জাতি, আজ ন্যুব্জ হয়ে রয়েছে। অত্যাচারীদের নির্মম খড়গ তাদের ঘাড়ে চেপে আছে। কিন্তু যারা এক দিন গোটা বিশ্ব শাসন করত, যাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সভ্যতার আলো দ্বারা সমগ্র বিশ্ব আলোকিত হয়েছিল, তারা আজ সতত বিশ্বব্যাপী চরমভাবে নির্যাতন, জুলুমের শিকার হচ্ছে এবং নৃশংসতা ও বর্বরতার বলি হচ্ছে বিরোধী অপশক্তি দ্বারা। এর জন্য মুসলমানদের অনৈক্য, ভোগবাদী মনোভাব ও স্বেচ্ছাচারিতাই মূলত দায়ী। তারা নিজেরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে জন্ম দিয়ে মিডিয়াকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ব্যবহার করে দায় চাপাচ্ছে মুসলমানদের ওপর। শক্তিশালী কোনো আন্তর্জাতিক তথ্য মিডিয়াও মুসলমানদের হাতে নেই। অথচ কিছু কিছু মুসলিম রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের ধনকুবের বিলাসবহুল প্রাসাদ, ভোগবিলাস ও আরাম আয়েশের দিকে মগ্ন থেকে নিজেদের তথা জাতিরাষ্ট্র ও সম্প্রদায়ের ধ্বংস ডেকে আনছে। বরং বিরুদ্ধ শক্তির কাছে এরা প্রিয়ভাজন ও প্রিয় ব্যক্তিত্ব। মুসলিম বিশ্বের প্রায় সব রাষ্ট্রপ্রধানই ওদের হাতের পুতুল। দুয়েকটি দেশ ব্যতিক্রম হলেও আন্তর্জাতিক বিরোধী গোষ্ঠীর দাপটে তারা কার্যকর কিছুই করতে পারে না।

রাবেতা, আরব লিগ ও ওআইসি নামের সংস্থাগুলোর ভূমিকা ইতিবাচক নয় বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। নিন্দা প্রস্তাব ও কাগুজে বিবৃতিদানের মধ্যেই তাদের কাজ সীমাবদ্ধ। ফিলিস্তিন, চেচনিয়া, কসোভা, মেসিডোনিয়া, মিন্দানাও, ইরাক, মিসর, লিবিয়া, আফগানিস্তান ও আজকের মিয়ানমারের আরাকানে কারবালার প্রান্তর তৈরি করে রাখা হলেও এসব সংস্থা এবং বিশ্ব মুসলিম সমাজ নির্লিপ্ত এবং জড়। হয়তো এরপর নতুন কোনো মুসলিম দেশ আক্রান্ত হবে। মুসলিম অধ্যুষিত নির্যাতিত দেশের তালিকাটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বলতম জাতিগোষ্ঠী আরাকান মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের খড়গ চালাতে মিয়ানমার সরকারের মানবিক বোধে কোনো আঁচড় কাটেনি। দিন দিন তাদের স্পর্ধা ও ধৃষ্টতা লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশের আকাশসীমা বারবার লংঘন করে যাচ্ছে। এর একটা ছেদ চিহ্ন আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। সময় এসেছে মুসলিম বিশ্বকে সব মতভেদ ভুলে একই প্লাটফর্মে এসে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। মিয়ানমারের চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য, তাদের ওপর শক্তভাবে চাপ সৃষ্টি করে বাংলাদেশে অবস্থানরত মুসলমান রোহিঙ্গাদের আবার তাদের নিজেদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা। এর জন্য সবার আগে যা প্রয়োজন তা হলো ‘বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য এবং সাম্য প্রতিষ্ঠার ঘোষণা’। এ মুহূর্তেই যা শুরু হতে পারে।

লেখক : কথাসাহিত্যিক, গবেষক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ফিলিস্তিন,আরাকান
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist