জাহাজের নাবিক থেকে ক্রিকেটার
কাটলাংয়ে নিজের বাড়িতে বসে জয় উদযাপন করছিলেন ফকির গুল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে যখন ভারতের বিপক্ষে জয় পেলো পাকিস্তান, ততোক্ষণে কেউ যেন টিভির সঙ্গে তার দুইচোখ আঠা দিয়ে সেঁটে দিয়েছে। এ জয়ে বৃদ্ধ ফকির গুলের আনন্দ সবার চেয়ে আলাদা। কেনই বা হবে না! ব্যাট হাতে জয়ের নায়ক যে তারই ছেলে ফখর জামান! যাকে নাবিক হতে পাঠিয়ে গর্ব করেছিলেন, সে এখন দেশের গর্ব হয়েছে।
ছেলে ক্রিকেট খেলুক, কখনই চাননি ফকির সাহেব। শিক্ষকদের কাছেও অভিযোগ করেছেন যেন এ ব্যাপারে ছেলেকে শাসন করা হয়। শুধু কি তাই! ছুটির দিনে নিজের পড়াশোনার বাইরে ফখরের জন্য কবিতা লিখতেন তার বাবা। যেন ছেলের মাথা থেকে ক্রিকেটের ভূত পালায়। ভয় পেতেন সবসময়, ক্রিকেটের কারণে যদি পড়াশোনাটা না হয়! সেই ছেলেই গর্বিত করলো তাকে।
উচ্ছ্বসিত ফকির গুলের ভাষায়, ‘নাবিক হয়ে এতোদিন ফখর শুধু কাটলাংয়ের গর্ব ছিলো। এখন সে পুরো পাকিস্তানের গর্ব।’
মাধ্যমিক পাশ করার পর ২০০৭ সালে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে নাবিক পদে যোগ দেন ফখর। ওই সময় প্রায়ই বাহিনীর আন্ত-বিভাগীয় ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে হতো তাকে। ব্যাট হাতে ফখরের মেধা চোখ এড়ায়নি দলের কোচ আজম খানের। তিনিই ফখরকে পরামর্শ দেন নৌবাহিনীর শারীরিক প্রশিক্ষক হিসেবে আবেদন করার। সেটাই করেছিলেন পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে রোববার ঝড় তোলা এই ব্যাটসম্যান।
পরবর্তীতে ২০১৩ সালে নৌবাহিনীর চাকরি ছাড়েন ফখর। সেখান থেকে তার আলাপ হয় পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ও কিংবদন্তি ইউনুস খানের সাথে। ইউনুসের পরামর্শেই মারদান অঞ্চলের হয়ে খেলতে নামেন ফখর। ২০১৬ সালে সুযোগ পান পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল)। পরের গল্পটুকু সবার জানা, প্রধান নির্বাচক ইনজামাম-উল হকের হাত ধরে জাতীয় দলের জার্সি গলাতেও সময় লাগেনি তার।
এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের হয়ে চারটি ওয়ানডে খেলেছেন। ৬৩.০০ গড়ে মোট রান ২৫২। সর্বোচ্চ ১১৪ রানের ইনিংস। দুটি হাফ সেঞ্চুরিও আছে ফখরের। তবে টি-টোয়েন্টিতে খুব একটা হাসেনি ফখর জামানের ব্যাট। তিন ম্যাচে তুলেছেন ২৬ রান, যেখানে সর্বোচ্চ ২১ রানের একটি ইনিংস।
পিডিএসও/রিহাব