কামার ফরিদ
ভেজালে ভেজালময়
ভেজালে ভেজাল হয়ে ভেসে গেছে মানুষের মানবিক বোধ। বিবর্ণ পৃথিবী আজ খুঁজে ফেরে জীবনের সফেদ সকাল। কিন্তু কোথায় সেই সকাল? না! চারপাশে যা কিছু আছে, যা কিছু দেখি সবই যেন আজ সতেজ মোড়কে মোড়ানো ভেজাল খাবার।
সম্প্রতি বিমানের খাবারেও ভেজাল ধরা পড়েছে। বিমানের খাবার বলতে যাত্রীদের সরবরাহ করা খাবারের কথা বলা হয়নি। বিমানের খাবার বলতে উড়োজাহাজের খাবারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। চাল-ডাল-দুধ-তেল-মাছ-মাংস যেমন বিবিধ খাবারের নাম, একইভাবে উড়োজাহাজের খাবারে নাম জেট ফুয়েল। মানুষ যেমন খাবার বঞ্চিত থাকলে চলতে ফিরতে পারে না, উড়োজাহাজও তথৈবচ। জেট ফুয়েল ছাড়া এক ইঞ্চিও চলার ক্ষমতা থাকে না। তবে ভেজাল খাবার খেয়ে মানুষের চলার ক্ষমতা থাকলেও উড়োজাহাজের নেই। আছে মৃত্যু সংবাদ।
পেট্রল অকটেনের পর এবার উড়োজাহাজের জ্বালানিতেও পাওয়া গেছে ভয়াবহ ভেজালের প্রমাণ। জেট ফুয়েলের সঙ্গে সুপার এবজরবেন্ট পলিমার (সেপ) মিশিয়ে ভেজাল শব্দটিকে নেওয়া হয়েছে আকাশ উচ্চতায়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ছয়টি বিমানবন্দরে ভেজাল জা¡লানির প্রমাণ মিলেছে। এ ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করলে যেকোনো সময় উড়োজাহাজে বিস্ফোরণ হতে পারে অথবা ভেঙে পড়তে পারে। জেট ফুয়েলে ভেজাল থাকায় বিমানের একটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০০ এর ইঞ্জিন পুড়ে গেছে।
অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এবং এয়ারক্রাফটের ইঞ্জিন প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো বলছে, উড়োজাহাজের জ্বালানিতে এ ধরনের ভেজাল এয়ারক্রাফটের জন্য বড় মাপের হুমকি। যেকোনো সময় উড়োজাহাজ ক্রাশ করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জেট ফুয়েলের ভেজাল শনাক্ত করা খুবই কঠিন। কখনো কখনো সর্বাধুনিক ফুয়েল ফিল্টার ভেদ করে অথবা ফিল্টার অকেজো করে এ ধরনের ভেজাল তেল ইঞ্জিনে প্রবেশ করে। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এক সময় এ খাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
প্রযুক্তি যতই এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের মানবিক বোধ পিছিয়ে যাচ্ছে তার চেয়ে বেশি। আর সে কারণেই দুর্যোগ বেড়ে যাচ্ছে চক্রবৃদ্ধি হারে। মানবিক বোধ হারিয়ে যাওয়ার পেছনে যে ভাইরাস প্রধান ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে তার নাম ভোগবাদ। ভোগবাদ যে মানুষের চিন্তাকে সংকীর্ণ করে-এ কথা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। আমরা মনে করি, সময় এসেছে ভোগবাদ থেকে বেরিয়ে এসে মানবতাবাদের দিকে যাত্রা শুরু করার। এবং ভোগবাদের উল্লম্ফনের পাশাপাশি মানবতাবাদকে সমান্তরালে রাখা। অন্যথায় প্রযুক্তির কাছে পরাভূত হয়ে এই সভ্য পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে আবর্জনার স্তূপে পরিণত হবে। সুতরাং সময় থাকতে নিজেদের স্বার্থরক্ষায় মানব জাতিকে মানব কল্যাণের পথে এগিয়ে আসাই হবে একমাত্র সঠিক সিদ্ধান্ত।
পিডিএসও/রিহাব