সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি

  ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭

সম্ভাবনার অপর নাম বাংলাদেশ

দেশে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন হয়। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও ইতোমধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে। এ দেশে এখন আর কেউ না খেয়ে মরে না। কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পাশাপাশি দেশের দরিদ্র-শ্রমজীবী-প্রান্তিক জনগোষ্ঠীনির্ভর প্রবাসী আয়কে পুঁজি করে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, ঘামঝরা শ্রমের ফসল পোশাকশিল্প উন্নয়নের ধারাকে করেছে আরও বেগবান। দেশে যেভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, অর্থনীতি এগিয়েছে, যেভাবে বিশ্বমন্দা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলা করেছে, তাতেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের মানুষ অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী।

সত্তর দশকের ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ তলাবিহীন ঝুড়ি, নব্বই দশকের বিশ্ব পরিমন্ডলে তুলনামূলক অচেনা বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী এক বিস্ময়ের নাম। উন্নয়ন নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা মানুষের কপালে ভাঁজ ফেলে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও সম্ভাবনার দিগন্তে সাফল্যের পতাকা উড়িয়ে দেশ অব্যাহত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিএমআই রিসার্চের মতে, আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন চালিকাশক্তি। বিএমআই রিসার্চ মনে করে, ২০২৫ সালের মধ্যে এই ১০টি দেশ সম্মিলিতভাবে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ৪ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন, অর্থাৎ ৪ লাখ ৩ হাজার কোটি ডলার যোগ করবে, যা বিনিয়োগকারীদের বড় সুযোগ এনে দেবে। উল্লিখিত অর্থ জাপানের বর্তমান অর্থনীতির সমান।

গত ৬ জুলাই বিএমআই রিসার্চের ‘টেন ইমার্জিং মার্কেট অব দ্য ফিউচার’ নামের ওই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি গত মে থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সংক্রান্ত গবেষণাটি শুরু করে। গুলশানে জঙ্গি হামলার পর তা প্রকাশিত হলেও এতে জঙ্গিবাদের হুমকি সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংঘাতের বিষয়টি তাদের পর্যালোচনায় এসেছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার যে সম্ভাবনা বাংলাদেশের সামনে হাতছানি দিচ্ছে, তাকে কাজে লাগাতে হলে রাজনৈতিক সংঘাত অবসানের পাশাপাশি জঙ্গিবাদের শিকড় উৎপাটনেও যত্নবান হতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে সম্ভাবনাময় দেশের বদলে ব্যর্থ রাষ্ট্রের অভিশাপ যে জাতির জন্য অনিবার্য হয়ে উঠবে, সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এই বিপদ ঠেকাতে পেশাদারিত্বের মনোভাব দিয়ে জঙ্গিবাদ দমনের প্রয়াস চালাতে হবে। বাংলাদেশকে এই অঞ্চলের অন্যতম উৎপাদনকেন্দ্রে পরিণত করতে চাইলে আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নে হতে হবে আপসহীন।

সম্প্রতি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৪৫টি দেশ সম্পর্কে প্রকাশিতব্য মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে তরুণদের দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৪৯ শতাংশ মানুষের বয়স ২৪ বছর কিংবা তার নিচে। দেশের কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৫৬ লাখ বা মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ। জনসংখ্যাতাত্ত্বিক এই অবস্থান বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। ইউএনডিপি বলছে, এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে আরও বেশি কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। আর বিনিয়োগ বাড়াতে হবে উৎপাদনশীল খাতে। ইউএনডিপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১০ কোটি ৫৬ লাখ। অর্থাৎ, মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশই কর্মক্ষম। আগামী ১৫ বছওে, অর্থাৎ ২০৩০ সাল নাগাদ কর্মক্ষম জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১২ কোটি ৯৮ লাখে, যা হবে মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ। দেশে বয়স্ক বা ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ ৭ শতাংশ। ২০৩০ ও ২০৫০ সালে তা বেড়ে দাঁড়াবে যথাক্রমে ১২ ও ২২ শতাংশে।

উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনীতিবিদদের মতে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে তরুণ জনগোষ্ঠীকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে। বাংলাদেশের সামনেও সোনালি ভবিষ্যৎ হাতছানি দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সফল হবে কিনা, তা নির্ভর করছে সৃষ্ট সুযোগ কতটা কাজে লাগানো যাবে, তার ওপর। বাংলাদেশের জন্য এই মুহূর্তে সমস্যা হলো, জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ বেকার। যুব জনগোষ্ঠীর একটি অংশ অভিভাবকদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। যুবসমাজের কর্মসংস্থানের যথাযথ পদক্ষেপ যেমন দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করবে, তেমনি এই ক্ষেত্রের ব্যর্থতা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। দেশের সোনালি ভবিষ্যতের স্বার্থেই কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে গতি আনার উদ্যোগ নিতে হবে। এবং বর্তমান এই বেকারাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হতে দেওয়া সঠিক হবে না। অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে সরকারের দেয়া সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। নিজেদের সম্পদ কাজে লাগিয়ে দেশেই কর্মসংস্থানের পথ খুঁজতে হবে। সময়টা তথ্যপ্রযুক্তির। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ পাচ্ছে এ দেশের যুবকরা। অনেকেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজের ক্ষেত্র গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে। ফলে সমাজে সম্ভাবনার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে। আসলে যুব সমাজই হচ্ছে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত আধুনিক এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রধান চালিকাশক্তি।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়তে দেশের এই বিশাল শক্তির উপযুক্ত ব্যবহার হওয়া দরকার। এরাই নিজেদের মেধা ও মননশক্তি ব্যবহার করে নির্ধারণ করবে দেশের আগামী দিনের চলার পথ। তাই সমাজের এই সৃজনশীল ও উৎপাদনমুখী অংশকে উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে। এজন্য যুবসমাজের দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং কর্মের জোগান দিতে হবে। যুবসমাজের অমিত সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাই প্রবাসে নয়, স্বদেশেই কর্মসংস্থান নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে হবে।

লেখক : সদস্য, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
উন্নয়ন,সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি,উন্নয়ন কর্মসূচি,বাংলাদেশ,প্রবৃদ্ধি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist