দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর
এত হনুমান কোথা থেকে?
একেক দলে ১৫-২০টি করে থাকা কয়েক দল হনুমান খাবারের জন্য মেহেরপুর জেলা শহর ও গ্রাম দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। জেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে হনুমানের অত্যাচারে। এই সময় মৌসুমি ফল ও মাঠে পাতাকপি ফুলকপি না থাকার কারণে বিভিন্ন বাড়িতে হানা দিচ্ছে হনুমান। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, দলে দলে হনুমান এলো কোথা থেকে। একজন বলেন ভারত থেকে এসেছে।
জেলা শহরের মল্লিকপাড়া মোড়ে জামাল মার্কেটের ছাদে দেখা যায়, ৩০টির অধিক হনুমান খাবারের জন্য দোকানগুলোতে ঢুকার চেষ্টা করছে। এক দেড় মাস বয়সের বাচ্চা হনুমানগুলো পাশের গাছের ডালে রেখে বয়স্ক হনুমানগুলো খাবারের জন্য নেমে আসছে রাস্তায়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা বিভিন্ন বাড়ির রান্নাঘর পর্যন্ত। এসব হনুমান দেখতে উৎসুক জনতা ভিড়ও করছে। কেউ কলা, পাউরুটি ছুড়ে দিলে সুযোগ বুঝে গাছ থেকে নেমে আসে। তারপর খেয়ে আবার উঠে যাচ্ছে।
মল্লিকপাড়ার মাহবুবুল হক মন্টু জানান, আশপাশের গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে হনুমানগুলো। আজ এ গ্রামে তো কাল অন্য গ্রামে। তিনি আরো বলেন, ‘কলা দিচ্ছি, পাউরুটি দিচ্ছি, পানি দিচ্ছি—সবই খাচ্ছে। লোকজন দেখার জন্য আসছে। কেউ কেউ বিরক্তও করছে। বিরক্ত যেন কেউ না করে সেজন্য জনসচেতনতাও করা হচ্ছে।’ মেহেরপুর সরকারি কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি কামাল হোসেনকে দেখা গেল পাশের দোকান থেকে পাউরুটি কিনে হনুমানকে খাওয়াতে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় হনুমানের প্রয়োজন আছে বলে কামাল জানান। একই সময়ে কয়েকজন সনাতন ধর্মের বয়স্ক মহিলাকে দেখা গেল হনুমান দলকে নমস্কার জানিয়ে চলে যেতে।
মেহেরপুর জেলা শহরের উপকণ্ঠে কালাচাঁদপুর, তেরঘরিয়া, বুড়িপোতা, মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান গ্রামে এমন দলে দলে হনুমানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে গ্রামবাসী। কেউ কাছে গিয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করলেই দাঁত খিচিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। অনেক মা হনুমানের বুক খামচে আছে এক-দুই দিন আগে কিংবা সপ্তাহকাল সময়ে প্রসব হওয়া হনুমানের বাচ্চা।
দারিয়াপুর গ্রামের রাজিব হোসেন জানান, একসময় মুজিবনগর আম্রকানন ও বাগোয়ান আম্রকাননে শত সহস্র হনুমানের বাস ছিল। দু-তিন বছর আগেও হনুমান বিলুপ্তির পথে হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ করে দলে দলে হনুমান দেখা যাচ্ছে। অনেক সময় হনুমান মানুষকে বিরক্ত করছে, আবার বেশিরভাগ সময় মানুষই তাদের বিরক্ত করছে। উপযুক্ত পরিবেশ এবং খাবারের অভাবে ভারত থেকে এসব হনুমান এসেছে বলে রাজিব মনে করেন। এসব হনুমান উদ্ধার করে নিরাপদ পরিবেশে নিয়ে গিয়ে অবমুক্ত করা প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করছেন।
পিডিএসও/হেলাল