সম্পাদকীয়

  ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

জীবনের মূল্য কোথায়

বর্তমান সমাজব্যবস্থায় জীবন এখন পণ্যের পাল্লায় তুলে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে মানব জীবন। অন্যান্য পণ্যের মতো এখানেও প্রকারভেদ আছে। মূল্যের ব্যবধান আছে। আবার মূল্যহীন হয়ে পড়ে আছে বেশকিছু জীবন। এদের বাঁচা-মরার প্রশ্নে কারো যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। বর্তমান সামাজিক ব্যবস্থাপনায় এরা বেঁচে আছে অনেকটা গিনিপিগের মতো। সমাজের বিভাজন প্রক্রিয়ায়ও এদের কোনো স্থান নেই। অনেকটা অচ্ছুত সম্প্রদায়ের মতো।

ফেনী সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের দিকে তাকালে যেকোনো সমাজ সচেতন ব্যক্তির সে রকমটা মনে হতে পারে। ইউনিয়নের লস্করহাট প্রথমিক বিদ্যালয় ভবনটি ১০ বছর আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও এখনো তা কার্যকর হয়নি। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনে দুর্ঘটনার আতঙ্ক নিয়ে ক্লাস করছে ৭৪ জন শিশু শিক্ষার্থী। বিভিন্ন সময়ে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। পিলারের অংশবিশেষ ভেঙে এ পর্যন্ত ১২ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তবে কুম্ভকর্ণের ঘুম এখনো ভাঙেনি। জেলা শিক্ষা অফিস এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়কে একাধিকবার জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি।

একতলা স্কুল ভবনের প্রতিটি কক্ষই অন্ধকার এবং স্যাঁতসেঁতে। অসংখ্য গর্তে ভরে গেছে মেঝে। ছাদের পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে এসেছে। জানালা-দরজা ভাঙা কিংবা নেই। পিলার ও দেয়ালে বড় বড় ফাটল। ২০০৯ সালে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে নতুন ভবন হচ্ছে—হবে করে পার হয়ে গেল ১০টি বছর। ভবনের অবস্থা আরো খারাপ হলেও বিকল্প ব্যবস্থার কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অভিভাবকরা এখানে তাদের সন্তানদের পাঠাতে না চাইলেও বাধ্য হচ্ছেন। কাছাকাছি কোনো সরকারি বা বেসরকারি কোনো বিদ্যালয় না থাকায় ঝুঁকি জেনেও সন্তানদের এখানেই পাঠাচ্ছেন।

এই জরাজীর্ণ স্কুল ভবনে ভবন ধসের ঘটনা ঘটেনি। তবে যেকোনো সময়ে তা ঘটতে পারে এবং সে ঘটনায় কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে সেই অপমৃত্যুর দায় কে নেবে। কেউ নেয় না। তবে মৃত্যুর পর মৃতজনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে পরিবারের হাতে যৎসামান্য টাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়। এটাই সমাজ ব্যবস্থার একটি রীতি। যে রীতিকে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। শ্রেণিবিভাজিত সমাজে এটা থাকবে এবং এটাই স্বাভাবিক। এই স্বভাবিকতারও একটা মাত্রা থাকতে হবে। এখানে সে মাত্রা সীমাকে অতিক্রম করেছে বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। আমরা লাগাম টেনে ধরার পক্ষে। আর সে কারণেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটার আগে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। অন্যথায় এ দায় আপনাদেরই বহন করতে হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,জীবন,মূল্য
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close