সম্পাদকীয়
ভয়ংকর শব্দটি প্রযোজ্য নয়
ভয়ংকর শব্দটিও এখানে প্রযোজ্য নয়। ভয়ংকরের চেয়ে আরো কোনো ভয়ংকর শব্দ থাকলে তা হয়তো সংযোজিত হতে পারত এবং প্রয়োগটি সঠিক হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ পেত। বস্তুত বাংলাদেশ এখন এই ভয়ংকর শব্দটির চেয়ে ভয়ংকর অবস্থানে অবস্থান করছে। একটি ভয়ংকর বস্তুই আজ বাংলাদেশকে এ অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছে। বস্তুটির নাম পলিথিন বা প্লাস্টিক বর্জ্য।
প্রতিদিন প্রায় ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। পরিমাণের দিক থেকে এটি বিশ্বের পঞ্চম। এ বর্জ্যরে উৎস চীন, ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা হয়ে এ বর্জ্য সাগরে গিয়ে পড়ে। ইউএনইপির তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতিদিন ৩ কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়। তবে বাংলাদেশের উৎপাদন ক্ষমতাও কম নয়। ৩ হাজার টন। ৫৮ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট একটি দেশের জন্য এ বর্জ্য কোনোক্রমেই অবহেলাযোগ্য নয়।
এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডিও) তথ্যমতে, বাংলাদেশের জলে-স্থলে বর্তমানে ৬৫ লাখ টন বর্জ্য জমা আছে। এর সঙ্গে প্রতিদিন যোগ হচ্ছে ৩ হাজার টন। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, আগামী দিনে দেশের পরিবেশ বিপর্যয়ে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হবে এই প্লাস্টিক বর্জ্য ও পলিথিন ব্যাগ; যা বিশ্বের যেকোনো শক্তিশালী মিসাইলের চাইতেও বিধ্বংসী হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। আশঙ্কাটিকে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। গবেষক ও বিশ্লেষকদের বেশির ভাগই এ ধারণা পোষণ করেন।
এই প্লাস্টিক বর্জ্য মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক ডাইঅক্সিন ও হাইড্রোজেন সায়ানাইড তৈরি করে; যা উদ্ভিদ ও মাছের সঙ্গে মিশে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। এই বর্জ্যরে কারণে ক্যানসার, অ্যাজমাসহ নানা প্রকার জটিল রোগ একসময় মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, প্রতিরোধ আজ সময়ের দাবি।
বিশ্বজুড়ে পরিবেশবান্ধব পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের আওতায় নেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশেও ২০০০ সালে পলিব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু সে আইনকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে চক্রবৃদ্ধি হারে। আইন করে পলিব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং পাটজাত ব্যাগের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও তার কোনোটি কার্যকর করা যায়নি। দেশে এ মুহূর্তে পলিব্যাগ কারখানা চালু রয়েছে শতাধিক।
আমরা মনে করি, অগ্রাধিকার দেওয়ার ভিত্তিতে বিষয়টির প্রতি মনোযোগ দেওয়ার সময় এসেছে। আর এই মনোযোগ দেওয়ার দায়িত্ব প্রথমত সরকারের। পাশাপাশি পলিব্যাগকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে এগিয়ে আসতে হবে দেশের সব নাগরিককে। আশা করি, নিজের স্বার্থেই সরকার ও জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে এ কাজে এগিয়ে আসবে— এটাই বাংলাদেশের প্রত্যাশা।
পিডিএসও/তাজ