আব্দুস শুকুর, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার)

  ১৩ মার্চ, ২০২৪

শ্রীমঙ্গলে বিক্ষোভ

চা-শ্রমিকদের রাস্তা বন্ধ, ৩ কিমি ঘুরে যাতায়াত

শ্রীঙ্গলে বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পুটিয়াছড়া চা-বাগান এলাকায় চা-শ্রমিক ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দুটি বাগানের চা-শ্রমিকদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া অভিযোগ পাওয়া গেছে ফিনলে চা-বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিনের চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়ায় ৩-৪ কিলোমিটার বেশি পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে পাঁচ সহস্রাধিক শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের।

চা-বাগান কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে রাস্তা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েও প্রতিকার না পেয়ে বিক্ষোভ করেছে ভুক্তভোগী শ্রমিকরা। বুধবার (১৩ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পুটিয়াছড়া চা-বাগান এলাকায় কয়েকশ চা-শ্রমিক ও স্কুল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করে। তবে বন্ধের অভিযোগ অস্বীকার করে রাস্তাটি নিজের বলে জানিয়েছে পুটিয়াছড়া চা-বাগান কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ফিনলে চা কোম্পানীর অধীন উপজেলার রাজঘাট ইউনিয়নের লাখাই চা-বাগান থেকে বার্ণিশ বাড়ি ও ছনখলা চা-বাগান দুটির রাস্তা দিয়ে শতাধিক পরিবারের ৫ সহস্রাধিক শ্রমিক দীর্ঘদিন ধরে চলাচল করেন। তবে শ্রমিকদের অভিযোগ, নানা ছুঁতায় বাগান কর্তৃপক্ষ প্রায়ই চৌকিদার বসিয়ে, বাঁশ ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে আসছে।

এদিকে সোমবার (১১ মার্চ) থেকে বাগান কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়। এতে ৩-৪ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের। স্কুল শিক্ষার্থী বা জরুরী প্রয়োজনে রোগী হাসপাতালে নিতে বেগ পেতে হয়। দৈনন্দিন কাজে উপজেলা সদরে যাতায়াতে বিড়ম¦নায় পড়ছে শ্রমিকরা।


  • দুর্ভোগে ৫ হাজার চা-শ্রমিক, তাদের পরিবারে সদস্য ও শিক্ষার্থীরা
  • চা-বাগান কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ইউএনওর কাছে জানিয়েও মেলেনি প্রতিকার
  • রাস্তা খুলে দেওয়ার দাবিতে কয়েকশ চা-শ্রমিক ও স্কুল শিক্ষার্থীর বিক্ষোভ

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বার্ণিশবাড়ি চা-বাগানের শ্রমিক উজ্জল রায় বলেন, ‘হঠাৎ করে রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। ঘরে গর্ভবতী মেয়ে আছে, হাসপাতালে নিতে পারছি না। এনিয়ে বাগান কর্তৃপক্ষকে বলেও কোনো সুরহা হয়নি।’

চা-শ্রমিক অঞ্জনা ভৌমিক বলেন, ‘চা বাগান ম্যানেজার শান্তনু পুরোকাস্ত অনেকদিনের আমাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। আমাদের অপরাধ কী যে, আমাদের বাচ্চা-কাচ্চার স্কুল যাওয়া বন্ধ হবে? এ রাস্তা দিয়ে আমরা হাট-বাজারে যেতে হয়, আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি যেতে হয়, সেই রাস্তা কেন বন্ধ করবে?’

চা বাগান শ্রমিক বিজয় হাজরা বলেন, ‘রাস্তা বন্ধের ব্যাপার নিয়ে বাগানের ম্যানেজার, স্থানীয় রাজঘাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে অভিযোগ করেছি, ইউএনও এবং থানায় জানিয়েছি, কিন্তু কেউ কোনো পদক্ষেপ নেইনি। দাবি না মানলে আগামীতে কর্মবিরতি পালন করবে শ্রমিকরা।’

রাস্তা বন্ধের অভিযোগ অস্বীকার করে পুটিয়াছড়া চা-বাগানের ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, ‘রাস্তাটি সীমান্ত এলাকা ঘেঁষা। এদিক দিয়ে অনেক অবৈধ মালামাল যাচ্ছে। এ নিয়ে প্রশাসন কতটা কী করছে, সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। এটি একেবারেই বাগানের নিজস্ব সড়ক। এই রাস্তা দিয়ে সর্বসাধারণের চলাচল সীমিত।’

শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে মাসুদ রানা বলেন, ‘স্থানীয় ইউপি সদস্য শিপন তাঁতির সঙ্গে এরই মধ্যে কথা হয়েছে। আন্দোলনরত শ্রমিকদের নিয়ে বসে সমাধানের চেষ্টা চলছে।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু তালেব বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এখন যেহতু জেনেছি, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মৌলভীবাজার,শ্রীমঙ্গল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close