গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ০৩ জুন, ২০২৩

সিরাজগঞ্জের নকশিকাঁথা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশে

সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথা তৈরিতে ব্যস্ত নারীরা। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

সিরাজগঞ্জ থেকে কালের আবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে নকশি কাঁথা। সুই সুতা আর কাপড় দিয়ে হাতে বানানো ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ নকশি কাঁথা।

এক সময় জেলার বিভিন্ন উপজেলার খেটে খাওয়া পরিবারের দলবদ্ধ গৃহবধু ও কিশোরীদের হাতের ছোঁয়ায় নতুন এবং পুরাতন কাপড় দিয়ে তৈরি হতো নিত্য নতুন নকশি কাঁথা। এই কাঁথায় সুই আর সুতা দিয়ে তাদের হাতের ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তোলা হতো নানা রঙের নকশা। অতীতে বিভিন্ন বিবাহ অনুষ্ঠানে বরযাত্রীদের বসতে দেওয়া হতো খড়ের উপর পাটের চট বিছিয়ে। আর বর আর তার সঙ্গী কোলদারদের বসতে দেওয়া হতো কাঁথার উপর চাদর বিছিয়ে। এখন সেই বসার আসন দখল করেছে সোপাসেট, চেয়ার, টেবিলসহ আধুনিককালের আসবাপত্র। এছাড়াও জন্মলগ্ন থেকে ছোট ছোট শিশুদের প্রতিপালনের জন্য ধনী ও দরিদ্র পরিবারের সকলেই কাঁথা ব্যবহার করতো।

তবে এই প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সিরাজগঞ্জে বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে এর মধ্যে মোহনা হস্ত ও কুটির শিল্প অন্যতম। সংগঠনটি স্থানীয় অসহায় নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দিয়ে তৈরী করছেন নকইশ কাঁথা, বেডসিট, থ্রি পিস। তবে নকশি কাঁথার চাহিদা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা, নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন দেশে ।

শহরের আমলা পাড়া মহল্লার রাবেয়া, সুলতানা, সুমি বলেন, আমরা এখানে নকশি কাঁথা সেলাই করে আমাদের বাড়তি আয় হচ্ছে অন্যান্য কাজের ফাঁকে আমরা এই কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।

তারা আরও জানান, কাঁথা তৈরি করতে ২০-৩০ দিন সময় লাগে। আমরা মুজুরি নেই ১৫শ হতে ২ হাজার টাকা।

প্রোগ্রাম ফর উইমেন ডেভলপমেন্ট নির্বাহী এর নির্বাহী পরিচালক জানান, প্রাচীন ঐতিহ্য এই নকশি কাঁথা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই তিনি এলাকার অসহায় নারীদের একত্রিত করে নকশি কাঁথা সেলাই শুরু করেন। প্রথম দিকে তেমন সাড়া না পেলেও এখন বেশ সাড়া পাচ্ছেন। তার তৈরি নকশি কাঁথা ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে । সরকারি সহযোগিতা পেলে এই শিল্পকে আরো অনেক দূর এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে ।

জানা গেছে এক সময় এই গ্রামীণ কাঁথা সেলাই করে সংসারও চালাতেন অনেকেই। তবে এখনও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড হিসেবে উৎপাদন, আয় বৃদ্ধি ও নতুন কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্র হিসেবে ‘রঙ্গিন নকশি কাঁথার’ খাতে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে আসলে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী এ কাঁথাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন সচেতন মহল ।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সিরাজগঞ্জ,নকশিকাঁথা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close